কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে এলেন স্বজনরা

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তোড়জোড়ের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সঙ্গে কারাগারে কথা বলে এসে তার স্বজনরা বলেছেন, তাকে সুস্থ এবং ধীরস্থির দেখেছেন তারা।

কামাল তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2015, 07:48 AM
Updated : 11 April 2015, 12:56 PM

শনিবার বিকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান কামারুজ্জামানের স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনরা। প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা পর কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন তারা।

বেরিয়ে এসে কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি (কামারুজ্জামান) ধীর রয়েছেন, সুস্থ রয়েছেন।”

কারাগারের বাইরে তোড়জোড় শনিবার রাতেই কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকরের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে এটাই ছিল তার সঙ্গে তার স্বজনদের শেষ সাক্ষাৎ। তবে এই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি হাসান ইকবাল।

সকালে এই জামায়াত নেতার স্বজনদের বিকালে সাক্ষাতের সময় দিয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষ। বিকাল ৪টার দিকে দুটি মাইক্রোবাসে করে স্বজনরা কারাফটকে পৌঁছায়। মোট ২৩ জন এলেও কারাগারে ঢুকতে দেওয়া হয় ২০ জনকে।

মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনায় কামারুজ্জামানের করা আবেদন আপিল বিভাগে খারিজ হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় শুক্রবার তার দণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি দেখা গেলেও পরে তা হয়নি।

মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনায় (রিভিউ) কামারুজ্জামানের আবেদন সোমবার সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হওয়ার পর তার কাছে শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগই ছিল। 

বৃহস্পতিবার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার পর কামারুজ্জামান সময় নিয়ে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর শুক্রবার তার সিদ্ধান্ত জানতে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট যান কারাগারে। 

শনিবার বিকালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা না চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কামারুজ্জামান।

কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল

তবে হাসান ইকবাল দাবি করেছেন, ম্যাজিস্ট্রেটরা তার বাবার সঙ্গে কোনো কথাই বলেননি।

“সরকার নিজেদের পথ পরিষ্কার করতে নাটক করেছে।”

কামারুজ্জামানের যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে তার ছেলে বলেন, “একাত্তরে ১৮ বছর বয়সী একটা ছেলেকে মিথ্যা মামলা দিয়ে যুদ্ধাপরাধী সাজানো হয়েছে।”

“এর উপযুক্ত জবাব তরুণ প্রজন্ম দেবে,” বলেন ব্লগে লেখালেখিতে সক্রিয় কামারুজ্জামানের এই ছেলে।

কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিলের রায় আদালত আলবদর নেতা হিসেবে তার একাত্তরের ভূমিকাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালের নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করেছিল।

রিভিউ আবেদন খারিজের পর সোমবার বিকালে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে এসেছিলেন তার স্বজনরা।

সেদিন কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন স্ত্রী নুরুন্নাহার; ছেলে হাসান ইকবাল, হাসান ইমাম ও আহমেদ হাসান; মেয়ে আতিয়া নূর; ভাই কামরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আফিয়া নূর; ভাতিজা আরমান, ভাতিজি আরিফা ও মলি; শ্যালক রুম্মান; ভাগ্নি রোকসানা জেবিন, জিতু, মুন ও মনি এবং বিউটি নামে এক আত্মীয়া। তাদের সঙ্গে শনিবার আরও সাতজন যুক্ত হন।

একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে ময়মনসিংহ অঞ্চলের আলবদর কমান্ডার কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে সেখানেও তার সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল থাকে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার বাজিত খিলায়। স্ত্রী, পাঁচ ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তিনি থাকতেন ঢাকার মিরপুরের সাংবাদিক কলোনিতে।