বাংলাদেশ

সহিংস আবহে দেশ, প্রয়োজন গণতন্ত্রের প্রস্তুতি: সিইসি

Byমঈনুল হক চৌধুরী

ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গত সাড়ে তিন মাসে সহিংসতায় ৮০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সংঘর্ষ-হামলার ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই। শনিবার পঞ্চম ধাপের ভোটে ইতোমধ্যে ৯ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে সিইসি বলেন, সারা দেশে এখন সহিংসতার আবহ বিরাজ করছে। তাই গণতন্ত্রের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে। করতে হবে মানসিকতার পরিবর্তন।

এসময় সহিংসতা বেড়ে যাওয়া, তা রোধে ইসির ভূমিকা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সাংবিধানিক সংস্থাটির নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন কাজী রকিব।

নির্বাচনী সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় ও তার রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারায় সব মহলের সমালোচনার মুখে পড়েছে কাজী রকিব নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ইসি।

সাম্প্রতিক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, “সারা দেশে এখন সহিংসতার আবহ বিদ্যমান। একটু কিছু হলেই আপনারা (গণমাধ্যম) অন্য জায়গাতেও দেখছেন, জমিজমা নিয়ে হলেও লোকজন খুন করে ফেলছে।

“নির্বাচন নিয়েও এটা অনেক বেশি বাড়ছে। আমি তো মনে করি, এ রকম অসহিষ্ণু হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

এসময় ভোট নিয়ে সহিসংতার কারণ খুঁজতে গিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে সমাধানের পথও বাতলে দেন তিনি।

“কারণ আমি বারবার বলে আসছি, আমি আশ্চর্যও হচ্ছি- কেন উনারা তা করেন? প্রত্যেকটি অভিযোগের কিন্তু একটা আইনানুগ ব্যবস্থা রয়েছে। … ফলাফলের কোনো পর্যায়ে অভিযোগ থাকলে তারা ট্রাইব্যুনালে যেতে পারে। অনেকে অহরহ যাচ্ছেন হাই কোর্টে।

“কোনো জায়গায় কারও মাথায় লাঠি মারার দরকার নেই। বিএনপিসহ যারা দেখা করতে আসেন তাদের বলি, আপনাদের অভিযোগ পুলিশকে দিন, থানা মামলা না নিলে ম্যাজিস্ট্রেটকে দিন; মামলা হলেই এটার পরিসংখ্যান হবে; এর বিচার হবে।”

‘অস্ত্র উদ্ধার ও গ্রেপ্তার ভালোভাবে হয়নি’

এই নির্বাচন সামনে রেখে অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার অভিযান ভালোভাবে হলে এ ধরনের সহিংসতা হতো না বলে মনে করেন সিইসি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের ধরপাকড় করা, নিয়ন্ত্রণ করা এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে জোর দেওয়া হয়।

“আমরা এটার ওপর স্ট্রেস দিই। সন্ত্রাসীরা কোনো দলের নয়। তাদেরকে ধরা হোক এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হোক। এ দুটো ভালো করে করতে পারলে সিচুয়েশন আরও অনেক ইমপ্রুভ করত।”

‘নিজের জানেরও তোয়াক্কা নেই’

সহিংসতা ঠেকাতে মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, “কঠোর থেকে কঠোর ব্যবস্থা কিন্তু আমরা নিচ্ছি। আপনারা বলছেন কেন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না এটা বন্ধ করার জন্য? এটাকে বন্ধ করতে হবে অন্যভাবে। মন-মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।”

এতো নির্দেশনার পরও কেন অস্ত্র উদ্বার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার অভিযান ভালো হয়নি- জানতে চাইলে কাজী রকিব বলেন, “এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করে। তারা কিন্তু অনেক উদ্ধার করছে, অনেকে ধরা পড়ছে। কিন্তু সেটা নর্মাল নিউজ। ওইটা ওইভাবে আসে না। যখন বেকায়দা হয় তখন আসে।”

সহিংসতায় সম্পৃক্তদের ‘বেপরোয়া হওয়ার’ প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “নিজের হাত উড়ে চলে যাচ্ছে, প্রাণ চলে যাচ্ছে, চোখ কানা হয়ে যাচ্ছে- তাও ততটা কেয়ার করছে না। নিজের জানেরও তোয়াক্কা করছে না- এ কাজে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে।”

ভোটে জনগণের দেওয়ার রায় মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, “এটা নিয়ে আরেকজনের বুকে ছুরি মারা, মাথায় লাঠি মারার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বিদেশে এমন হয় না। আমাদের নিজেদেরকে গণতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত হতে হবে আজ। মন-মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। সারা জাতির সমস্ত পর্যায়ে এ উন্নতি আনতে হবে।”

‘পুলিশ ছাড়া ভোট’

ব্রিফিংয়ে সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের আশা প্রকাশ করেন কাজী রকিব।

“আশা করি, এ মনোবৃত্তি বৃত্ত থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। পুরো জাতি বেরিয়ে আসতে পারব এবং আমরা একদিন পুলিশ ছাড়া ভোট করব।”

‘বেশিরভাগ অভিযোগই জেনারেল’

শনিবার দুপুরে ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম-সহিংসতা চলছে দাবি করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, অভিযোগ জানালেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না ইসি।

এ প্রসঙ্গে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপির অভিযোগ বেশিরভাগই জেনারেল টাইপের। কিন্তু তার মধ্যেও দুয়েক জায়গার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

“সুনির্দিষ্ট যেগুলো বলেন, উনারা চলে যাওয়ার পরপরই টেলিফোন করে সেগুলোর বিষয়ে এলার্ট করি। যে কটা কেন্দ্র, এলাকার নাম দিয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে এসপি, ডিসি, রিটার্নিং অফিসারকে এলার্ট করি। সতর্ক থাকার জন্য বলি, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলি।”

সিইসির পদ ছাড়ার জন্য বিএনপির দাবির প্রসঙ্গে কাজী রকিব বলেন, “উনারা একটি রাজনৈতিক দল, উনাদের বক্তব্য বা মন্তব্য নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না।”

SCROLL FOR NEXT