বড় ভাইয়ের হয়ে ক্ষমা চাইলেন কাদের সিদ্দিকী

হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বড় ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্তব্যের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী।

প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2014, 09:22 AM
Updated : 11 Oct 2014, 04:43 PM

শনিবার সকালে রাজধানীতে দলীয় ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে বড় ভাইয়ের বক্তব্য নিয়ে দল ও নিজের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে শুধু বলতে এসেছি, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লতিফ সিদ্দিকী, মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী আমার কেউ নন। আল্লাহ প্রদত্ত সম্পর্ক অনুযায়ী তিনি আমার বড় ভাই। এই সম্পর্ক বাজার থেকে কেনা যায় না। আমাদের ধমনীতে একই রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আমাদের বাবা-মা এক।

“মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করেছেন তিনি। সেজন্য ছোট ভাই হিসেবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে বলছি, দয়া করে আমার বড় ভাইকে আপনি ক্ষমা করুন।”

গত ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী।”

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষ হজে যাওয়ায় দেশের অর্থ আর শ্রম শক্তির ‘অপচয়’ হয়। উৎপাদনে প্রভাব পড়ে।

ওই বক্তব্যের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি ও কয়েকটি ইসলামী দল লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণসহ গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলনের হুমকি দেয়।

এই বক্তব্যের জন্য বড় ভাইকে ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে।

“আমি শুধু বড় ভাইয়ের এহেন বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছি। যদি তিনি (বড় ভাই) তার বক্তব্যের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করেন, তাহলে আইনের বিধানে বিচার যা হবে, তা-ই হবে।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জের এই সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য তুলে ধরেন কাদের সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যে মুসলমানরা মর্মাহত হয়েছে। আমরাও ব্যথিত ও মর্মাহত হয়েছি। আমি মুসলমান পরিবারের জন্মগ্রহণ করেছি। একজন মুসলমান হিসেবে আমি বলতে চাই, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যে দলীয়ভাবে নিন্দা জানিয়েছি।

“এদেশের জনগণ ওই আপত্তিকর বক্তব্যের যেভাবে প্রতিবাদ করেছেন, আমি তাদের মোবারকবাদও জানাচ্ছি।’’

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ করেছি, কেউ আমাকে বাঘা সিদ্দিকী বলেছে। রাষ্ট্র আমাকে বীরোত্তম উপাধি দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু আমাকে বঙ্গবীর বলে ডাকতেন। তার কন্যা, আমার ভগ্নি আমাকে পাগলের উপাধি দিয়েছেন। আমি শুধু বলব, আল্লাহ তাকে হেদায়েত করুন।’’

এর আগে লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য সম্পর্কে দলের অবস্থান তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান দলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার।

তিনি বলেন, “মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে হজ সম্পর্কে বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য তার এবং তার দল আওয়ামী লীগের প্রতি গভীর নিন্দা জ্ঞাপন করছি। ওই ন্যক্কারজনক ঘোরতর আপত্তিকর বক্তব্য শুধু তার ( আবদুল লতিফ সিদ্দিকী) একার হতে পারে না।

“কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ মনে করে এটা সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ ও ভোটারবিহীন জবরদখলকারী অনির্বাচিত সরকারের বক্তব্য।”

তবে লতিফ সিদ্দিকীর ওই বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্র সফর থেকে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, লতিফ সিদ্দিকী আর মন্ত্রিসভায় থাকবেন না। তাকে দল থেকে বাদ দেয়ার বিষয়েও দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে।

এরপর শনিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “সরকারের অগণতান্ত্রিক কাজের ওপর থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার এটি এক অপকৌশল মাত্র। ইতিপূর্বেও এই সরকারের প্ররোচনায় শাহবাগে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সম্পৃক্ত ব্লগাররা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও  ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে।”

বক্তব্যে অবিলম্বে আলোচনার মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের অনুষ্ঠানের দাবি জানান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক।

সংবাদ সম্মেলনের কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী, দুই মেয়ে কুরি সিদ্দিকী ও কুশি সিদ্দিকী এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।