শেষটা রাঙিয়ে রাখার সুযোগ বাংলাদেশের

দুর্দান্তভাবে কাটানো একটা মৌসুমের শেষটা রাঙিয়ে রাখার দারুণ সুযোগ বাংলাদেশের সামনে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ভালো খেলে নিজেদের টেস্ট রেকর্ড একটু উজ্জ্বল করারও হাতছানি টাইগারদের সামনে।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2015, 02:30 PM
Updated : 29 July 2015, 02:30 PM

বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হবে সকাল সাড়ে নয়টায়। চট্টগ্রাম টেস্টের মতো ঢাকার এই ম্যাচেও রয়েছে বৃষ্টির শঙ্কা। 

চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র হওয়ায় ঢাকা টেস্টের ওপরই নির্ভর করছে সিরিজের ভাগ্য। ২০০৬ সাল থেকে দেশের বাইরে কোনো সিরিজ না হারা দক্ষিণ আফ্রিকা মরিয়া ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতে। আইসিসি টেস্ট র‍্যাংঙ্কিংয়ের শীর্ষ দলের ওপর থাকা এই চাপই হতে পারে সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে মুশফিকুর রহিমদের বড় অস্ত্র।  

“শেষ টেস্টটা সব দিক থেকেই খুব ভালো হয়েছে। বোলিং-ব্যাটিং ও ফিল্ডিং সবই ভালো হয়েছে। ওই ম্যাচ থেকে অনেক আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। তবে এখানে উইকেট একটু ভিন্ন; চট্টগ্রামের তুলনায় এখানে বাউন্স বেশি। আমরা চলতি মৌসুমের শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি। এমন পরিস্থিতিতে সবাই খুব ভালো খেলার জন্য মুখিয়ে আছে।”

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজ মানেই যেন ছিল একপেশে লড়াই। তবে এবার ইতিহাস পাল্টাতে লড়ছেন মুশফিকুর রহিমরা। চট্টগ্রামে ড্র করে হারের বৃত্ত ভাঙার পর তাদের স্বপ্ন এখন আরও উঁচুতে।

“যেহেতু এটা শেষ ম্যাচ, সব কিছু মাথায় রেখেই ঢাকায় সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকাও জানে এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে খেলতে হয়। তারা টেস্টের এক নম্বর দল। ওদের বোলিংটা পরিকল্পনা মতোই হয়। আমরা যদি সব কিছু ঠিকঠাক প্রয়োগ করতে পারি, তবে ফলাফলটা আমাদের পক্ষেও আসতে পারে। এমনকি সিরিজটাও আমাদের হতে পারে।”

দেশের মাটিতে খেলা শেষ সাত টেস্টে বাংলাদেশের রেকর্ড দারুণ। তিনটি জয়ের সঙ্গে আছে তিনটি ড্র, হার কেবল এক টেস্টে।

চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দুই দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় ম্যাচের ফল হয়নি। তবে প্রথম তিন দিন যতটুকু খেলা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সাত টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারা স্বাগতিকরা লড়াই করে সমান তালে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরাক্রমশালী প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়েও ছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে মুশফিকদের খেলাই প্রমাণ করে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জেতাও অসম্ভব নয়।  

অধিনায়ক জানান, ঢাকা টেস্টে খেলা হবে স্পোর্টিং উইকেটে। এই উইকেট স্বাগতিকদের চিরচেনা। এই উইকেটে খেলার সুবিধা কাজে লাগাতে চায় স্বাগতিকরা।

“এই উইকেটে আমাদের কম্বিনেশনে খুব বেশি পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। কারণ, শেষ টেস্টে যে একাদশ খেলেছে; সবাই যার যার জায়গায় ভালো খেলেছে। সে দিক থেকে চিন্তা করলে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। তবে একজন পেসার বা একজন ব্যাটসম্যান সেরা একাদশে ঢুকেও যেতে পারে।”

সেক্ষেত্রে দলে ফিরতে পারেন সৌম্য সরকার বা পেসার রুবেল হোসেন।

উইকেটে থিতু হওয়া ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে বড় ইনিংস চায় বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক, লিটন দাসরা আউট হয়েছেন উইকেটে থিতু হয়ে। ঢাকা টেস্টে থিতু হওয়া ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্বশীল হতে বলেছেন অধিনায়ক।

অতিথি শিবিরে এক নম্বর দলের মতো খেলার চাপের সঙ্গে আছে ব্যাটসম্যানদের ফর্মহীনতার দুর্ভাবনাও। কুইন্টন ডি কক ছন্দে নেই, রান পাচ্ছেন না হাশিম আমলাও। অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানেরা অনেক সময়ই চাপকে জয় করতে পারছে না। এর মধ্যে আবার ছন্দহীনতায় ভুগছে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানরা।

টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান স্টিয়ান ফন জিল, ডিন এলগার ও ফাফ দু প্লেসি প্রথম টেস্টে ভালো করলেও টেম্বা বাভুমা ছাড়া অতিথিদের আর কোনো মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ভালো করতে পারেননি।

ডেল স্টেইন, মর্নে মর্কেল, ভার্নন ফিল্যান্ডার ও সাইমন হার্মারে গড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং আক্রমণ বিশ্বের সেরাদের একটি। অতিথিদের পেস বোলিংই হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মিরপুরের উইকেটে পেসাররা একটু সহায়তা পাওয়ায় এবার আরও বেশি ঘাম ঝরাতে হবে তামিম-ইমরুল-সাকিব-লিটনদের।   

বাংলাদেশের বিপক্ষে আট টেস্টের সবকটিতেই জেতা দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সামর্থ্য বাংলাদেশের বোলারদের আছে বলে বিশ্বাস করেন মুশফিক। ম্যাচের আগের দিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক জানান, সাকিব আল হাসান, জুবায়ের হোসেন, তাইজুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ শহীদদের সামর্থ্য আছে অতিথিদের ২০ উইকেট নেওয়ার।

অতিথিদের বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের কথা বিবেচনা করে আর ব্যাটিং গভীরতা বাড়াতে তাইজুলের জায়গায় নাসির হোসেনকে ফেরাতে পারে স্বাগতিকরা।

“আমাদের বোলিং ইউনিটের সামর্থ্য আছে ওদের ২০ উইকেট নেওয়ার। সেটা করতে পারলে ফলাফলটা ভালো হতে পারে। আপনারা জানেন ভালো ফলাফলটা কী- বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে সিরিজটি জিততেও পারে।”