‘যোগ্যের’ অভাব, ভারপ্রাপ্তে ভরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

প্রায় দুই দশক ধরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে চলছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের কাজ।

আজিজ আহমদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2015, 05:19 PM
Updated : 1 June 2015, 05:39 PM

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রেজিস্ট্রার ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, গ্রন্থাগারিক, নিরাপত্তা দপ্তর, মেডিকেল কর্মকর্তা, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালকসহ সব পদেই রয়েছেন ভারপ্রাপ্তরা।

এসব পদে পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ না দেয়ায় অনেকের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলছেন, ‘যোগ্য লোক’ না পাওয়ায় এবং ‘দুর্নীতি ঠেকাতে’ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে প্রশাসনিক কাজ চালানো হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্ট্রারের পদ থেকে ১৯৯৫ সালে আবদুর রশিদ অবসর নেওয়ার পর থেকে এই পদে পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ দেওয়া হয়নি। 

বর্তমানে রেজিস্ট্রার পদে গত বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. আলমগীর চৌধুরী, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীও।

গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহের কর্মকর্তাদের ভারপ্রাপ্ত করে রাখা হলেও দায়িত্ব পালনে কোনো ‘সমস্যা’ হচ্ছে না দাবি মো. আলমগীর চৌধুরীর।

অতীতে বিভিন্ন পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও ‘যোগ্য’ লোক পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামক হিসেবে মো. ফরিদুল আলম চৌধুরী ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তার আগে হিসাব নিয়ামকের দায়িত্ব পালন করা আব্দুল মোনায়েমও প্রায় ১০ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অবসর গ্রহণের পর তাকে দুই দফায় চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগও দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ইন্সটিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে আছেন।

এই পদেও এক দশকের বেশি সময় ধরে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

পরিবহন দপ্তরে দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন মো. রবিউল আলম।

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকাকালীন রবিউল আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ওঠার পর তাকে সরিয়ে দেওয়া হলেও বর্তমান উপাচার্যের সময়ে তাকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অন্য কর্মকর্তারা হলেন- গ্রন্থাগারিক এস এম আবু তাহের, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতরের পরিচালক মো. আবু সাঈদ হোসেন, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান মো. বজল হক, বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কিরণ চন্দ্র দেব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসের কর্মকর্তা মো. সেকান্দর আলম, প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোয় এমন লোক নিয়োগ দিতে হয় যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি, পরিবেশ, আইন-কানুন সম্পর্কে ভাল ধারণা আছে।

“এ ধরনের লোক পাওয়া যায়নি বলেই পদগুলোতে পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ দেওয়া যায়নি।”

ভারপ্রাপ্তদের দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, “এর আগে শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা ক্লাসের কারণে সময় দিতে না পারায় কাজে বিঘ্ন ঘটে।

“একজন কর্মকর্তা হিসেবে প্রধান প্রকৌশলী আলমগীর সবেচেয়ে পুরানো ও যোগ্য লোক। তাই তাকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”

মেয়াদের শেষ প্রান্তে থাকা আনোয়ারুল আজিম আবার উপাচার্যের দায়িত্ব পেলে প্রশাসনিক পদগুলোতে পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ দেয়ার আশা প্রকাশ করেন।