ভবিষ্যত সাকিব-তামিম গড়ার কাজ শুরু লয়ের

মধ্য দুপুরের কাঠফাটা রোদে মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে দু ভাগে ভাগ হয়ে চলছিল জাতীয় দলের ফিল্ডিং অনুশীলন। ড্রেসিং রুমের পাশে এক কোণায় দাঁড়িয়ে নিবিষ্ট মনে তা দেখছিলেন বিসিবির হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের প্রধান কোচ ম্যাল লয়। সম্ভাবনাময়দের নিয়ে স্বল্প মেয়াদে কাজ করতে আসা ইংল্যান্ডের সাবেক এই ব্যাটসম্যানের লক্ষ্য পরিষ্কার, আগামী দুই বছরের মধ্যে জাতীয় দলে দেখতে চান তার তরুণ শিষ্যদের কয়েক জনকে।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2015, 03:30 PM
Updated : 2 June 2015, 03:30 PM

শের-ই-বাংলায় জাতীয় দলের অনুশীলন দেখতে দেখতেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে লয় জানালেন ভবিষ্যতের সাকিব-তামিম-মুশফিকদের গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা।

“তরুণ ক্রিকেটারদের সম্ভাবনার নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে দিতে চেষ্টা করব। গত চার বছরে কোচিং নিয়ে অনেক শিখেছি আমি, বিশেষ করে ক্রিকেটারদের সেরাটা বের করে আনায়। আশা করি, আগামী দুই বছরের মধ্যে কজন ক্রিকেটারকে বাংলাদেশ দলে খেলার মত প্রস্তুত করে দিতে পারব।”

গত শনিবার ঢাকায় পা রেখেছেন লয়। এর মধ্যে কাজও শুরু করেছেন নতুন শিষ্যদের নিয়ে। একাগ্র অনুশীলন আর কয়েকটি অনুশীলন ম্যাচ খেলার জন্য ক’দিন পর দল নিয়ে যাবেন চট্টগ্রামে। নতুন এই দায়িত্বে লয় দারুণ রোমাঞ্চিত।

“বাংলাদেশের প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি রোমাঞ্চিত। এরাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের আগামী প্রজন্ম। বিশ্বজুড়ে ২০ বছর খেলার অভিজ্ঞতা আমার সঙ্গী। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত…সব জায়গায় খেলেছি। কোচ হিসেবেও যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন। তবে প্রধান কোচের দায়িত্বে এই প্রথম। আমি নিজেও মুখিয়ে আছি ভাল কিছু করতে।”

বাংলাদেশেও তার কাজটা বেশ কঠিন। বর্তমান জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারই এসেছেন বিসিবির আগের হাই পারফরম্যান্স প্রোগ্রাম থেকে। এবারও তাই প্রত্যাশাটাও আকাশছোঁয়া। সেই প্রত্যাশার কথা লয় নিজেও জানেন।

“প্রত্যাশা তো থাকবেই। দায়িত্ব নিলে থাকবে দায়ও। সেটা আমরা জানি। ক্রিকেটার হিসেবে যেমন উদ্ভাবনী চিন্তা ভাবনার ছিলাম, কোচ হিসেবেও উদ্ভাবনী কিছু করার ভাবনা থাকবে।”

বিসিবি একাডেমির কোচিং ডিরেক্টর পল টেরির তত্ত্বাবধানে ও হাই পারফরম্যান্স জেনারেল ম্যানেজার স্টুয়ার্ট কার্পিনেনের সঙ্গে মিলে কাজ করবেন লয়। বাংলাদেশকে উপহার দিতে চান আগামীর সাকিব-তামিম। হাই পারফরম্যান্স দলের ক্রিকেটারদের সেই বার্তাটিই দিয়েছেন তিনি।

“গতকালই ওদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছি আমি। বলেছি, শীর্ষ পর্যায়ে খেলার সুযোগটি কত বড়, দেশের হয়ে খেলতে পারা কত বড় একটা সম্মান। লক্ষ্য স্থির রেখে নিজের শতভাগ ঢেলে দাও।”

চার মাসের ঠিকানা

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলার সময় মাঠের এক প্রান্তে জাতীয় দলের একটি অংশকে অনুশীলন করাচ্ছিলেন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাতুরুসিংহে ও স্পিন কোচ রুয়ান কালপাগে। আরেক প্রান্তে অনুশীলনের কাণ্ডারি ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসল ও বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক। জুনের তীব্র তাপ এরই মধ্যে সয়ে নিয়েছেন তারা। কিন্তু সূর্যের তেজ জানান দিচ্ছিল লয়ের কুঁচকে যাওয়া চেহারায়। ঘেমে-নেয়ে প্রায় একাকার তিনি। তবে গরম নয়, তার অভিযোগ ঢাকার যানজট নিয়ে।

“গরমে আমার সমস্যা নেই। অস্ট্রেলিয়ায় অনেক দিন থেকেছি, ভারতে তো গিয়েছিই বেশ কবার। গরমে মানিয়ে নিতে পারি। কিন্তু এখানে ট্রাফিক তো ভয়াবহ, অসহ্য জ্যাম!”

গরমের মতো এই যানজটেও এখন অভ্যস্ত হতে হবে লয়কে। কারণ আগামী চার মাস বাংলাদেশই ঠিকানা নর্দাম্পটনে জন্ম লয়ের। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলার সময় তাকে ভাবা হচ্ছিল ভবিষ্যত ইংল্যান্ড তারকা। শেষ পর্যন্ত সেই প্রত্যাশার সঙ্গে মেলেনি প্রাপ্তি। ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় সিবি সিরিজে খেলা ৭টি ওয়ানডেতেই থমকে গেছে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। তবে আগ্রাসী এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান দাপটের সঙ্গে কাউন্টি ক্রিকেটে খেলেছেন ২০ বছর। ২০১২ সালে পুরোপুরি ক্রিকেট ছাড়ার পর নাম লেখান কোচিংয়ে। সম্প্রতি শেষ করেছেন ‘লেভেল ফোর’ কোচিং কোর্স, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন একাডেমি দলকে কোচিং করিয়েছেন, সহকারী কোচ ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার নাটালে নশুয়া ডলফিনসের। এবার এলেন বাংলাদেশে, জাতীয় দলের ভবিষ্যত রসদের জোগান দিতে; এসেছেন ভবিষ্যতের সাকিব-তামিম-মুশফিকদের গড়ে তুলতে।

উদ্ভাবনী ব্যাটসম্যান থেকে খেলোয়াড় গড়ার কারিগর

খেলোয়াড়ি জীবনে তার পরিচয় ছিল উদ্ভাবনী ব্যাটসম্যান হিসেবে। উদ্ভাবনী সব শটে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টিতে হয়ে উঠেছিলেন বোলারদের মাথাব্যথার কারণ। ডেভিড ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যক্সওয়েল, এবি ডি ভিলিয়ার্সরা এখন রিভার্স সুইপ, রিভার্স ফ্লিক, সুইচ হিট খেলেন। ১০ বছর আগে লয় স্লগ সুইপ করতেন ফাস্ট বোলারদের!

৭ ওয়ানডের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে লয় ফিফটি করতে পারেননি একবারও। তারপরও অনেকে তাকে মনে রেখেছেন ওই উদ্ভাবনী ব্যাটিংয়ের কারণে। অভিষেক ওয়ানডেতেই ব্রেট লির দেড়শ’ কিলোমিটার গতির বলকে স্পিন খেলার মত হাঁটু গেড়ে উড়িয়েছিলেন স্কয়ার লেগ দিয়ে! সুইপ করে চার মেরে হতভম্ব করে দিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রাকে। ম্যাকগ্রাকে সুইপ করতে গিয়েই আবার বলের আঘাতে ফাটিয়েছিলেন নিজের থুতনি। লয়ের ওইসব শট, ওই থুতনি ফাটানোর ভিডিও ইউটিউবে এখনও দারুণ জনপ্রিয়।