লাইফস্টাইল

এক দিনে বাঘা ও পুঠিয়া

Byবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
পুঠিয়া রাজবাড়ীতে শিব মন্দির। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

এছাড়া এ সময়ে বাঘার আম বাগানগুলোও ফলে ভরপুর। রাজশাহী থেকে এক দিনেই বেড়িয়ে আসা যায়।

বাঘা

রাজশাহী থেকে বাঘার দূরত্ব প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার। বাঘার সবজয়গাতেই আছে আমের বাগান। আম বাগান দেখতে চলে যেতে পারেন ঐতিহাসিক বাঘা মসজিদে। প্রাচীন এ মসজিদ ইট দিয়ে তৈরি। মূল মসজিদের চারপাশে চারটি ও মাঝখানে দুই সারিতে পাঁচটি করে মোট দশটি গম্বুজ আছে। মসজিদের পূর্বপাশে পাঁচটি দরজা আছে। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের চারটি দরজাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

প্রায় ২৩.১৬ মি দৈর্ঘ্য এবং ১২.৮০ মিটার প্রস্থের এই মসজিদ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ছাদ ধ্বংস হয়ে যায়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ পরে গম্বুজসহ ছাদটি পুনঃনির্মাণ করেন। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে প্রচুর পোড়া মাটিরফলক। মসজিদের ভেতরে উত্তর-পশ্চিম কোণে একটু উঁচুতে নির্মিত একটি বিশেষ নামাজ কক্ষ আছে। এটি নিয়ে মতবিরোধ আছে। অনেকে মনে করেন এটি মহিলাদের নামাজের জায়গা ছিল। আবার অনেকের মতে কক্ষটি শুধু সুলতানের প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত গভর্নরের জন্যই সংরক্ষিত ছিল।

বর্তমানে করাচিতে সংরক্ষিত মসজিদের প্রধান প্রবেশ পথের ওপরের শিলালিপি অনুযায়ি সুলতান নসরত শাহ মসজিদটি ১৫২৩ সালে নির্মাণ করেন। মসজিদের পাশেই আছে একটি কবরস্থান। বেশ কয়েকজন বুজুর্গ ব্যক্তি শায়িত আছেন এখানে। জনশ্রুতি আছে হযরত শাহ দৌলা দানেশ মন্দ (র.) পাঁচজন সঙ্গীসহ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাগদাদ থেকে বাঘায় আসেন খ্রিস্টীয় ১৫০৫ সালে। সুলতান নসরত শাহও তার ভক্ত ছিলেন বলে যানা যায়। শাহ দৌলা এ অঞ্চলে বাঘের পিঠে চড়ে বেড়াতেন বলে জায়গাটির নাম বাঘা, এ কথা প্রচলিত আছে লোকমুখে।

বাঘা মসজিদ, রাজশাহী। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

বাঘা মসজিদ, রাজশাহী। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

বাঘা মসজিদের পূর্ব পাশে আছে বিশাল আকৃতির একটি দীঘি।

রাজশাহী থেকে বাঘা যাওয়ার সহজ উপায় হল বাস। রাজশাহী সদর বাস টার্মিনাল থেকে বাঘার বাস ছাড়ে। ভাড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। যাওয়ার পাথে বানেশ্বর আম হাট দেখে যেতে পারেন। রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে বানেশ্বরে।

পুঠিয়া

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত পুঠিয়া রাজবাড়ি। এ প্রাসাদ ঘিরে চারপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি নজরকাড়া মন্দির। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক থেকে সামান্য দক্ষিণে পুঠিয়া রাজবাড়ীর প্রবেশপথ। এখানে পুকুর পাড়ে প্রথমেই আছে বিশাল আকারের শিব মন্দির। পুঠিয়ার রানি ভুবন মোহিনী দেবী ১৮২৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রতিদিকে ৬৫ ফুট দীর্ঘ শিব মন্দিরটি একটি উঁচু ভীতের উপরে নির্মিত এবং এর চার কোণায় চারটি ও কেন্দ্রে একটি রত্ন আছে।

মন্দিরের দোতলায় একটি মাত্র কক্ষ, যার চারপাশে দুই স্তরের বারান্দা বিদ্যমান। মূল কক্ষের ভেতরে আছে কষ্ঠি পাথরের শিব লিঙ্গ। পুরো মন্দিরের দেয়াল পৌরণিক কাহিনি চিত্র খচিত। এশিয়ার অন্যতম বড় শিব মন্দির বলা হয় পুঠিয়ার এ মন্দিরকে। এর লাগোয়া পূর্ব পাশে গোল গম্বুজ আকৃতির আরেকটি ছোট মন্দির আছে।  

শিব মন্দির ছাড়িয়ে একটু দক্ষিণে গেলেই চোখে পড়বে চারতলা বিশিষ্ট দোলমন্দির। দোলমঞ্চের আকারে মন্দিরের ধাপে ধাপে ওপরে উঠে গেছে। চতুর্থ তলার ওপরে আছে গম্বুজাকৃতির চূড়া। প্রত্যেক তলার চারপাশে আছে টানা বারান্দা। এর আনুমানিক নির্মাণকাল ঊনবিংশ শতাব্দির শেষ দশকে, নির্মাণ করেছিলেন পুঠিয়ার আরেক রাণী হেমন্ত কুমারী দেবী।

রাজশাহীর বাঘার আম বাগান। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

রাজশাহীর বাঘার আম বাগান। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

পুঠিয়া রাজবাড়ি, রাজশাহী। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

পুঠিয়া রাজবাড়ি, রাজশাহী। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

দোলমঞ্চের সামনের মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিশাল প্রাসাদটিই পুঠিয়া রাজবাড়ি। রানি হেমন্তকুমারী দেবী তাঁর শ্বাশুড়ি মহারানি শরৎসুন্দরী দেবীর সম্মানার্থে ১৮৯৫ সালে নির্মাণ করেন এ রাজবাড়ি। ভবনের পূর্ব পাশে আছে রানি পুকুর। রাজবাড়ির সম্ভ্রান্ত মহিলাদের গোসলের জন্য রানি পুকুরে আছে দেয়াল ঘেরা সান বাঁধানো ঘাট।

পুঠিয়া রাজবাড়ির প্রাচীরের ভেতরে পোড়ামাটির অলঙ্করণে ঢাকা গোবিন্দ মন্দির। বর্গাকারে নির্মিত এ মন্দিরের প্রত্যেক পাশের দৈর্ঘ্য ১৪.৬ মিটার। কেন্দ্রীয় কক্ষ ছাড়াও মন্দিরের চারপাশে বার্গাকার চারটি কক্ষ আছে।

এই মন্দির আড়াইশ বছরের পুরানো বলে প্রচলিত থাকলেও এর গায়ে চিত্র ফলক দেখে ধারণা করা হয় যে এটি ঊনবিংশ শতাব্দিতে নির্মিত। এ মন্দিরের দক্ষিণ পাশে প্রাচীরের বাইরে অলঙ্করণ সমৃদ্ধ ছোট আরেকটি মন্দির রয়েছে।

পুঠিয়া রাজবাড়ির পশ্চিম পাশে দিঘি। তার পশ্চিম তীরেই রয়েছে পূর্বমূখী বড় আহ্নিক মন্দির। কারুকার্য মণ্ডিত এ মন্দিরের নির্মাণ শৈলী বেশ আকর্ষণীয়।

বড় আহ্নিক মন্দিরের পাশে দক্ষিণমূখী অবস্থানে আছে গোপাল মন্দির। ১৬.৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.৪৭ মিটার প্রস্থের এ মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৮ মিটার। রাজশাহী থেকে বাসে সহজেই যাওয়া যায় পুঠিয়া। রাজশাহী থেকে খুব সকালে বেড়িয়ে দুপুর পর্যন্ত বেড়াতে পারেন বাঘায়।

পুঠিয়া রাজবাড়ীর রাণীপুকুর। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

পুঠিয়া রাজবাড়ীর রাণীপুকুর। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

পুঠিয়া রাজবাড়ীর বড় আহ্ণিক মন্দির ও গোপাল মন্দির। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

পুঠিয়া রাজবাড়ীর বড় আহ্ণিক মন্দির ও গোপাল মন্দির। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

দুপুরের পর চলে যেতে পারেন পুঠিয়া। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেড়িয়ে রাজশাহী ফিরতে পারেন।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে রাজশাহী যাওয়া যায়। ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে দেশ ট্রাভেলস ও গ্রীন লাইন পরিবহনের এসি বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা।

এছাড়া ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে শ্যমলি পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, বাবলু এন্টারপ্রাইজ প্রভৃতি পরিবহন প্রতিষ্ঠানের বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। ঢাকার কমলাপুর থেকে রোববার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেস এবং মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১১টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেস। ভাড়া শোভন চেয়ার সাড়ে ৩শ’ টাকা, স্নিগ্ধা ৬০৪ টাকা, এসি সিট ৭২৫ টাকা, এসি বার্থ ১০৮১ টাকা।

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ (সর্বনিম্ন ভাড়া ৩ হাজার ৩শ’ টাকা), ইউনাইটেড এয়ারের (সর্বনিম্ন ভাড়া ৪ হাজার ২৫০ টাকা) বিমান চলাচল করে রাজশাহীতে।

কোথায় থাকবেন

পুঠিয়া রাজবাড়ীর গোবিন্দ মন্দির। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

পুঠিয়া রাজবাড়ীর গোবিন্দ মন্দির। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

এ ভ্রমণে থাকতে হবে রাজশাহীতে। শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। চিড়িয়াখানার পাশে আছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল (০৭২১-৭৭৫২৩৭)। ঢাকার পর্যটন করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় (০২-৮৮৩৩২২৯, ৮৮৩৪৬০০) থেকেও এ হোটেলের বুকিং দেওয়া যায়। এ হোটেলের এসি একক কক্ষ ১ হাজার ৯শ’ টাকা, এসি দ্বৈত কক্ষ ২ হাজার ৬শ’ টাকা, সুইট ৪ হাজার ৬শ’ টাকা।

রাজশাহী শহরের অন্যান্য হোটেল হলো গণকপাড়ায় হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৭৬১৮৮), শিরোইলে হোটেল হকস্‌ ইন্‌ (০৭২১-৮১০৪২০), সাহেব বাজারে হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৭১১০০), বিন্দুর মোড়ে হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৮১১৪৭০), মালোপাড়ায় হোটেল শুকরান (০৭২১-৭৭১৮১৭) ইত্যাদি। এসব হোটেলে ৫শ’ থেকে ৩ হাজার ৫শ’ টাকায় কক্ষ আছে।

SCROLL FOR NEXT