চার পাকিস্তানি ও জামায়াত নেতাসহ গ্রেপ্তার ১৬

রাজধানীর কাঁঠালবাগান ও নিকুঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত নেতা ও চার পাকিস্তানিসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2013, 10:19 PM
Updated : 30 March 2013, 01:11 PM

তাদের কাছ থেকে আটটি হাতবোমা এবং প্রায় সোয়া কোটি ভারতীয় রুপির জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, এরা সবাই একটি চক্র। জাল টাকা-রুপির ব্যবসার পাশাপাশি সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল।
শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

তিনি জানান, শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ওই ১৬ জনকে। জামায়াত নেতা ডা. ফরিদ উদ্দিন আহাম্মদকে (৫৫) গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামী ছেড়ে আল্লার দল, হরকাতুল জেহাদ এবং হরকাতুল মোজাহিদিন নামের সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিলেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় কাঠাল বাগানের ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ডা. ফরিদ, আফগান ফেরত ফরিদ উদ্দিন মাসুদ (৩৫), শিবিরের সাবেক নেতা মিজানুর রহমান (৩১) এবং মাহফুজুর রহমানকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছে পাওয়া যায় নগদ প্রায় এক লাখ টাকা, ৮টি হাত বোমা, ১২টি বিভিন্ন ধরনের বই, বৈদ্যুতিক তার, তাতালসহ বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম।

গোয়েন্দা পুলিশের দাবি ফরিদ জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ওই ফ্লাটটি তিনি ভাড়া নিয়েছিলেন। পরে মিজান, মাহফুজসহ কয়েকজনের থাকার ব্যবস্থা করেন। জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে খেলাফত রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য এদেরকে বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া আফগান ফেরত ফরিদ উদ্দিন মাসুদ সম্পর্কে গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ১৯৯১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত হরকাতুল জিহাদ ইন পাকিস্তান নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে তিনি যুক্ত হন এবং আফগানিস্তানে গিয়ে যুদ্ধ করেন।

ডা. ফরিদ এবং ফরিদ উদ্দিন মাসুদ বাংলাদেশে তাদের বাহিনীকে শক্তিশালি করার জন্য আব্দুল খালিদ ওরফে আব্দুল মান্নান নামে পাকিস্তান ফেরত একজনের মাধ্যমে অস্ত্র কেনার জন্য ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন।

হরকাতুল জিহাদ, হরকাতুল মুজাহিদীনসহ যেসব জঙ্গি সংগঠনের কর্মকাণ্ড স্থবির ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, তাদের চাঙা করার চেষ্টা করছিলেন ডা. ফরিদ উদ্দিন আহমদ। তিনি অনুসারীদের কাছে ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তিনি সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিত্সাবিদ্যায় পড়াশোনা শেষ করেন। সেখানকার ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি মেডিকেল কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন। পরে ফরিদ উদ্দিন আহমদ সিলেট মহানগর জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এরপর তিনি মাদারীপুরে প্রায় এক যুগ জেলা জামায়াতের আমির ছিলেন।

ফরিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে খালিদ ওরফে মান্নান এবং সজল নামে অপর একজনকে গোয়েন্দা পুলিশের একই দল পল্টন এলাকা থেকে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারের পরপরই খালিদ অস্ত্রে কেনার ব্যাপারে টাকা নেওয়া এবং জাল রুপির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।

মনিরুল ইসলাম জানান, খলিদের তথ্যের ভিত্তিতে নীকুঞ্জ এলাকায় একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে জাল রুপি ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা, মামুনুর রশিদ তার স্ত্রী ডলি আক্তার, আবুল বাশার, রেজাউল করিম এবং রোকসানা বেগমসহ ৬জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাছে পাওয়া যায় ৬৬ লাখ ভারতীয় জাল রুপি। 

গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নিকুঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মামুন এবং মোস্তফাকে জিজ্ঞাসবাদ করা হলে তারা জানায় বংশালের একটি হোটেলে কয়েকজন পাকিস্তানি নাগরিক আছে যারা তাদের জাল রুপি আনা নেয়ার ব্যাপারে সাহায্য করে।

গোয়েন্দা দল এই তথ্য নিয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে বংশালের বায়তুস সামীর আবাসিক হোটেলে অভিযান চালায়। পরে সেখান থেকে পাকিস্তানি নাগরিক সায়িদ উদ্দিন (৫০), মো. ফারহান (২৬), রুবিনা বেগম (৪৩) এবং নারগিস আক্তার (৩৯) নামের চারজনকে গ্রেপ্তার করে।

তাদের কাছে পাওয়া যায় ৪ হাজার নগদ পাকিস্তানি রুপি, ৪শত মার্কিন ডলার, ৬৩ লাখ ভারতীয় জাল রুপি।

গ্রেপ্তার হওয়া পাকিস্তানি নাগরিকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে তারা এরই মধ্যে ৬/৭ বার ঢাকা এসেছে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে আসা এসব পাকিস্তানি নাগরিকরা জাল রুপি এনে গ্রেপ্তাকৃত বাংলাদেশিদের দিতো।      

এদিকে কাঁঠাল বাগানের ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের বাসায় গ্রেপ্তার হওয়া ডা. ফরিদের সাথে গ্রেপ্তার হওয়া মিজানুর রহমান সম্পর্কে পুলিশ জানায়, শিবিরের সাবেক ক্যাডার মিজান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। ছাত্র থাকাকালে একটি এমএলএম কোম্পানিতে চাকুরি করে প্রায় ৫০লাখ টাকা আত্মসাৎয়ের পর আত্মগোপন করে। ওই সময় সে আল্লাহ দলে যোগ দেয়।

গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, এরা সবাই একটি চক্র। জাল টাকা-রুপির ব্যবসার পাশাপাশি সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই এদের মূল লক্ষ্য। দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করাই ছিল এই চক্রের উদ্দেশ্য।”