ঈদের আগে গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে স্থাপিত বিলবোর্ডগুলোতে শোভা পাচ্ছে মহাজোট সরকারের সাড়ে চার বছরের উন্নয়নচিত্র।
‘উন্নয়নের অঙ্গীকারের ধারাবাহিকতা দরকার’ বলে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় পাঠাতে জনগণের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়েছে এগুলোতে।
বিলবোর্ডে এই প্রচারের সমালোচনা করে বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, এতে লাভ হবে না।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের উদ্যোগেই এই বিলবোর্ডগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভাড়া নিয়ে এগুলো বসানো হয়েছে কি না- সে বিষয়ে দলের নেতাদের কোনো বক্তব্য যেমন পাওয়া যায়নি; তেমনি বিষয়টি ‘অজানা’ বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর নেতাদেরও।
একজন প্রচারণা বিশেষজ্ঞ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ধরনের প্রচারণা হিতে বিপরীত হবে। যাদের উদ্দেশ্য করে এই তথ্যগুলি প্রচার করা হয়েছে তারা এরকম দাপ্তরিক ভাষা বোঝেন না। তাছাড়া এসব বিজ্ঞাপনের নকশা অতি নিচু মানের। আকর্ষণের বদলে মানুষের বিরক্তি উদ্রেক করছে।”
“অক্ষর, ছবি ও রংয়ের ব্যবহারও চরম অপেশাদারি। সমস্যা হচ্ছে বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা বলছেন না”- নাম প্রকাশ করতে চাননি এই বিশেষজ্ঞও।
ঢাকায় সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক বিলবোর্ড রয়েছে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থা ইজারা নিয়ে বিজ্ঞাপনের জন্য এগুলো ভাড়া নিয়ে থাকে।
আওয়ামী লীগের বিজ্ঞাপনের কারণে নতুন পণ্য বাজারে ছেড়ে বিজ্ঞাপনের জন্য বিলবোর্ড ভাড়া নেয়া অনেক কোম্পানিরই মাথায় হাত পড়েছে।
প্রচার বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নতুন পণ্য বাণিজ্যিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নেপচুন অ্যাডভারটাইজিং লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের ইজারা নেয়া ৯০ ভাগ বিলবোর্ডে সরকারের উন্নয়নচিত্র বসানো হয়েছে।
“আমাদের বিজ্ঞাপনের ওপরেই তা বসিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেকে ঈদকে সামনে রেখে ভাড়া নিয়েছিল। ক্লায়েন্টরা অভিযোগ করা শুরু করেছেন। কী যে করব? আমরাও নিরুপায়,” নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, গত শুক্রবার থেকে বিলবোর্ডে সরকারের উন্নয়নের প্রচারশুরু হয়েছে।
যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিলবোর্ডে এই প্রচার চালানো হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে বলেন, “উনিই বিষয়টি ডিল করছেন।”
এই বিষয়ে কথা বলতে পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে অনেকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এসএমএস পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্ণধার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উন্নয়নের প্রচারণা তো ঈদের পরও করা যেত। এখন সবাই ঈদ উপলক্ষে পণ্য ডিসপ্লে করবে, সেটা বন্ধ হয়ে গেল।
“আচ্ছা দিল, আমাদেরকে একবার জিজ্ঞেসও করল না। আমরা তো সরকারকে ট্যাক্স দিই।”
বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোর সমিতি অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রামেন্দু মজুমদার মনে করেন, যে কোনো ধরনের প্রচার নিয়ম মেনেই হওয়া উচিত।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তবে তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে চুক্তি করে টাকা দিয়ে এটা করেছে কি না, তা আমি জানি না।”
সোমবার বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মিয়া ও এম একে আনোয়ারও বলেন একই কথা।
গত চার বছরে দেশের কোনো উন্নয়ন আওয়ামী লীগ করতে পারেনি দাবি করে রফিকুল ইসলাম বলেন, “এখন তারা বিলবোর্ড দিয়ে বলছে, সমস্ত দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে।”
এম কে আনোয়ার বলেন, “গত সাড়ে চার বছরে সরকারের অপশাসন, দুর্নীতি ও ব্যর্থতার চিত্র জনগণ দেখেছে। তারা কোনো উন্নয়ন করেনি। এখন বিলবোর্ডের মাধ্যমে উন্নয়নের ঢোল বাজাচ্ছে।”