বুধবার দুপুরে প্রায় দুই ঘণ্টার এই অভিযানে শহরের আল্লামা ইকবাল সড়কে আজমেরির মালিকানাধীন উইনার ফ্যাশনসের কার্যালয় থেকে দারোয়ানসহ মোট তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
আজমেরির ওই অফিসকে ‘টর্চার সেল’ আখ্যায়িত করে সেখানেই ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছেন তার বাবা নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দুপুর ১২টার দিকে প্রায় ৪০ জন র্যাব সদস্য ইকবাল সড়কের প্রায় ১০০ গজ এলাকায় অবস্থান নিয়ে উইনার ফ্যাশনস কার্যালয় ঘিরে ফেলে। এরপর ওই সড়কে যানবাহন ও লোক চলাচল সীমিত করে বেলা ২টা পর্যন্ত অভিযান চলে।
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা র্যাব- ১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ত্বকী হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের স্বীকারোক্তি এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে তদন্তের অংশ হিসেবেই এ অভিযান।
ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১১এর এএসপি রবিউল হক জানান, আজমেরি ওসমানের অফিসের দেয়ালে এবং শোকেইসে বেশ কিছু গুলির চিহ্ন রয়েছে। এসব নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম জানান, ওই কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী শুক্কুর আলী এবং গাড়ি চালক জমশের হোসেন (৩২) ও শিপনকে (২৮) তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছেন।
“আজমেরি ওসমানকে পাওয়া যায়নি। তবে তিনি নারায়ণগঞ্জেই রয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তদন্তের স্বার্থে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রয়োজন তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের স্কোয়াড্রন লিডার মাসুদ রানা, এএসপি সাদিরা খাতুন ও এএসপি ফরহাদ হোসেনও এই অভিযানে অংশ নেন।
একই সময় এ মামলার আরেক সন্দেহভাজন রাজিবের বাড়িতে অভিযান চালানো হলেও সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি বলে র্যাব জানিয়েছে।
আজমেরি ওসমান নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাতিজা এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ জাতীয় পার্টির নেতা নাসিম ওসমানের ছেলে।
অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম ওসমান বলেন, “র্যাব কেন গেছে তা আমি জানি না। জেনে নিয়ে পরে কথা বলব।”
আর নাসিম ওসমানের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এরপর ১৮ মার্চ শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, যুবলীগ নেতা পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগসহ সভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারকে একটি অবগতিপত্র দেন তিনি।
তার অভিযোগ, আজমেরির অফিসেই ত্বকীকে আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। এই ‘টর্চার সেলে’ ত্বকী ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে ধরে এনে নির্যাতনের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা চাঁদা আদায় করা হতো।
নারায়ণগঞ্জের ‘সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ’ গত মার্চ মাসে ওসমান পরিবারের পাঁচটি ‘নির্যাতন কেন্দ্রের’ একটি তালিকা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে হস্তান্তর করে, যেখানে আজমেরির কার্যালয়ের কথাও বলা হয়।
ত্বকী হত্যা মামলা প্রথমে পুলিশের হাতে থাকলেও পরে আদালতের আদেশে তদন্তভার র্যাবকে দেয়া হয়।