সাক্ষ্যে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি ভারতে যুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য চলে যাওয়ার পরে পাকিস্তানি সেনারা তার বাড়িতে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে এবং তার বাবাকে হত্যা করে। এসময় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে আজহারও ছিলেন।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সোমবার সাক্ষ্য দেন মো. মোস্তফা।
বর্তমানে প্রায় ৭৫ বছর বয়স্ক মো. মোস্তফা জানান, ১৯৭১ সালে তিনি চাল-ডালের ব্যবসা করতেন। বর্তমানে তিনি রংপুরের কোতয়ালি থানার কাছনা তাকেয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
মোস্তফা জানান, একাত্তরে দুই মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রীকে বাবা-মার কাছে রেখে ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য যান তিনি। ফিরে বাড়িতে কাউকে পাননি। প্রতিবেশীদের কাছে জানতে পারেন পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচারে তার বাবা মারা গেছেন। স্ত্রীকে বোন জুলেখা নিয়ে গেছেন।
“পাগলের মতো হয়ে যাওয়া স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে আসি। স্ত্রী মানসুরা বেগমের কাছে জানতে পারি, আমি মুক্তিযুদ্ধে চলে যাওয়ার পরে ভাদ্র মাসের ৭/৮ তারিখের দিকে রাজাকার, আলবদরসহ পাকিস্তানি সেনারা আমাদের গ্রামে আসে।
সাক্ষী জানান, তাদের বাড়িতে যখন পাকিস্তানি সেনারা আসে তখন তার বাবা বাড়ির দাওয়ায় বসে ছিলেন। ছেলে সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলায় তাকে নির্যাতন শুরু করে।
“এসময় আমার স্ত্রী বাড়ি থেকে বের হয়ে পূর্ব দিকে প্রতিবেশী রহমানের বাড়ির দিকে দৌড় দেন। তাকে ধাওয়া করে তিন পাকিস্তানি সেনা ও একজন বাঙালি। ওইসময় রহমানের বাড়িতে কেউ ছিল না। দরজা খোলা পেয়ে ওই বাড়িতে ঢুকে যান আমার স্ত্রী। সেখানেই এই চারজন আমার স্ত্রীর সম্ভ্রম হরণ করে।”
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মো. মোস্তফা বলেন, “আমার স্ত্রী পাকিস্তানি সেনাদের পায়ে ধরে অনুরোধ করেছিলেন। সঙ্গে থাকা বাঙালিটিকেও অনুরোধ করেছিলেন তাকে রক্ষা করার জন্য।
“আমার স্ত্রীকে ওই ঘর থেকে বের করতে চাইলে সে কিছুতেই বের হতে না চাওয়ায় সঙ্গে থাকা বাঙালিটিকে নাম ধরে পাকিস্তানি সেনারা নির্দেশ দেয় তাকে টেনে-হিঁচড়ে বের করার জন্য। ওইসময় আমার স্ত্রী বুঝতে পারেন সঙ্গে থাকা লোকটিই এটিএম আজহার।”
সাক্ষী জানান, এরপরে তার স্ত্রীকে রংপুর টাউন হলে আরো অনেক নারীর সঙ্গে আটকে রাখা হয়। সেখানেও তাকে ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনারা। ১৮ দিনের মাথায় গর্ভের সন্তানটি নষ্ট হয়ে গেলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বাড়ি ফেরত পাঠানো হয়।
সাক্ষ্য দেয়া শেষ হলে এ সাক্ষীকে জেরা শুরু করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার। পরে জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় মঙ্গলবার পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
এর আগে ট্রাইব্যুনালে তিনটি আবেদন করে আসামিপক্ষ। এগুলো হলো- মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দাখিলকৃত প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ, আসামিপক্ষের সাক্ষীর অসমাপ্ত তালিকাগ্রহণ এবং আসামিপক্ষের মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যায়ক্রমে গ্রহণ করা।
তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণের জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আধা ঘণ্টা সময় দেয়া হয়। অন্য দুটি আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করা হয়।