দণ্ড কার্যকরে ‘আদালতের দিকে তাকিয়ে’ সরকার

যুদ্ধাপরাধী মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য সরকার সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2014, 08:57 AM
Updated : 11 Nov 2014, 07:19 PM

মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আপনাদের হয়ত কৌতূহল কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে। তবে কামারুজ্জামানের বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি।”

কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “সর্বশেষ আপডেট আসেনি। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে আছি।”

একাত্তরে ময়মনসিংহ অঞ্চলের আল বদর প্রধান কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধে গত বছরের ৯ মে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

জামায়াতে ইসলামীর এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে গত ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়েও তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে।

আপিল বিভাগের রায় পেলেই ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির আসামি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবে বলে রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে।

এরপর তা কার্যকর করবে সরকার। এক্ষেত্রে সরকার চাইলে কারাবিধিও (জেল কোড) অনুসরণ করতে পারে।

কারাবিধি অনুযায়ী, প্রত্যেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ পাবেন। কারাধ্যক্ষ আসামিকে জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়ে তার মত চাইবেন। সাত দিনের মধ্যে তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।

এদিকে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড আগামী বিজয় দিবসের আগে কার্যকরে দুটি ‘যদি’র কথা বলছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম।

তিনি মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায় পাওয়া সাপেক্ষে সব বিষয় নির্ভর করে। আপিল বিভাগ রায় কখন দিবেন, এই রায়টা যদি ট্রাইব্যুনাল এই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের ভিতরে পায়, তাহলে আশা করি ১৬ ডিসেম্বরের আগে এটা কার্যকরের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।”

 

কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা বলছেন, তারা আপিলের রায় পর্যালোচনার আবেদন করবেন; যদিও সেই সুযোগ নেই বলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলে আসছেন।  

মাহবুবে আলম বলেন, “তারা (আসামিপক্ষ) যেটা বলছে, তারা রিভিউ ফাইল করবে। কাদের মোল্লার (রিভিউ) মামলার রায়ে যদি দেখা যায়, রিভিউ ফাইল করার ব্যাপারে কোনো পর্যবেক্ষণ থাকে, সেক্ষেত্রে রিভিউ ফাইল করে তারা কোনো ফল পাবেন কি-না, সেটা তো আমি এখন বলতে পারছি না। সেক্ষেত্রে এটা আদালতের ওপর নির্ভর করবে।”

তবে ৪৭ ক(২) অনুচ্ছেদে যুদ্ধাপরাধীদের জন্য সাংবিধানিক প্রতিকারে বারণ থাকায় কামারুজ্জামান রিভিউর সুযোগ পাবেন না বলে এখনও মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এই সংবিধানে যা বলা হয়েছে, তা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের ৩ দফায় বর্ণিত কোনো আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানের অধীনে কোনো প্রতিকারের জন্য তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার কোন অধিকার সেই ব্যক্তির থাকবে না।

৪৭ অনুচ্ছেদের ৩ দফায় যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধীদের কথা বলা হয়েছে।

তবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টিতে এ ধরনের বারণ না থাকায় সে সুযোগ দণ্ডিত কামারুজ্জামানের থাকবে বলে জানান মাহবুবে আলম। তবে এ জন্য কতদিন সময় দেয়া হবে সেটা সরকার নির্ধারণ করবে বলে জানান তিনি।