রেমিটেন্স কমেছে, কারণ ‘হুন্ডি’

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন‌্যতম প্রধান চালিকাশক্তি প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে ভাটা দেখাচ্ছে বাংলাদেশ ব‌্যাংকের হিসাব।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2016, 06:03 PM
Updated : 3 Oct 2016, 06:03 PM

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোমবার প্রকাশিত রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ‌্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ কম এসেছে প্রায় ১৮ শতাংশ। গত অগাস্ট মাসের চেয়ে তা কমেছে ১২ শতাংশ।

সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার খানিক প্রভাব এতে পড়লেও হুণ্ডিকেই প্রধানত দায়ী করছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত।

ব‌্যাংকসহ বৈধ পথে বিদেশি মুদ্রার হিসাব কষে রেমিটেন্সের তথ‌্য দেয় কেন্দ্রীয় ব‌্যাংক। হুন্ডির মাধ‌্যমে অবৈধভাবে আসা অর্থের হিসাব কেন্দ্রীয় ব‌্যাংকের হিসাবে থাকে না।

জায়েদ বখত বলেন, বিভিন্ন দেশে মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে লাভের আশায় হুন্ডির মাধ‌্যমে স্বদেশে অর্থ পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “আগে সিঙ্গাপুর থেকে ১ ডলার পাঠালে যে টাকা পাওয়া যেত, এখন ওই দেশে মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে কম টাকা পাওয়া যাচ্ছে।

“সে কারণেই একটু বেশি টাকার প্রত্যাশায় অনেক প্রবাসী এখন হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন।”

হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠালে বরাবরই দর বেশি পাওয়া যায়।

মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশ থেকে রেমিটেন্সের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।

রেমিটেন্সের এই নেতিবাচক ধারা আগামী মাসগুলোতে অব্যাহত থাকলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ‌্যে দেখা যায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৩৯৩ কোটি ৩৫ লাখ (৩.৯৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে একই সময়ে ৩২৩ কোটি ২১ লাখ (৩.২৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে ১০৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে, যা আগের মাস অগাস্টের চেয়ে ১২ শতাংশ কম।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১০০ কোটি ৫৫ লাখ রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। অগাস্ট মাসে তা বেড়ে ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ ডলার হয়েছিল।

রেমিটন্স প্রবাহ কমে যাওয়াকে বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে দেখছেন বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

সোমবার ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে- বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কম, রেমিটেন্স প্রবাহে নিম্নমুখী গতি এবং ব্রেক্সিটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে ধাক্কার প্রভাব।”

রেমিটেন্স প্রবাহের এই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে তা বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন জাহিদ হোসেন।

গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিটেন্স ২ দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছিল, যা আগের অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছিল।

রেমিটেন্স কমলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বেশ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

আমদানি ব্যয় কম এবং বিদেশি ঋণ-সহায়তা বাড়ার কারণে রিজার্ভ এই অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করেন জায়েদ বখত ও জাহিদ হোসেন।