‘বড় প্রকল্পে’ বিশ্ব ব্যাংককে চান মুহিত

পদ্মা সেতুর ‘তিক্ততা ভুলে’ বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের বড় প্রকল্পগুলোতে চীন ও জাপানের মতোই বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আবদুর রহিম হারমাছি ওয়াশিংটন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2014, 04:55 AM
Updated : 14 Oct 2014, 06:57 PM

বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ এর বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অর্থমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বড় ধরনের বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। এখন যারা আমাদের এখানে বিনিয়োগ করতে আসছে তারা বড় আকারে আসছে। জাপান ও চীন কয়েকটি বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। অনেক তিক্ততার পর আমরা পদ্মা সেতুর কাজ নিজেদের অর্থে শুরু করেছি। এ ধরনের অনেক বড় প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংক বিনিয়োগ করবে বলে আমরা আশা করছি।”

ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ এর তিন দিনের বার্ষিক সম্মেলন রোববার শেষ হয়। শেষ দিনে নীতিনির্ধারণী কোনো বৈঠক না থাকলেও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশের নাম এসেছে বারবার।

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্বের সামনে তুলে ধরতেই এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম সেমিনারের শুরুতেই নিজের আসন থেকে উঠে এসে এ সাফল্যের জন্য অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।

সেমিনার শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “নারীর ক্ষমতায়নে বাংলদেশের অগ্রগতি ইউরোপের কয়েকটি উন্নত দেশের চেয়েও ভাল। ৩০ বছর আগে আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম তখন আমাদের অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ৭ শতাংশ। সেটা এখন বেড়ে ৩৬ শতাংশ হয়েছে।”

মুহিত বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করছেন, যার ৯০ শতাংশই নারী। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বড় সাফল্য পেয়েছে।

“সাফল্যের স্বীকৃতি হিসাবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাউথ সাউথ পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন।”

এ সাফল্যের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে জানান বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের সম্মেলনে যোগ দিতে আসা বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান মুহিত।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাংক আরও বেশি সহযোগিতায় আগ্রহী।

“আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। সে কারণে গত অর্থবছরে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ ছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগীরা। এর মধ্যে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারই বিশ্ব ব্যাংকের।”

বিশ্ব ব্যাংকের বর্তমান কান্ট্রি অ্যাসিসট্যান্স স্ট্র্যাটেজিতে (২০১১-১৪) ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ-সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। আগামীতে তা বেড়ে ৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করেন মুহিত।

তিনি বলেন, “এই তথ্যই প্রমাণ করে যে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন ‘না’ করে দেওয়ার পরও তাদের অর্থায়নে আমাদের অন্যান্য প্রকল্পে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। উল্টো আগের থেকে সহায়তা আরও বেড়েছে।”

মুহিত বলেন, পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে যে ‘ঝামেলা’ হয়েছিল তা সরকার ভুলে যেতে চায়।

“এটা একটা ডেড ইস্যু। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে বিশ্ব ব্যাংক আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী। আমরা এখন বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ চাই। আশা করছি তারা ইতিবাচক সাড়া দেবে।”

এবারের বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ কী পেল- এমন প্রশ্নে মুহিত বলেন, “সবচেয়ে বড় পাওয়া যেটা সেটা হলো- বিশ্বমন্দাসহ নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও আমরা আমাদের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা যে অব্যাহত রেখেছি সেটা বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছি। সবাই এখন বাংলাদেশের প্রশংসা করে। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।”

বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভা হবে ২০১৫ সালে, পেরুর রাজধানী লিমায়।