বাংলাদেশ

বৃষ্টি মাথায় ভোটের প্রচার, ‘মুখ লুকালেন’ কাউন্সিলর

Byমাসুম বিল্লাহ

আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হওয়ার আগের দিন শনিবার ভোটারদের কাছে গিয়ে সমর্থন চেয়েছেন তারা। আবার জলাবদ্ধতার কারণে চলতি দায়িত্বে থাকা অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটারদের কাছ থেকে ‘লুকিয়েছেন মুখ’।

তাদের একজন ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম।ওই ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থন নিয়ে এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।

বৃষ্টির দিনের প্রচারণা কেমন চলছে তা মোবাইলে জানতে চাইলে ‘একা একা প্রায় হাঁটু পানিতে’ প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে দাবি করেন জাহাঙ্গীর।

সেই প্রচারের ছবি তোলার জন্য সময় চাইলে এই কাউন্সিলর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা করলে বদনাম হবে। আমি বর্তমান কাউন্সিলর। এটি ভোটাররা ভালোভাবে নেবে না।”

বৃষ্টির কারণে ‘অসুস্থ হয়ে পড়লে ভোট করবে কে’- এমন আশঙ্কার কথাও আসে তার মুখ থেকে।

রোববার মধ্যরাতে শেষ হবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। আগের দিন শনিবার প্রার্থী-সমর্থকদের প্রচার আর মিছিলে ৩২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নগরী সরগরম থাকার কথা থাকলেও বাগড়া বাধায় বৃষ্টি।

শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা আড়াইটা টানা বৃষ্টি হয় গাজীপুরে; ফলে প্রধান সড়কগুলোর একটি অংশের পাশাপাশি অনেক ছোট সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়।

আগামী ২৬ জুন নতুন মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে যাচ্ছে গাজীপুরবাসী। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন। ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ২৫৬ জন, আর ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন ৮৪ জন। এই সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন।

মেয়র পদে দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার।

নির্ধারিত সময়ের পরে হলেও বৃষ্টির মধ্যে সকাল সাড়ে ১০টার পর প্রচারে নামেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর। টঙ্গী থানার বিভিন্ন এলাকায় গাড়িবহর নিয়ে গণসংযোগে যান ৩৯ বছর বয়সী এই আওয়ামী লীগ নেতা।

বড় দেওড়া, খৈরতুল, মিলকি গেট প্রভৃতি এলাকায় পথসভায় বক্তব্য দিয়ে ভোটারদের সমর্থন ও ভোট প্রার্থনা করেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী।

বড় দেওড়া এলাকায় পথসভায় দেওয়া বক্তব্যে বৃষ্টির প্রসঙ্গ টেনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের ও ভোটারদের ধন্যবাদ দেন তিনি।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বৃষ্টি-বাদল যা-ই হোক মানুষের জন্য বাসযোগ্য একটি শহর গড়ে তোলার জন্য আমি দিনরাত পরিশ্রম করছি। হাজার হাজার মানুষ, লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেরাই রাস্তায় নেমে আসছে, আমাকে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য।

“বৃষ্টির মধ্যে আমাদের নেতাকর্মীরা আসছে। প্রতিটি এলাকায় আমাদের হাজার হাজার মা-বোনেরা বেরিয়ে আসছেন, তাদের সন্তানরা, তাদের বংশধররা যেন ভালোভাবে চলতে পারে।”

বৃষ্টির মধ্যে দলীয় প্রার্থী প্রচারে নামবেন কি-না এ প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মিডিয়া সেলের সদস্য মোহাম্মদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমাদের প্রার্থীর সঙ্গে সকালে যখন কথা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা যদি বৃষ্টিতে ভিজে বের না হই, ভোটাররা বের হবে কীভাবে?’ এ হচ্ছে আমাদের প্রার্থীর মনোভাব।”

অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারও সকাল ১০টার পর বৃষ্টির মধ্যে প্রচারে নামেন নগরীর শুকুন্দিবাদ স্কুল এলাকা থেকে।বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ চলার মধ্যে পূবাইল এলাকায় একটি পথসভায় বক্তব্য দেন তিনি।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার

বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার

সেখানে হাসান উদ্দিন বলেন, “ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক, আমরা ভোটারদের কাছে যেতে চাই। আওয়ামী লীগের যে অগণতান্ত্রিক শাসন চলছে তা থেকে এবং  কারাগার থেকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই।”

বিএনপির মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক জনি কিবরিয়া খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বয়সের কারণে কিছুটা দুর্বল হলেও তিনি বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রচারে নেমেছেন। যদিও নির্ধারিত সময় থেকে একটু দেরি হয়েছে বৃষ্টির জন্য।”

সকালে বৃষ্টির মধ্যে গণসংযোগে নামতে দেখা যায় বিভিন্ন কাউন্সিলর প্রার্থীকেও; তারা ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রচারপত্র দিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন।

তাদেরই একজন সাধারণ আসনে একমাত্র নারী প্রতিদ্বন্দ্বী সৈয়দা রিফাত সুলতানা গণসংযোগ চালান তার ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে। তার বিপরীতে পুরুষ প্রার্থী আছেন আরও সাতজন।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রচারের বিষয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ভোটারদের সমর্থন চাই। আর দিন বাকি আছে একটা। সবার কাছে পৌঁছাতে হলে বৃষ্টিকে পেছনে রাখতেই হচ্ছে।

“আমাদের প্রায় পুরো এলাকার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই অনেক কষ্ট করে হলেও প্রচার চালিয়েছি। ২৫৬ জনের মধ্যে একমাত্র নারী প্রার্থী হওয়ায় বাড়তি এনার্জিও পাচ্ছি।”

৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রঞ্জুল ইসলাম রঞ্জুকেও দেখা যায় তার এলাকার প্রচারে; গত নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সমর্থক এই প্রার্থী হারেন একই দল সমর্থিত প্রার্থী নূরুল ইসলাম নুরুর কাছে।

বৃষ্টির কারণে প্রচারে কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও দমে যেতে চান না মন্তব্য করে রঞ্জু বলেন, “আর সময়তো বেশি নেই। আমাদের ভোটারদের কাছে যেতে হবে। সেজন্য বৃষ্টির মধ্যেও প্রচারে নেমেছি।”

বর্তমান কাউন্সিলর সাধারণ জনগণের ‘উন্নয়নে মনোযোগ না দেওয়ায়’ এলাকার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এর কিছুক্ষণ পর কাউন্সিলর নূরুকেও ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে দেখা যায়। টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের এই ক্রীড়া সম্পাদক বলেন, “জলাবদ্ধতা পুরো গাজীপুর নগরীরর সমস্যা। জলাবদ্ধতা কমানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। নির্বাচিত হলে সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখব।”

নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নাসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, “বৃষ্টি সত্ত্বেও প্রচার চালাচ্ছি। ভোটাররাও ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ২০০৬ সালের মতো আমাকে এবারও কাউন্সিলর নির্বাচিত করবে বলে আশা করছি।”

SCROLL FOR NEXT