চট্টগ্রামে বিলবোর্ডজুড়ে যুব ও ছাত্রলীগ নেতাদের মুখ

রাজধানীর বিলবোর্ডগুলোজুড়ে যখন মহাজোট সরকারের সাড়ে চার বছরের উন্নয়নচিত্রের খতিয়ান, তখন বন্দর নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোর বিলবোর্ডে শোভা পাচ্ছে যুব ও ছাত্রলীগ নেতাদের ‘মুখ’।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম অফিসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2013, 03:46 PM
Updated : 5 August 2013, 03:49 PM

ঈদের আগে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিলবোর্ডে নেতাদের ‘আশীর্বাদে’ ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতারা। আর তাদের ঈদ শুভেচ্ছায় ঢাকা পড়েছে এতদিন ধরে প্রদর্শিত বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন।

শুভেচ্ছা জানানো ওই নেতারাই এসব বিলবোর্ডের অধিকাংশের ‘মালিক’ হলেও তারা বলছেন, এসব ঘটেছে তাদের ‘অগোচরেই’। তবে এতে আপত্তির কিছু দেখছেন না তারা।

বিজ্ঞাপনে ব্যবহারের জন্য বছর ভিত্তিতে এসব বিলবোর্ড বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। আর ভাড়া নেয়া বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোরই মালিক যুব ও ছাত্রলীগ নেতা।

নগরীর নিউ মার্কেট মোড়, কোতোয়ালি মোড়, ওয়াসা মোড় ও জাকির হোসেন সড়কের বড় আকারের বিলবোর্ডে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে বিলবোর্ড দেখা যাচ্ছে।

ওয়াসা মোড়ে তিনটি বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন ঢেকে মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুকে ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ড যুবলীগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। এসব ব্যনারে তার বড় আকারের ছবি এবং শুভেচ্ছাদাতাদের ছোট আকারের ছবি রয়েছে।

ওমর গণি এমইএস কলেজসংলগ্ন জাকির হোসেন সড়কের একটি বিলবোর্ডে লাগানো কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর ছবিসহ ব্যানারে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় কলেজ ছাত্রলীগ ও ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

একই ব্যানারে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকেও শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।

অদূরেই সরকারি মহিলা কলেজের সামনের সড়কে আরেকটি বিলবোর্ডে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মহসিনের ছবিসম্বলিত ব্যানার লাগানো হয়েছে। এতে লেখা আছে ‘নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষ থেকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা’।

নিউ মার্কেট ও কোতোয়ালি মোড়েও এরকম একাধিক বিলবোর্ড রয়েছে।

নগর যুবলীগের নতুন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ চট্টগ্রাম বিলবোর্ড মালিক সমিতিরও সভাপতি।

তার কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিলবোর্ডগুলো অবশ্যই কেউ না কেউ ভাড়া নিয়েছে। তবে ভাড়া গ্রহণকারীকে না জানিয়ে এ ধরণের ব্যানার লাগানো উচিত নয়।”

অনেক বিলবোর্ডে যার মুখ দেখা যাচ্ছে, সেই যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চু বিলবোর্ড মালিক সমিতির উপদেষ্টা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পথে ঘাটে চলাচলের সময় এমন ব্যানার দেখেছি। বিলবোর্ড যারা ভাড়া নিয়েছেন ও যারা ব্যানার লাগিয়েছেন তারা একে অন্যের পরিচিত।

বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন ঢেকে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “অনুমতি নিয়ে ব্যানার লাগানো হয়েছে কি না, তা জানি না। বিলবোর্ড যারা ভাড়া নিয়েছেন, তারা কেউ অবশ্য এখনো অভিযোগ করেননি।”

তার ছবিসহ বিলবোর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বলেন, “এরকম ঈদ শুভেচ্ছা দেয়া তো গত বছর দুয়েক ধরে এক ধরনের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।”

তবে এতে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে তিনি বলেন, “আমার ছবি তো গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে ছাপা হয়। হয়ত সেখান থেকে সংগ্রহ করেছে।”

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, অ্যাডভেলী, সাইনী আর্ট, ওয়ান্ডার ভিউ, গ্লোবাল মিডিয়া ও সুপার সাইন নামের পাঁচটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার মালিক মহিউদ্দিন বাচ্চু।

বিজ্ঞাপনী সংস্থা স্কাই আর্টের মালিক ফরিদ মাহমুদ।

সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিজ্ঞাপন ঢেকে ঈদ শুভেচ্ছার ব্যানার লাগানোর বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে।”

বিলবোর্ডগুলো বছর ভিত্তিতে ভাড়া দেয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, বিজ্ঞাপন ঢেকে কিভাবে নতুন ব্যানার লাগানো হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু তার জানা নেই।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী হাকিম নাজিয়া শিরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিনা অনুমতিতে ঈদ শুভেচ্ছার ব্যানার লাগানো হয়েছে কি না, তা খোঁজ নেব। সেরকম কিছু হলে আমরা বাধা দেব।”