প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার ১১৩তম বৈঠকে এই ঋণচুক্তির খসড়া অনুমোদন পায়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ২০১১ সাল থেকে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।
“২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। তখন উভয় সরকারের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট চুক্তি (আন্তঃরাষ্ট্রীয় ঋণ চুক্তি) স্বাক্ষরিত হয়। তখনকার ওই এমওইউ’র আলোকেই এখন চুক্তিপত্র তৈরি করা হয়েছে।”
শফিউল বলেন, এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি অ্যাটমিক এনার্জি প্ল্যান্ট তৈরি করতে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণচুক্তি করা হচ্ছে।
“গত ১৯ মে মস্কোতে বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রীর সঙ্গে রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় সভার পর মিনিটস ও ডিসকাশন স্বাক্ষর হয়। তার আলোকেই চুক্তিপত্র তৈরি করা হয়েছে।”
শফিউল বলেন, রূপপুরে দুটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে রাষ্ট্রের মোট ঋণের পরিমাণ ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রকল্প নির্মাণ ব্যয়ের ১০ শতাংশ অগ্রিম হিসেবে বাংলাদেশ সরকার রাশিয়ার ফেডারেশনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেবে। ঋণের বাস্তবায়নকাল ২০১৭ থেকে ২০২৪।
শফিউল বলেন, “মোট ব্যয় ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন। বাংলাদেশ সরকার ও রাশিয়ার অর্থ মিলিয়ে এই ব্যয় নির্বাহ করা হবে।”
কবে নাগাদ এই ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে এমন প্রশ্নে শফিউল বলেন, “সব রেডি, আশা করছি জুলাই বা অগাস্টে এই চুক্তি হবে। রাশিয়ার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি এখানে (বাংলাদেশ) আসতে পারে বা আমাদের প্রতিনিধি দল ওখানে (রাশিয়া) যেতে পারে।”
পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর চুক্তি হয় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের।
সে অনুযায়ী, ২৪০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হবে; যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)।
৫০ বছর আয়ুর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২১ সালের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর ২০১৪ সালের অগাস্টে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠন করতে সংসদে বিল পাস হয়।
আইন অনুযায়ী, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশনের হাতে। আর কেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্ব পাবে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ’।
১৯৬১ সালে পরমাণু কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার পর ১৯৬৩ সালে প্রস্তাবিত ১২টি এলাকার মধ্য থেকে বেছে নেওয়া হয় রূপপুরকে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রায় ৫০ বছর আগের নেওয়া সেই উদ্যোগ সক্রিয় করে তোলা হয়। দ্রুত পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে সংসদে প্রস্তাব পাস করে গঠন করা হয় একটি জাতীয় কমিটি।
ওই বছরই রাশিয়ার সঙ্গে একটি কাঠামো চুক্তি করে সরকার এবং ২০১১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ দুই দেশ চুক্তি করে। প্রস্তাবিত এ কেন্দ্রের জন্য আগেই অধিগ্রহণ করা হয় ২৬২ একর জমি।
অ্যাটমস্ট্রয়ের নকশায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত ‘সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি’ দিয়ে রূপপুরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এর নিরাপত্তা নিয়ে ‘দুশ্চিন্তার কিছু’ থাকবে না। চুক্তি অনুযায়ী, এই কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়াই ফেরত নিয়ে যাবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের জাতীয় কমিটির তৃতীয় বৈঠক হয়েছিল ২০১৩ সালের ৭ অগাস্ট।