পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের বাকি ৬১ জেলায় ওয়ার্ডভিত্তিক ভোট কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে।
প্রায় ক্ষমতাহীন এই পরিষদের নির্বাচনে সরাসরি ভোটের বিধান না থাকায় জনগণের মধ্যে তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি। দিনের প্রথম ভাগে অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম।
এ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন কেবল ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। তাদের ভোটেই প্রতিটি জেলায় একজন করে চেয়ারম্যান এবং ২০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন।
ভোটের আগের দিন আদালতের আদেশে বগুড়া জেলার চেয়ারম্যান পদসহ ২১ জেলার ৩৪টি ওয়ার্ডের ভোট স্থগিত করা হয়েছিল। বুধবার সকালে ভোট শুরুর আগে মাদারীপুরের একটি কেন্দ্রে মারামারি এবং ময়মনসিংহে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার অভিযোগ এনে দুই সদস্য পদপ্রার্থী বর্জনের ঘটনা ছাড়া সারা দেশে ভোট শেষ হয় শান্তিপূর্ণভাবে।
ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনের উপ সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতের আদেশে স্থগিত কেন্দ্রগুলো ছাড়া বাকি সব কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার তথ্য আমাদের কাছে এখনো আসেনি।”
তালতলা সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. মঈনুল হোসেন জানান, বেলা ২টায় তারা ভোট শেষ করে গণনার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ওই কেন্দ্রের ৩২ জন ভোটারের মধ্যে ২৮ জন সদস্য পদে ভোট দিয়েছেন। ঢাকার চেয়ারম্যান পদের একমাত্র প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ দল এ নির্বাচন বর্জন করায় ঢাকাসহ ২১ জেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন ভোটের আগেই। বাকি অধিকাংশ জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারাই।
ভোট প্রভাবমুক্ত রাখতে ইসির পক্ষ থেকে স্পিকারকে চিঠি দিয়ে সাংসদদের এলাকা ছাড়তে বলা হয়। জামালপুরের পুলিশ সুপারকে করা হয় প্রত্যাহার। ভোটার সংখ্যা কম হলেও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় নেওয়া হয় বড় আয়োজন।
প্রতিটি কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাহী হাকিম রাখা হয়। কোনো ভোটার মোবাইল ফোন বা কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না বলেও নিয়ম করা হয়।
ভোট বৃত্তান্ত
পদ: তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলায় হয় এই নির্বাচন। প্রতিটি জেলার সীমানা ১৫টি ওয়ার্ডে ভাগ করে প্রতি তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে করা হয় একটি সংরক্ষিত ওয়ার্ড, যার সদস্য হবেন একজন নারী। প্রতিটি জেলায় একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য এবং ৫ জন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচন করতে ভোট দেন ভোটাররা।
ভোটার: ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ভোট দেন এ নির্বাচনে। মোট ৬৩ হাজার ১৪৩ জন ভোটারের মধ্যে ৪৮ হাজার ৩৪৩ জন পুরুষ, ১৪ হাজার ৮০০ জন নারী।
প্রার্থী: চেয়ারম্যান পদে ১৪৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২ হাজার ৯৮৬ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৮০৬ জন লড়েন। সব মিলিয়ে প্রার্থী সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩৮ জন।
ভোটগ্রহণ: এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসক। আর তার সহকারী হিসেবে রয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অন্য নির্বাচন কর্মকর্তারা।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২১ জন
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা হলেন- নারায়ণঞ্জে আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরে মো. আখতারুজ্জামান, ঠাকুরগাঁওয়ে সাদেক কোরাইশী, জয়পুরহাটে আরিফুর রহমান রকেট, নাটোরে সাজেদুর রহমান খাঁন, সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, যশোরে শাহ হাদিউজ্জামান, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, ঝালকাঠিতে সরদার শাহ আলম, ভোলায় আব্দুল মোমিন টুলু, নেত্রকোনায় প্রশান্ত কুমার রায়, মুন্সীগঞ্জে মো. মহিউদ্দিন, দিনাজপুরে আজিজুল ইমাম চৌধুরী, নওগাঁয় এ কে এম ফজলে রাব্বি, ফেনীতে আজিজ আহমেদ চৌধুরী, কিশোরগঞ্জে মো. জিল্লুর রহমান, ঢাকায় মো. মাহবুবুর রহমান, হবিগঞ্জে মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, চট্টগ্রামে এম এ সালাম, টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক ও ফরিদপুরে মো. লোকমান মৃধা।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করবেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা; পরে তা পাঠানো হবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। সব জেলার একীভূত ফল বিকালেই ইসিতে পৌঁছাবে বলে আশা করছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।