তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের এই যুগে মধ্যপ্রাচ্যে ঘাঁটি গেঁড়ে বসা আইএসের উপস্থিতি এখন ‘সবখানে’ বলেও মন্তব্য এসেছে তার কাছ থেকে।
বার্নিকাট বলেন, “আমি যদি আমার কম্পিউটার খুলে বসি, আইএসের কেউ আমাকে পেয়ে যেতে পারে। অথবা আইএসআইএলের কাউকে আমি পেতে পারি, যার মাধ্যমে আমি তাদের (আইএস সদস্য) সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি।
“তারা তখন আমার জীবনে বাস্তব সত্য; তারা আমার জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে বা আমার জীবন নিয়েও নিতে পারে।”
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ওয়াশিংটনে হতে যাওয়া দ্বিপক্ষীয় অংশীদারি সংলাপ নিয়ে বৃহস্পতিবার একদল সাংবাদিকের সঙ্গে মতবিনিময়ে এই মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।
গত দেড় বছরে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তা ইন্টারনেটে এলেও বাংলাদেশ সরকার এই আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর বাংলাদেশে উপস্থিতি নাকচ করে আসছে।
তেমনি এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে এক বন্দুকধারীর গুলিতে ৪৯ জন প্রাণ হারানোর পর আইএস ওই হামলাকারীকে নিজেদের যোদ্ধা স্বীকৃতি দিয়ে ইন্টারনেটে বার্তা দেয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ওই ব্যক্তির আইএস সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানায়।
বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ড এবং আইসের দায় স্বীকার নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, “তারা (আইএস) সর্বত্র। তারা সব জায়গায় পৌঁছে যেতে পেরেছে...তাই এটা আমাদের সবার সমস্যা।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দৃঢ় ঐক্যের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উগ্রপন্থিদের হত্যার ঘটনাসহ দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছে।
বার্নিকাট কারও নাম না নিয়ে বলেন, “যদি কেউ বলে যে একে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন নেই, সেই ব্যক্তির বহুজাতিক সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।
“এমনকি আমরা... যুক্তরাষ্ট্র, বলতে পারি না যে আমাদের বাংলাদেশকে প্রয়োজন নেই বা আমাদের রাশিয়াকে প্রয়োজন নেই।”
সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা একটি ‘সমন্বিত দায়িত্ব’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে হতাহতের ঘটনায় ‘সমব্যথী হয়ে’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে শোকবার্তা পাঠানোয় বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন বার্নিকাট।
“প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর চিঠি আমাদেরকে স্পর্শ করেছে। আমাদের সমব্যথী হওয়া দরকার।”
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানের প্রশংসা করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, “তিনি (শেখ হাসিনা) যথার্থই বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদীদের কোনো দেশ নেই এবং তাদের কোনো ধর্ম নেই’।”
আগামী ২৩ ও ২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পঞ্চম বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারি সংলাপ হতে যাচ্ছে।
অরল্যান্ডো তাণ্ডবের পর হতে যাওয়া এই সংলাপে নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট।
বাংলাদেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসী দমনে পুলিশের চলমান সাঁড়াশি অভিযানও সংলাপে আলোচনায় উঠবে বলে জানান তিনি।
এই অভিযান নিয়ে একদিন আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে কথা বলেন বার্নিকাট।
এই সপ্তাহব্যাপী এই অভিযানে ইতোমধ্যে ১১ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে নিরাপরাধ মানুষও রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির অভিযোগ, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাই এই অভিযানের লক্ষ্য।
বার্নিকাট বলেন, “আমাদের উদ্বেগটা এখানে যে এক্ষেত্রে তা (অভিযান) স্বচ্ছতার সঙ্গে হচ্ছে কি না? আমরা আহ্বান জানাব, এক্ষেত্রে যেন স্বচ্ছতা রক্ষা করা হয়।”
এক্ষেত্রে মানবাধিকারের ব্যত্যয় যেন না ঘটে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশা করেন রাষ্ট্রদূত।