“এটি হবে একটি বড় তহবিল। রপ্তানিকারকরা কম সুদে দীর্ঘমেয়াদে এখান থেকে ঋণ নিতে পারবেন। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে রপ্তানি আয়ে।”
ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ বার্ষিক সভা শেষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান।
সোমবার দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার মজুদ ছিল ২২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে রিজার্ভে ছিল ১৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের উন্নয়নে একটি তহবিল গঠন করতে বিশ্ব ব্যাংক সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে। আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে এ তহবিল চালু হবে।”
তিনি জানান, এই তহবিল নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
“আমরা প্রত্যাশা করছি, বিশ্ব ব্যাংক ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মতো দেবে। প্রাথমিকভাবে সেটা দিয়েই এই তহবিল গঠন করা হবে। এরপর তা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে।”
রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক থাকবে না জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, “এটি হবে একটি বিশেষ রপ্তানি তহবিল। এখান থেকে রপ্তানিনির্ভর যে কোনো খাতে ঋণ দেওয়া যাবে। ঋণের সীমাও বেশি থাকবে।”
বর্তমানে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ থেকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি খাতের রপ্তানিকারকরাই কেবল ঋণ পান। এই ঋণের মেয়াদও কম। নতুন তহবিল থেকে রপ্তানিকারকরা দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পাবেন বলে ছাইদুর রহমান জানান।
তিনিও মনে করছেন, নতুন এই তহবিল চালু হলে দেশের রপ্তানি আয়ে তার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে।
গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে রপ্তানি বাবদে দেশে এসেছে ৩০ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি।
আর চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ সম্মেলনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে গভর্নর আতিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূল বৈঠকগুলোতে মাননীয় অর্থমন্ত্রী নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর বাইরে অনেকগুলো সাইড লাইন বৈঠক হয়েছে।এর প্রায় সবগুলোতেই আমি অংশ নিয়েছি। সব বৈঠকেই বার বার উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম।
“ফিউচার অব ফাইন্যান্স বিষয়ক এক সেশনে আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন ল্যাগার্ড তো সরাসরিই বলেছেন, বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে ভালো করেছে। মন্দার মধ্যেও ৬ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রেখেছে। মোবাইল ব্যাংকিংসহ ফাইন্যানশিয়াল ইনক্লুশনে ভালো করায় আমাদের প্রশংসা করেছেন তিনি।”
বাংলাদেশের এই ইতিবাচক ভাবমূর্তির কারণেই বিশ্ব ব্যাংক রপ্তানি খাতের বিকাশে সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে বলে মনে করেন গভর্নর।
অর্থমন্ত্রী গভর্নরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনার রিজার্ভতো অনেক হয়ে গেল। আমাকে সবাই বলে কেন রিজার্ভ বিনিয়োগে নিয়ে আসা হচ্ছে না।”
জবাবে আতিউর বলেন, রিজার্ভ বিনিয়োগে যাচ্ছে না- এ কথা ঠিক নয়। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) মাধ্যমে রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগ হচ্ছে।
গভর্নর জানান, ইডিএফ এর আকার ১ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। ঋণের সীমা ১২ লাখ ডলার থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ লাখ ডলার।
বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ এবার কী পেল- এমন প্রশ্নে আতিউর বলেন, “আমাদের অর্থনীতির সবগুলো সূচকই এখন ইতিবাচক। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি…। এ বিষয়টিই আমরা তুলে ধরেছি।
“আর সবচেয়ে বড় পাওয়া যেটা, সেটা হলো- বিশ্বমন্দাসহ নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও আমরা আমাদের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা যে অব্যাহত রেখেছি সেটা বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছি। সবাই এখন বাংলাদেশের প্রশংসা করে। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।”
ওয়াশিংটন ডিসিতে ১০ থেকে ১৩ অক্টোবর বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের এই বার্ষিক সভা হয়। সংস্থা দুটির পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভা হবে ২০১৫ সালে, পেরুর রাজধানী লিমায়।