‘অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ-চীন’

জনগণের উন্নয়নের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা উপর নির্ভর করে বাংলাদেশ ও চীন এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2015, 06:44 PM
Updated : 10 Oct 2015, 06:44 PM

শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও চীন উভয়ই অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা অর্থাৎ আমাদের জনগণের জন্য উন্নত জীবনের জন্য কাজ করছি। একই লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছি। এই প্রক্রিয়াতেই একে অন্যকে সহযোগিতা করছি।”

গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৬৬তম বার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত।

বাংলাদেশ-চীনের গত ৪০ বছরের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় তিনি বলেন, “উভয় দেশই একে অপরকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ কারণে উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক দেশকে অন্য দেশের প্রয়োজন।

“চীন শুধু নিজে বাঁচতে ও উন্নয়ন করতে পারবে না। কারণ আমাদের বৈশ্বিক অনেক বিষয় রয়েছে। এজন্য আমাদের পরস্পরের সহযোগিতা প্রয়োজন।”

নিজের দেশের উন্নয়ন নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা ৬৬ বছরে অনেক এগিয়েছি। এই উন্নয়ন বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় ভিন্নতর। কেননা চীন গড়ে উঠেছে এমন এক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাতে ৩৫ মিলিয়ন লোকের প্রাণহানি হয়েছিল। যেটার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতি ছিল ৫০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার।

“সেখান থেকে শুরু করে ১৯৫২ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ১৮ ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে কম। বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ৩৯১ গুণ বেড়েছে, মোর দ্যান ৭৩০০ ডলার।”

তিনি আরও বলেন, “চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসাবে আমি এই উন্নয়নের জন্য গর্বিত। এটা প্রমাণ করে আমরা সঠিক ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছি। চীনা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সমাজতন্ত্র নিয়ে এগিয়েছি। এখন আমরা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের উন্নয়ন এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছি।”

এ অঞ্চলে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডোর তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে বলে মন্তব্য করেন চীনা রাষ্ট্রদূত।

প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে চীনের নীতির কথা তুলে ধরে মা মিং কিয়াং বলেন, পারস্পরিক স্বার্থে সমতা ও সহযোগিতা, দেশীয় সীমানার অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, প্রতিবেশীদের প্রতি আগ্রাসন নয়, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পারস্পরিক হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাস করে তার দেশ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, “গণপ্রজাতন্ত্রী চীন উন্নয়নের সর্বনিম্ন জায়গা থেকে এখন সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করছে। এর অর্থনীতি এখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো তখনকার পরাশক্তির চেয়েও বড় আকারের।”

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক সব সময় এক রকম থাকে না। তবে জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক স্থায়ী হতে পারে। যেভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক হাজার হাজার বছর ধরে চলছে।”

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের ক্ষেত্রে চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের বিভিন্ন পরিকল্পনার প্রশংসা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, “উন্নয়নের ঐতিহাসিক সম্পর্কের দিক বিবেচনায় সিল্ক রোড এলাকার সমন্বয়ের স্বপ্নের কথা তিনি বলছেন। আমি মনে করি, এটা শুধু চীনের নয়, গোটা এশিয়ার স্বপ্ন।

“বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এগিয়েছে অবিশ্বাস্য ও যাদুকরিভাবে, যদিও এটা বাস্তব। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার স্বার্থে চীনের জন্য সর্বদিকের কানেকটিভিটি জোরদার করতে হবে।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, চীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং রাখছে।

“বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে চীনের সঙ্গ অনেকভাবে সম্পর্কিত। গণতান্ত্রিক ও সার্বভৌমত্বের জায়গায়ও তারা ভূমিকা রাখতে পারে। আমি রাষ্ট্রদূতের প্রতি আহ্বান জানাব, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের ক্ষেত্রেও যাতে চীন ভূমিকা রাখে।”

বিএনপি নেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বলেন, যখন বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না, তখন থেকেই সেচপাম্প ও কৃষি যন্ত্রপাতির কারণে বাংলাদেশের গ্রাম পর্যায়ের মানুষও চীনের সম্পর্কে জানে।

“চীন হচ্ছে বাংলাদেশের হাউজহোল্ড নেইম।”

সিপিবির সভাপতিমণ্ডলির সদস্য হায়দার আকবর খান রনো বলেন, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়ে চীনের যে অবস্থান ছিল সেটা আমরা মেনে নিতে পারি না। তবুও তাদের সঙ্গে যখন সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তখন থেকেই আমরা তাদের আন্তরিক বন্ধু হিসাবে পেয়েছি।”

তিনি বলেন, “সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় চীন যুগান্তকারী অবস্থান তৈরি করেছে। অন্যদিকে সারা বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে চীনসহ ব্রিকস দেশগুলো পাল্টা অবস্থান ঘোষণা করতে পেরেছে।”

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, ডেইলি স্টারের স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল আনাম খান, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম, আয়োজক সংগঠন সাংস্কৃতিক একাডেমির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বেপারী প্রমুখ বক্তব্য দেন।