সমগ্র বাংলাদেশ

স্নাতকোত্তর প্রতিবন্ধী শাহিদার স্বপ্ন পূরণে উদ্ভাবক মিজান

Byবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

নানা প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে সমাজ উন্নয়নে বিভিন্ন সেবামূলক কাজকর্মের জন্য একাধিকবার 'জয়িতা' সম্মাননা পেলেও শাহিদা বিশেষ কোটায় কোনো চাকরি পাননি।

শাহিদা খাতুন (৩০) যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া গোপীনাথপুর গ্রামের রফি উদ্দিনের মেয়ে। জন্মগতভাবেই তার দুটি পা ও একটি হাত নেই। শুধু বাম হাত দিয়েই তার সব কাজ করতে হয়।

শাহিদা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা ছয় ভাই-বোন। তাদের মধ্যে তিনি চার নম্বর। তার বাবা মুদি দোকানি।

“প্রতিবন্ধী হিসেবে নিজেকে সমাজের বোঝা করে বাঁচতে চাইনি বলে লেখাপড়া শুরু করি। 'প্রতিবন্ধী ভাতা' ছাড়া সরকারি বেসরকারি কোনো সহায়তা পাইনি। তাপরও কঠিন প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে দেখিয়ে দিয়েছি আমরাও পারি।”

তিনি যশোর সরকারি এমএম কলেজ থেকে ২০১৫ সালে এমএ পাশ করেছেন। 

শাহিদার বাবা রফিউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শাহিদা ছোট বেলায় সবসময় হতাশ থাকত। তার কোনো খেলার সঙ্গী ছিল না। শুধু বিকলাঙ্গ (প্রতিবন্ধী) হওয়ায় অন্য বাচ্চারা তার কাছ থেকে দূরে থাকত। সে এক নিঃসঙ্গ জীবন অতিবাহিত করত।

তখন সে মনস্থির করল এই জীবন যখন অন্য জীবনের মতো চলবে না তখন এই জীবনকে অন্যভাবে গড়তে হবে; তখন সে লেখাপড়া শুরু করল, বলেন তিনি।

"যেহেতু সে নিজে চলাফেরা করতে পারে না তাই উদ্ভাবক মিজান তাকে একটা হুইল চেয়ার দেওয়ায় এখন সে মোটামুটি চলাফেরা করতে পারে।"

শাহিদা বলেন, ২০১৫ সালে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বেকার জীবনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে শিখেছি হস্তশিল্প ও কুঠির শিল্পের নানান কাজ। কিন্তু কোনো সুযোগ সুবিধা, এমনকি সরকারি কোটায় চাকরির আশা থাকলেও তা জোটেনি। বয়সসীমাও পার হতে আর মাত্র একটি বছর বাকি তাই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছি।”

নিজ গ্রামে একটি 'প্রতিবন্ধী স্কুল' গড়ে তুলতে সহযোগিতা চেয়েছিলেন সমাজের বিত্তশালী মানুষের কাছে; কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।

সবশেষে শার্শার মিজানুর রহমান প্রতিবন্ধী স্কুল গড়ার উদ্যোগ নিয়ে প্রাথমিক কাজটি শেষ করেছেন বলে জানান শাহিদা।

মিজানুর রহমান বলেন, “শাহিদা একজন প্রতিবন্ধী হলেও একটি মাত্র হাতে ভর করে লেখাপড়ার সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছে। চাকরি-বাকরি না পেয়ে যখন সে হতাশ হয়ে পড়ে তখন এটা আমার নজরে আসে। তার স্কুল তৈরির কথা আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করলে অনেকেই সহায়তা দিতে চায়। সবার সহায়তায় কাজটি আমি এগিয়ে নিয়েছি।

"শাহিদার স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন যারা বাস্তবায়ন করতে অর্থায়ন করেছেন তাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। বাঁশ খুঁটি টিন দিয়ে ঘরটি তৈরি করা হয়েছে।"

শাহিদার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই স্কুলে শুধু প্রতিবন্ধী শিশুরাই নয়, বয়স্ক ও বিধবা নারীদেরও শিক্ষার ব্যবস্থা হবে। শিক্ষিত প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের শতভাগ সুযোগ থাকবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি এখানে প্রতিবন্ধীরা হস্তশিল্প ও কুঠির শিল্পের নানান কাজ শিখে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখবে।

দেশীয় প্রযুক্তিতে নানা কিছু উদ্ভাবন করে যশোরের মোটরসাইকেল মেকানিক মিজানুর রহমান ইতিমধ্যে দেশের মানুষের দৃষ্টি কেড়েছেন। ‘অ্যাম্বুলেন্স ভেহিকল উইথ লোকাল টেকনোলজি’ নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুদান পেয়েছেন।

SCROLL FOR NEXT