জাতীয় প্রেসক্লাবে নামাজে জানাজা শেষে এফডিসিতে নিয়ে আসা হলে সেখানে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন নায়করাজ রাজ্জাক, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, চাষী নজরুল ইসলাম, এ কে এম জাহাঙ্গীর খান, এটি এম শামসুজ্জামান, সুচন্দা, ববিতা, চম্পা, দিলারা ইয়াসমিন, আহমেদ শরীফ, আবদুল লতিফ বাচ্চু, সৈয়দ সালাহ উদ্দিন জাকী, শহীদুল ইসলাম খোকন, মুশফিকুর রহমার গুলজার, গাজী মাযহারুল আনোয়ার, সোহানুর রহমান সোহান, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, হেলাল খান, মিশা সওদাগর, ওমর সানী, ডিপজল, শেলী কাদেরসহ আরো অনেক পরিচালক, প্রযোজক ও শিল্পী।
শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, ফিল্ম ক্লাব, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস), এডিটরস্ গিল্ড, এফডিসি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, নায়ক মান্না ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও চিত্র গ্রাহক সংস্থার পক্ষ থেকে।
আহমদ জামান চৌধুরী খ্যাতিমান সাংবাদিক, চলচ্চিত্রের কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গীত রচয়িতা। শতাধিক চলচ্চিত্রের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখে ঢাকার চলচ্চিত্রকে করেছেন সমৃদ্ধ। তার কাহিনী, চিত্রনাট্য কিংবা সংলাপ মানেই তুমুল দর্শকপ্রিয়তা। তার লেখা পাঁচ শতাধিক হদয়ছোঁয়া গানও ঢাকার চলচ্চিত্রকে দিয়েছে ভিন্ন ব্যঞ্জনা।
ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। একজন বিতার্কিক হিসেবে যেমন, তেমনই যে কোন বিষয় নিয়ে উপস্থিত বক্তৃতা দেওয়ায় তার জুড়ি মেলা ছিল ভার। ছাত্রজীবনে এ মাধ্যমগুলোতে দুর্দান্ত সাফল্যের সুবাদে পেয়েছেন ব্যাপক প্রশংসা ও অসংখ্য পুরস্কার। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীনই সম্পৃক্ত হন সিনে সাংবাদিকতা ও ঢাকার চলচ্চিত্রের সঙ্গে। সাংবাদিকতার শুরু জনপ্রিয় সিনেমা পত্রিকা ‘চিত্রালী’ দিয়ে। ১৯৭০ সালের দিকে খ-কালীন চাকরি হিসেবে পত্রিকাটির একজন প্রতিবেদক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপর নানা পদে দায়িত্ব পালন শেষে পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেন দীর্ঘ ১০ বছর। সব মিলিয়ে চিত্রালীর সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন দীর্ঘ ২০ বছর। চিত্রালীর পর তিনি দু’বছর ফিচার এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় পত্রিকা দৈনিক যুগান্তর-এ। দৈনিক পত্রিকার চাকরি ছেড়ে শেষ সময়ে এসে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করতেন তিনি। চলচ্চিত্র বিষয়ক তার অসংখ্য রিপোর্ট, ফিচারধর্মী লেখা ও সম্পাদকীয় বহুল প্রশংসিত ও আলোচিত হয়েছে।
আহমদ জামান চৌধুরী বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)-এর তিন টার্মের সভাপতি হিসেবে কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার লেখা চিত্রনাট্যে নির্মিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে-পিচঢালা পথ, নতুন নামে ডাকো, নাচের পুতুল, বাঁদি থেকে বেগম, আগুন, যাদুর বাঁশি, মাস্তান, তুফান, শেষ উত্তর, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, শ্বশুরবাড়ি, মিস লংকা, দূরদেশ প্রভৃতি। তার লেখা জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে-পিচঢালা এ পথটারে ভালবেসেছি, যেওনা সাথী, নতুন নামে ডাকবো তোমায়, কে তুমি এলে গো, ও দরিয়ার পানি, এ বৃষ্টিভেজা রাতে চলে যেও না, চুরি করেছো আমার মনটা, মাগো তোর কান্না আমি সইতে পারি না, একবুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি, বিদায় দাওগো বন্ধু তোমরা এবার দাও বিদায়, প্রেম পিরিতি চাই বলে সবাই আমায় পাগল বলে প্রভৃতি।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান এবং ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিষয়ে পাঠদান করেছেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও একই বিষয়ের ওপর পাঠদান করেছেন। চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সাফল্যের সুবাদে তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। এগুলোর মধ্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, সলিমুল্লাহ হল চ্যাম্পিয়নশিপ পুরস্কার, ঢাকা হল চ্যাম্পিয়নশিপ পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।
আহমদ জামান চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮শে ডিসেম্বর চাঁদপুর শহরে। বাবা শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক নূরুজ্জামান চৌধুরী। পাঁচ ভাই দুই বোনের মধ্যে আহমদ জামান চৌধুরী ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজতত্ত্বে অনার্সসহ মাস্টার্স করেছেন তিনি।