নবীর নামে বই ছেপে নিষিদ্ধ রোদেলা প্রকাশনী

অনূদিত একটি বই প্রত্যাহারের দুই দিন পরও তা স্টলে প্রদর্শনের দায়ে রোদেলা প্রকাশনী নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে বই মেলায় নিষিদ্ধ করেছে বাংলা একাডেমি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2015, 05:29 PM
Updated : 16 Feb 2015, 06:03 PM

সোমবার দুপুরে নিষিদ্ধের নোটিস প্রকাশনা সংস্থাটিকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাডেমির উপ-পরিচালক মুর্শিদ আনোয়ার।

এদিকে শনিবার এই প্রতিষ্ঠানটি ওয়েবসাইটও হ্যাক করা হয়েছে।

ইরানি লেখক আলি দস্তি’র ‘বিশতো সেহ সাল’ নামে একটি বইয়ের অনুবাদ ‘নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর’ নামে প্রকাশ করে রোদেলা প্রকাশনী। বইটি ইংরেজিতে ‘২৩ ইয়ার্স, এ স্টাডি অব প্রোফেটিক ক্যারিয়ার অব মুহাম্মদ’ নামে প্রকাশিত হয়।

বইকে কেন্দ্র করে সোমবার বাংলা বাজারে বিক্ষোভ হয়, যেখান থেকে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটনের কাছে স্মারকলিপি দেন।

সমিতির অভিযোগের ভিত্তিতেই স্টল বাতিল করা হয়েছে বলে জানান একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

শামসুজ্জামান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওদের একটা বই নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। আমরা ওদের স্টলটা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।”

কী সমস্যা হয়েছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা তো বইটা পড়তে পারিনি। বইটা এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে আসেনি। সেক্ষেত্রে আমরা বলতে পারব না।

“তবে শুনেছি, মহানবীর ওপর কিছু বিরূপ মন্তব্য করেছে। আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।”

তিনি বলেন, “প্রকাশকদের বিরুদ্ধে বাংলা বাজারে বিক্ষোভ হয়েছে। এটা শুনেছি, তারা বিষয়টা মিটমাট করেছে। তারা আমাদেরকে বলেছে, স্টলটা বন্ধ করে দেন। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।”

একাডেমির উপপরিচালক মুর্শিদ আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের মেলায় অংশগ্রহণের একটা নীতিমালা আছে। এই নীতিমালার ১৩ অনুচ্ছেদের ১৩ ধারায় আছে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো কথা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, সামাজিক নিরাপত্তা ধ্বংস বিঘ্নিত করতে পারে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড উপলক্ষে কোনো বই প্রকাশিত হলে, সেই বই মেলায় আনতে পারবে না।

“কিন্তু রোদেলা প্রকাশনী মানুষের মনে আঘাত দিতে পারে এ ধরনের একটা বই তারা মেলায় এনেছে। আমরা শনাক্ত করতে পারায় তাদেরকে বাতিল করে দিয়েছি।”

তিনি বলেন, দুপুরের দিকে এই নোটিস দেওয়া হয়েছে।

মুর্শিদ আনোয়ার আরও বলেন, “ইরানের বই অনুবাদ করেছে। যাই হোক, মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারে না। সেই বিষয়টা বিবেচনায় রেখেই নীতিমালার আলোকে নিষিদ্ধ করেছে।”

কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা তো আজ দেখলাম, কোনো একটা পত্রিকায় এসেছে।”

পত্রিকার খবর পড়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পত্রিকার খবর পড়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদিও আমরা স্টলে গিয়ে বইটা পাই নাই। কিন্তু খবর নিয়ে কর্তৃপক্ষ যতটুকু জানতে পেরেছি, তার ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

স্টলে বইটা না পাওয়া গেলে কিভাবে বইমেলার শর্ত ভঙ্গ করল-এ প্রশ্নের জবাবে বাংলা একাডেমির উপপরিচালক বলেন, “নিশ্চয়ই কোনো একটা অথেনটিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ বিষয়টা বিবেচনা করেছে।”

এদিকে বাংলা একাডেমি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ খান শনিবারই বইটি তার বইমেলার স্টল এবং বাংলাবাজারের অফিস থেকে সরিয়ে নিয়ে বইটি বিক্রি করবেন না বলে ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, “বইটিতে নবী মুহাম্মদের বিরুদ্ধে কোনো কথা থাকতে পারে এমনটি আমার ধারণায় ছিল না। যেহেতু ভুল করেছি, তাই অপরাধ স্বীকার করে আমি বইটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।”

গত তিন দিন আগে রোদেলা স্টল নিষিদ্ধের পর এই প্রকাশনীর ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে। হ্যাক হওয়া ওয়েবসাইট লেখা রয়েছে, “বাংলার নবাব ইজ ব্যাক….) হ্যাকড বাই তানজিম আল ফাহিম এন্ড বাংলা লিট”।

হ্যাক করা পেইজে বলা হয়, নবীকে অবমাননার প্রতিবাদ স্বরূপ রোদেলা প্রকাশনীর ওয়েবসাইট হ্যাক করল "সাইবার ৭১"।

সেখানে আরো বলা হয়, “হ্যালো রোদেলা প্রকাশনী, কী করে ভাবলি যে তোরা বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশে নবী [সাঃ] কে অবমাননা করে বই প্রকাশ করবি আর "সাইবার ৭১" চুপ করে বসে থাকবে?

“এটা তোদের জন্য সতর্কবার্তা, আগুন নিয়ে খেলবেন না। ধর্মীয় উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড করে নিজেদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির আগে আরেকবার ভেবে নিয়ো।’

‘মনে রাখবা, আগুন আর "সাইবার ৭১" কে কখনো আক্রমণে আসতে বাধ্য করতে নেই। আশা করি ব্যাপারটা পরবর্তীতে খুব ভালো করেই মনে রাখতে বাধ্য থাকবা। সে নো টু রোদেলা প্রকাশনী’

আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাংলা বাজারের বিক্ষোভে ইসলামি টাওয়ারের মালিক শহীদুল হক মল্লিক অংশ নিয়ে তার টাওয়ার থেকে রোদেলা প্রকাশনীকে উচ্ছেদের ঘোষণা দেন।

আধুনিক ইরানের মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদের একজন অগ্রপথিক হিসাবে আলি দস্তিকে বিবেচনা করা হয়। পারস্য উপসাগরের উত্তরে অবস্থিত বুশেহর রাজ্যের দাস্তেস্তান জেলার একটি গ্রামে আলি দস্তির জন্ম ১৮৯৬ সালে। তার বাবার নাম শেখ আব্দুল হোসেন দাস্তেস্তানি।

তার সম্পাদনায় ১৯২২ সালে ‘শাফাক ই র্সক’ (লালের উদয়) নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়, যা দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়।

লেখালেখির পাশাপাশি তিনি তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিন তিন বার ইরানের মজলিসের (পার্লামেন্টের) নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন।

ইরানে ‘ইসলামি বিপ্লবের’ পর আশিউর্ধ্ব বয়সে আলি দস্তি গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হন।