আদমপুরের বনে

দুই টিলার মাঝখান দিয়ে চলে গেছে পায়ে হাঁটাপথ। এই জঙ্গলের সৌন্দর্য দেখতে চাইলে যেতে হবে কমলগঞ্জ।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2015, 07:29 AM
Updated : 15 June 2015, 10:06 AM

সিলেট বন বিভাগের অধীন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এ বনেরই একটি বিটের নাম আদমপুর। সীমান্ত ঘেঁষা এ জঙ্গলের পরেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য।

স্থানীয়রা এ বনকে আদমপুর নামে কমই চেনেন। তাদের কাছে এটি কাউয়ার গলা বন নামেই বেশি পরিচিত। রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চারটি বিটের মধ্যে আদমপুরই সবচেয়ে বড়। আয়তনে ১৩ হাজার ৮০ একর। বনটি চলে গেছে একেবারে ভারত সিমান্ত পর্যন্ত।

বেশিরভাগই উঁচুনিচু টিলা জুড়ে আদমপুরের জঙ্গল। বড় বড় গাছের নিচ দিয়ে চলে গেছে হাঁটাপথ। কোথাও কোথাও দুই টিলার মাঝখান থেকেই চলে গেছে পথ। চলতে চলতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বানর। আরও আছে মুখপোড়া হনুমান, চশমা হনুমান, উল্লুক, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ ইত্যাদি।

এ বনে উল্লুক দেখা যায় কদাচিৎ। তবে গভীর বনে এদের চেঁচামেচি শোনা যায়। আর একটু গভীর বনে গেলে চশমা হনুমান ও মুখপোড়া হনুমানদের দেখা যায়। এছাড়া এ বনে আছে ভালুক। এদেরও দেখা যায় না বললেই চলে। তবে মাঝে মধ্যে এদের আক্রমণের খবর পাওয়া যায়। এছাড়া নানারকম পাখিও দেখা যায় এ বনে।

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আদমপুর বিট। স্থানীয়দের কাছে এ বনটি কাউয়ারগলা বিট নামেই বেশি পরিচিত। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

আদমপুর বনের ভেতরেই আছে বড় বড় বাঁশ মহাল। মুলি, মিটিঙ্গা, ডলু, রূপাই জাতের বাঁশ এ বনে বেশি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ছড়াপথে এ বনের বাঁশ নামানো হয়। 

আদমপুর বন বেশ নির্জন। মানুষের আনাগোনাও খুবই কম। বনের পাশেই আছে খাসিয়াপুঞ্জি। এখানকার মানুষেরা দৈনন্দিন কাজে বনে যায়। জঙ্গল ভ্রমণের ফাঁকে ঢুঁ মারতে পারেন এই জায়গায়। এছাড়া আদমপুর বনের আগে সড়কের দুইপাশে আছে অনেক আগর বাগান।

কীভাবে যাবেন

প্রথমে যেতে হবে শ্রীমঙ্গল কিংবা কমলগঞ্জ। কমলগঞ্জ থেকে দশ কিলোমিটার দূরের এ বনে যাওয়া যায় অটোরিকশায়। চালককে বলতে হবে কাউয়ার গলা বিট অফিসের কথা। নিজস্ব বাহন নিয়ে গেলে জঙ্গলের একেবারে মুখে যাওয়া যাবে। শুকনা মৌসুমে গাড়ি নিয়ে বনের বাংলোর সামনে যাওয়া যায়।

ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাস যায় শ্রীমঙ্গল। ভাড়া সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা।

এছাড়া ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টায় ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১১৫ থেকে ৭৬৫ টাকা।

পারাবত ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি ভানুগাছ স্টেশনে থামে। কমলগঞ্জের রেল স্টেশনটিই ভানুগাছে। তবে অন্য কোনো ট্রেনে গেলে নামতে হবে শ্রীমঙ্গল।  

কোথায় থাকবেন

আদমপুর বনের ভেতরেই আছে বনবিভাগের পরিদর্শন বাংলো। সিলেট বনবিভাগীয় কার্যালয় থেকে অনুমনি নিয়ে এ বাংলোতে রাতে থাকা যায়। এছাড়া সারাদিন জঙ্গলে বেড়িয়ে রাতে থাকতে পারেন কমলগঞ্জ কিংবা শ্রীমঙ্গল। তবে কমলগঞ্জ থেকেই আদমপুরের দূরত্ব কম। 

শমশেরনগরে সুইজ ভ্যালী রিসোর্ট। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

কমলগঞ্জে একমাত্র ভালো মানের থাকার ব্যবস্থা সুইজ ভ্যালী রিসোর্ট। শমশেরনগর বিমানবন্দরের পাশে অবস্থিত এ রিসোর্টে সুইমিংপুলসহ নানান ব্যবস্থা আছে। খাবারের মানও বেশ ভালো। সুইজ ভ্যালী রিসোর্টের কটেজগুলোর কক্ষ ভাড়া ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। যোগাযোগ: ০১৭৮৬৪৯৩৭০০।

এছাড়া শ্রীমঙ্গলে ভালো মানের পর্যটক নিবাস হল— ভানুগাছ সড়কে গ্রান্ড সুলতান গলফ রিসোর্ট (০২-৯৮৫৮৮২৭, ০১৭৩০৭৯৩৫৫২-৭)। এই রিসোর্ট পাঁচ তারকা মানের।

এছাড়া ভানুগাছ সড়কে আরও আছে টি রিসোর্ট (০৮৬২৬-৭১২০৭, ০১৭১২৯১৬০০১)। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশে আছে লেমন গার্ডেন রিসোর্ট। (০১৭৬৩৪৪৪০০০, ০১৭৫৮৭৭১৪৯২)। শ্রীমঙ্গলের রাধানগরে দুটি রিসোর্ট হল নিসর্গ নিরব ইকো রিসোর্ট (০১৭১৫০৪১২০৭) এবং নিসর্গ লিচিবাড়ি ইকো রির্সোট (০১৭১৬৯৩৯৫৪০)।