হেফাজতের অবরোধে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঢাকা

ব্লগারদের শাস্তি ও নারীনীতি বাতিলসহ ‘বিতর্কিত’ ১৩ দফা দাবিতে সরকারকে চূড়ান্ত চাপ দিতে হেফাজত ইসলামীর অবরোধে সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাজধানী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2013, 05:40 PM
Updated : 4 May 2013, 11:52 PM

রোববার ভোরে ফজরের নামাজের পরপরই রাজধানীর প্রধান প্রবেশপথগুলোয় লাঠি হাতে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে হেফাজতকর্মীরা। তাদের ঠেকাতে বিভিন্ন স্থান ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশও।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদকরা জানান, ১৩ দফা দাবিতে হেফাজতকর্মীরা টঙ্গী ব্রিজ, যাত্রাবাড়ির কাজলা, ডেমরা, বাবুবাজার ব্রিজ, পোস্তগোলা ব্রিজ, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের আমিনবাজার ও গাবতলীতে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে। সকালে বৃষ্টির মধ্যেও তারা অবরোধ চালিয়ে যান।

যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় ভোর থেকেই সড়ক অবরোধ করে রেখেছে হেফাজতকর্মীরা। মোটর সাইকেলের মতো হালকা বাহনও তারা চলতে দিচ্ছে না। সেখানে ট্রাকে মঞ্চ বানিয়ে ১৩ দফা দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগানও দিচ্ছে হেফাজতকর্মীরা।

ডেমরা মোড়েও রয়েছে লাঠি হাতে হেফাজতকর্মীদের অবরোধ। সেখানে দেয়াল থেকে সিনেমার পোস্টার ছিড়ে ফেলে তারা।

ফজরের নামাজ শেষেই উত্তরার নর্থ টাওয়ারের সামনে থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত বাংলাদেশের পতাকা হাতে অবস্থান নেয় হেফাজতের কর্মীরা। ফলে ঢাকা ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ওই এলাকায় পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা টহল দিলেও হেফাজতকে তারা বাধা দিচ্ছে না।

ভোর থেকেই বাবুবাজার সেতু  ও পোস্তাগোলা এক নম্বর সেতুতে জড়ো হয় হেফাজত কর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ ও মাওয়া ফেরিঘাট যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়।

বাবুবাজার ব্রিজের উপর এবং দুই পাশে অবস্থান নিয়ে যানবাহন ফিরিয়ে দিচ্ছেন অবরোধকারীরা। যাত্রাবাড়ি থেকে পোস্তাগোলা সেতু পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাথর ফেলে রাস্তায় অবরোধ সৃষ্টি করে তারা।

আমিনবাজারে ব্রিজ আর গাবতলীতে হেফাজতের অবরোধের ফলে ঢাকা-আরিচা সড়কেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সকালে আমিনবাজারে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি চালালেও পড়ে সেখানে বিপুল সংখ্যক হেফাজতকর্মী  জড়ো হয়। সেখানে মাইকে নিজেদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে হেফাজতকর্মীরা। সকালে সেখানে রিকাশা আরোহী কয়েকজন নারীর সঙ্গে হেফাজতকর্মীরা দুর্ব্যবহার করেন বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

মাদ্রাসাভিত্তিক এ সংগঠনের কর্মীরা লাঠি ও পতাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, শিমরাইল ও কাচপুরে এবং গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে বলে আমাদের প্রতিনিধি জানান।

অবরোধস্থলে থাকা হেফাজতের নেতাকর্মীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে হলেও ঢাকায় সমাবেশ করার হুঁমকি দিচ্ছিলেন। প্রয়োজনে দুই-তিন দিন অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ারও কথা জানান হেফাজতকর্মীরা। অনেক স্থানে তারা অবরোধস্থল থেকে অনেকটা পথ মিছিল করে এগিয়ে আসেন।

তাদের ঢাকার কেন্দ্রে আসা ঠেকাতে বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেডও দেয় পুলিশ।

পরে ঢাকার কেন্দ্রস্থল মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি পায় হেফাজতে ইসলাম। সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পর ব্যারিকেড সরিয়ে নেয় পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরাও।

হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচি ও দুপুরে সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অবরোধস্থলের পাশে বিপুল সংখক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য টহল দিচ্ছে।

ঢাকার আকাশে চক্বর দিচ্ছে র‌্যাবের হেলিকপ্টার। নয়াবাজার, পল্টনসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জল কামানের গাড়িও প্রস্তুত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি পড়ে শুনিয়ে বলেন,  এর অধিকাংশ দাবিই পূরণ করা হয়েছে এবং বাকিগুলোও হচ্ছে। এই অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ আখ্যায়িত করে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের নেতারা অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

হেফাজত ইসলামের নেতারা বরাবরই তাদের কর্মসূচিকে ‘ধর্মীয়’ বললেও এই গোষ্ঠী রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুতর আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা হেফাজতের কঠোর সমালোচনা করেছেন। যদিও শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃশ্যত তাদের ‘অনুভূতি’র প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছেন।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ধর্মভিত্তিক এই সংগঠনটির সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলিতে সংহতি প্রকাশ করেছে। ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া।

নির্বাচনের বছরে মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির ‘রাজনৈতিক তৎপরতা’ ভোটের সাধারণ সমীকরণে প্রভাব তৈরি করতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।

বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া শনিবার সরকারকে নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়ায় হেফাজতের অবরোধ নিয়ে রাজনীতিতে কৌতুহলের পাশাপাশি উৎকণ্ঠারও সৃষ্টি হয়েছে।

হেফাজতের এসব দাবি-দাওয়াকে নারী অগ্রগতির পথে প্রাচীর হিসেবে দেখছেন দেশের প্রধান প্রধান নারী সংগঠনগুলো। ‘নারী-পুরুষের অবাধ প্রকাশ্য বিচরণ’ বন্ধের যে দাবি হেফাজত তুলেছে, তার বিরুদ্ধে ৯ মে নারী সমাবেশের ডাক দিয়েছে প্রধান প্রধান নারী সংগঠনগুলো।

বামপন্থী দলগুলো বলছে, হেফাজতের এসব দাবি দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যাবে।