শনিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার চট্টগ্রাম সফর সামনে রেখে শুক্রবার হাই কোর্টের সার্কিট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদ, চট্টগ্রামের এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তোলা হয়।
লিখিত বক্তব্যে পরিষদের সচিব শংকর প্রসাদ দে বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ার পর বিচারপ্রার্থী জনগণের প্রত্যাশা বেড়েছে। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের জন্য একটিমাত্র হাইকোর্ট রয়েছে ঢাকায়। এটা নীতি, আইন ও নাগরিক অধিকার- কোনো মাপকাঠিতে গ্রহণযোগ্য নয়।
“ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট হলে ঢাকা বাঁচবে, বিচারপ্রত্যাশী জনগণও স্বস্তি পাবে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, বাধা হলো ঢাকাকেন্দ্রিক কিছু স্বার্থান্বেষী আইনজীবী। এদের অর্থের উৎসে আঘাত আসবে। এর বাইরে হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট অনেকেরও প্রচণ্ড অনীহা আছে।”
শনিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের নতুন ভবন উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
প্রধান বিচারপতির উল্লেখিত ‘সাংবিধানিক সমস্যার’ বিষয়ে বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে তিনি বলেন, ভারতে ২৯টি রাজ্যে হাইকোর্ট ২৪টি। কিন্তু এরপরও ১৪টি সার্কিট বেঞ্চ চালু আছে।
কলকাতা থেকে জলপাইগুড়ি বা আন্দামানে সার্কিট বেঞ্চ পরিচালনা সম্ভব হলে ‘ডিজিটাল যুগে’ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের বেঞ্চ ব্যবস্থাপনা কেন করা যাবে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন শংকর প্রসাদ।
তার মতে, বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পরও বাহাত্তরের সংবিধানের মতোই ১০০ অনুচ্ছেদ হুবহু বহাল থাকায় সার্কিট বেঞ্চ বাস্তবায়নে কোনো বাধা নেই।
পরে ২ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির এক সভায় প্রধান বিচারপতি জানান, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত যে কোনও সিদ্ধান্ত তিনি বিচারকদের সঙ্গে আলোচনা করেই নেন।
এবিষয়ে শংকর প্রসাদ বলেন, “মাননীয় প্রধান বিচারপতি বলেছেন, কিছু সিনিয়র বিচারপতি ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা অনেকটাই উদ্বিগ্ন।
“সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। প্রয়োজনে অনেকের সাথে কথা বলা যাবে, কিন্তু বাস্তবতা হলো ব্যক্তি সবসময় নিজের স্বার্থ বিবেচনায় রাখে।”
পরিষদের আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম জেলা আদালতের পিপি আবুল হাশেম বলেন, সংবিধানে কোনো বাধা নেই। প্রধান বিচারপতির যথেষ্ট আগ্রহ আছে; প্রধানমন্ত্রীও চান। বার কাউন্সিলের নতুন নেতৃত্বও বলেছেন, তারা রাজি।
“তাহলে আর বাধা কোথায়?”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, আইনজীবী বজলুর রশিদ মিন্টু ও ইকবাল হাসান।
১৯৮২ সালের ১১ মে চট্টগ্রামে হাই কোর্টের একটি স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। এইচ এম এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৬ সালের ১৭ জুন সামরিক ফরমানের ৪ (এ) ধারা সংশোধন করে স্থায়ী বেঞ্চকে সার্কিট বেঞ্চ (অস্থায়ী) করা হয়।
সংবিধান পুনরুজ্জীবনের পর সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১০০ অনুসারে সার্কিট বেঞ্চের বিধান থাকায় চট্টগ্রামসহ দেশের ছয়টি সার্কিট বেঞ্চ বহাল থেকে যায়। পরে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর ২(ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে, ছয়টি সার্কিট বেঞ্চই আবার স্থায়ী বেঞ্চের মর্যাদা পায়।
১৯৮৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাই কোর্ট বিকেন্দ্রীকরণ সংক্রান্ত অষ্টম সংশোধনীর ২(ক) অনুচ্ছেদটি বাতিলের আদেশ দিলে চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা ও সিলেটের হাই কোর্ট বেঞ্চগুলো ঢাকায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়।