শেষ ম্যাচে থামল বাংলাদেশের জয়রথ

টানা তৃতীয় সিরিজে সমর্থকদের ‘বাংলাওয়াশ’ উপহার দিতে পারেননি মাশরাফি বিন মুর্তজারা। দেশের মাটিতে টানা ১০টি জয়ের পর সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ভারতের কাছে হেরেছে স্বাগতিকরা।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2015, 08:35 AM
Updated : 24 June 2015, 05:29 PM

তৃতীয় ওয়ানডেতে ৭৭ রানে হারের পরও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।

বুধবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৩১৭ রান করে ভারত। জবাবে ৪৭ ওভারে ২৪০ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।

বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জুটি গড়তে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। উইকেটে থিতু হলেও কেউ নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। তামিম ইকবাল ছাড়া প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের বাকি ছয় জনই পৌঁছান দুই অঙ্কে। বড় ইনিংসের সম্ভাবনা জাগিয়েও সবাই ফিরেন হতাশা নিয়ে।

দুর্দান্ত শুরুর পর ধবল কুলকার্নির স্লোয়ার বুঝতে না পেরে ফিরে যান সৌম্য সরকার। এর আগে তামিমকেও এলবিডব্লিউ করেছিলেন কুলকার্নি। স্বাগতিকদের সেরা দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান উইকেট দেন সুরেশ রায়নাকে।

মুশফিক ক্যাচ দেন ভারতের উইকেটরক্ষক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে আর সাকিব ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ধবলের ক্যাচে পরিণত হন। ১৪৮ রানে প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের বিদায়ে ভীষণ বিপদে পড়ে স্বাগতিকরা।

সৌম্যর সঙ্গে ৫৪ ও মুশফিকের সঙ্গে ৫০ রানের দুটি সম্ভাবনাময় জুটি উপহার দিলেও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি লিটন দাস। অক্ষর প্যাটেলের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।

সাব্বির রহমান ও নাসির হোসেনের দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ৪৯ রানের জুটি গড়ে আশা জাগিয়েছিলেনও তারা। সর্বোচ্চ ৪৩ রান করা সাব্বির বোল্ড হলে একা হয়ে যান নাসির। এরপর কোনো রান না করে মাশরাফিও ফিরে গেলে সব আশা শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের।

অতিরিক্ত মারতে গিয়ে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে নাসিরের বিদায়ে বাংলাদেশের বড় হার নিশ্চিত হয়ে যায়। তার বিদায়ের পর বেশি দূর এগোয়নি স্বাগতিকদের ইনিংস।

এর আগে তৃতীয় ওয়ানডেতে জুটি গড়ার সুফল পায় ভারত। শিখর ধাওয়ান ও মহেন্দ্র সিং ধোনির দুটি অর্ধশতক ও কয়েকটি ভালো জুটির সুবাদে লড়াইয়ের পুঁজি গড়ে অতিথিরা।

রোহিত শর্মার সঙ্গে ৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে বিরাট কোহলির সঙ্গে ৭৫ রানের আরেকটি চমৎকার জুটি উপহার দেন ধাওয়ান।

শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা রোহিত শর্মাকে লিটন দাসের গ্লাভসবন্দি দলকে প্রথম ‘ব্রেক থ্রু’ এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। সিরিজে এ নিয়ে তৃতীয়বার রোহিতকে আউট করলেন এই বাঁহাতি পেসার।   

বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন সাকিব। তার বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান বিরাট কোহলি। কিন্তু তার কোনো প্রভাব অতিথিদের ইনিংসে পড়তে দেননি ধাওয়ান ও ধোনি। স্বাগতিকদের হতাশ করে দ্রুত রান তুলতে থাকেন এই দুই জন।

ধাওয়ান-ধোনির ৪৪ রানের জুটি ভাঙেন মাশরাফি। তার বলে শর্ট কাভারে ধাওয়ানের দুর্দান্ত ক্যাচ নেন নাসির। ৭৩ বলে খেলা ধাওয়ানের ৭৫ রানের ইনিসংটি গড়া ১০টি চারে।

আগের ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়া অম্বাতি রাইডু দ্বিতীয় সুযোগটি হাতছাড়া করেননি। ধোনির সঙ্গে ৯৩ রানের জুটি গড়ার পথে খেলেন ৪৪ রানের ভালো একটি ইনিংস। 

রাইডুকে বিদায় করে ১৬.৪ ওভার স্থায়ী জুটি ভাঙার পর ধোনিকেও ফেরান মাশরাফি। ভারতের অধিনায়কের বিদায়ে অনেকটা দৌড়ে দারুণ ক্যাচটি তালুবন্দি করা মুস্তাফিজের অবদানও কম নয়। ৭৭ বলে খেলা ধোনির ৬৯ রানের ইনিংসটি ৬টি চার ও একটি চার সমৃদ্ধ।

শেষ দিকে রায়নার ঝড়ো ৩৮ রানের সুবাদে সিরিজে প্রথমবারের মতো তিনশ’ পার হয় ভারতের সংগ্রহ। রায়নাকে আউট করে তিন ম্যাচের দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেটি শিকারের রেকর্ড গড়েন মুস্তাফিজ।

তৃতীয় ম্যাচে মুস্তাফিজের বোলিং ফিগার এমন ১০-০-৫৭-২। কতটা ভালো বোলিং করেছেন ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ এই বোলিং ফিগার দেখে তা বোঝার কোনো উপায় নেই। অধিনায়ক মাশরাফি ৩ উইকেট নেন ৭৪ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৫০ ওভারে ৩১৭/৬ (রোহিত ২৯, ধাওয়ান ৭৫, কোহলি ২৫, ধোনি ৬৯, রাইডু ৪৪, রায়না ৩৮, বিনি ১৭*, অক্ষর ১০*; মাশরাফি ৩/৭৬, মুস্তাফিজ ২/৫৭, সাকিব ১/৩৩)

বাংলাদেশ: ৪৭ ওভারে ২৪০ (তামিম ৫, সৌম্য ৪০, লিটন ৩৪, মুশফিক ২৪, সাকিব ২০, সাব্বির ৪৩, নাসির ৩২, মাশরাফি ০, সানি ১৪*, রুবেল ২, মুস্তাফিজ ৯; রায়না ৩/৪৫, ধবল ২/৩৪, অশ্বিন ২/৩৫, রাইডু ১/৫, বিনি ১/৪১, অক্ষর ১/৪৪)