বাংলাদেশ

আইনজীবী সমিতির সংবাদ সম্মেলনে দুই পক্ষের হট্টগোল

Byনিজস্ব প্রতিবেদক

আইনজীবী সমিতির সভাপতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বিচারপতি খায়রুল হকের বক্তব্যের সমালোচনা করলে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আওয়ামী সমর্থকরা এর প্রতিবাদে চিৎকার শুরু করেন।

এই উত্তেজনার মধ্যে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে বিএনপিপন্থিরা চলে যাওয়ার পর সমিতির সহ-সভাপতি আওয়ামীপন্থি আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট ওজিউল্লাহ দাবি করেন, জয়নুল আবেদীনের বক্তব্য তার নিজের, সমিতির নয়। 

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা ফেরানোর পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ অগাস্ট প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। 

ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সংসদ, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করেন, যা নিয়ে বুধবার কঠোর সমালোচনা করেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক।

তিনি বলেন, “আমরা এতকাল জেনে এসেছি, দিস ইজ পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ, কিন্তু এ রায়ের পরে মনে হচ্ছে, উই আর নো লংগার ইন দি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। উই আর রাদার ইন জাজেস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ।”

সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায়কে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ‘পূর্বধারণাপ্রসূত’ বলেছেন। সংসদ সদস্যদের নিয়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণকে তিনি ‘অপরিপক্কতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

 

ওই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিচারপতি খায়রুল হক তার অবস্থান ‘স্পষ্ট করেছেন’ বলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন অ্যাডভেকেট জয়নুল আবেদীন।

ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে বিচারপতি খায়রুল হক পূর্বধারণাপ্রসূত বলায় বিএনপিপন্থি এই আইনজীবী নেতা প্রশ্ন রাখেন, তাহলে কি খায়রুল হকের দেওয়া ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ও পূর্বধারণাপ্রসূত ছিল?

আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলেনে সংগঠনের সভাপতি জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকনও উপস্থিত ছিলেন।

সামনের সারিতে বসেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদসহ বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

সংবাদ সম্মেলন শুরুর সময় সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ওজিউল্লাহর নেতৃত্বে আওয়ামীপন্থি সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত হন। সামিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিমও তাদের সঙ্গে আসেন।

এরপর আইনজীবী সমিতির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন সম্পাদক ব্যরিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনের লিখিত বক্তব্যের মধ্যে শুরু হয় হট্টগোল।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক মুন সিনেমা হলের অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলার রায় দিতে গিয়ে উদ্দেশ্যমূলক, পূর্ব পরিকল্পিত ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেছেন।

“তিনি পঞ্চম ও ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়কেও বিতর্কিত করেছেন। এ কারণে বিচারপতি খায়রুল হক ষোড়শ সংশোধীর রায় বাতিলে পূর্ব পরিকল্পনার গন্ধ পাচ্ছেন।”

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে বিচারপতি খায়রুল হক যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ‘বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন’ বলে মন্তব্য করেন জয়নুল আবেদীন।

সভাপতির এমন বক্তব্যে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা করতালি দিলেও আওয়ামী সমর্থকরা হট্টগোল করতে থাকেন।

এর মধ্যেই জয়নুল আবেদীন বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে বিচারপতি খায়রুল হক যে রায় দিয়েছেন, তাতে দেশের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। দেশের মানুষ ভোটাধিকার হারিয়েছে।”

তিনি প্রশ্ন করেন, “বিচারপতি খায়রুল হক ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে সংক্ষিপ্ত রায়ে ‘দুই মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখা যায়’ বলেছিলেন। পরে কার ইঙ্গিতে, কী উদ্দেশ্যে ষোলো মাস পর পূর্ণাঙ্গ রায়ে সে অবস্থান থেকে সরে গেলেন?”

অবসর নেওয়ার ষোলো মাস পর ত্রয়োদশ সংশোধনীর ওই রায় লেখার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে একে ‘বিচারিক অসততা’ আখ্যায়িত করেন জয়নুল আবেদীন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “সম্প্রতি সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও সরকারি দলের নেতৃবৃন্দ ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে বিভিন্ন প্রকার অনভিপ্রেত বক্তব্য রাখছেন। বিচার বিভাগকে সরকার জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে এবং বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির জন্য বক্তব্য দিচ্ছেন।”

সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, তিনি দলীয় বক্তব্য দিতে আসেননি, আইনজীবী সমিতির সবার পক্ষে বক্তব্য দিতে এসেছেন।

কিন্তু তার এই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা।

সভাপতির বক্তব্য শেষ হলে সহ-সভাপতি ওয়াজিউল্লাহ বক্তব্য দিতে চাইলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সংবাদ সম্মেলনের ব্যানার খুলে নিয়ে যান। এরপর দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

পরে বিএনপিপন্থিরা মিলনায়তন ত্যাগ করলে আওয়ামীপন্থি আইনজীবী নেতা ওয়াজিউল্লাহ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, “সমিতির সভাপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা একান্তই তার নিজের বক্তব্য। এই বক্তব্য আইনজীবী সমিতির বক্তব্য নয়।”

তার ওই বক্তব্যের সময় বইরে বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

SCROLL FOR NEXT