আবার ছাড় পাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তর না হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবারও ছাড় পেতে যাচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2015, 10:32 AM
Updated : 13 August 2015, 11:14 AM

আগে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ‘অবশ্যই’ নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও তা থেকে সরে এসে এখন ‘কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোন অবস্থায় রয়েছে’ তা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানাতে বলেছে সরকার।

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মিলনায়তনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক সভায় সবার বক্তব্য শুনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোন পর্যায়ে আছে তা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানাবেন। বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেব।”

যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সাত বছর পার হওয়ার পরও নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়নি, তাদের এ বছরের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ক্যাম্পাসে না গেলে সাময়িক সনদ বাতিল এবং নতুন শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছিল গত বছর ২৬ জানুয়ারি জারি করা ওই নির্দেশনায়।

মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন নিয়ে মোট ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। সাত বছর ধরে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে এমন ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭টি সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেছে; ২৭টি আংশিক স্থানান্তর করেছে।

বৃহস্পতিবার মঞ্জুরি কমিশনের সভায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং উপাচার্যরা ক্যাম্পাস স্থানান্তরের জন্য আরও সময় দেওয়ার দাবি জানান। সেইসঙ্গে বাজেটে আরোপিত সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন তারা।

সবার মতামত শুনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকিতে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে বছরে এক লাখ করে টাকা নেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করতে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন তিনি।

এর আগে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক একর করে জমি দেওয়ার দাবি জানান।

ইউজিসির আর্থিক এবং আইনি ক্ষমতা বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিয়ে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, “ইউজিসি যেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের উপর আরও তদারকি করতে পারে।”

ঢাকার উপকণ্ঠে একটি খেলার মাঠ করে তা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা করে না, তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন ফরাসউদ্দিন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ‘লাভ করার সুযোগ নেই’ মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, “শিক্ষাকে পণ্য করার কোনো উপায় নেই।”

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাকরি বিধিমালা না থাকায় যখন খুশি নিয়োগ ও চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অধ্যাপক মান্নান জানান, ১৫ থেকে ২০ বছরের পুরানো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ না দিয়েই কার্যক্রম চালাচ্ছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অডিট রিপোর্টও জমা দেয় না।

ক্ষমতা না থাকায় যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অনিয়ম করছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ইউজিসি ব্যবস্থা নিতে পারে না বলেও কমিশনের চেয়ারম্যান জানান।