ছাত্রকে নির্যাতনের ভিডিও, শিক্ষকের নামে মামলা

টেনে হিঁচড়ে পায়ের নিচে ফেলে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে নির্যাতনের ভিডিও ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তার শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2017, 01:50 PM
Updated : 1 Sept 2017, 05:10 PM

শিশুটির মা বৃহস্পতিবার জয়দেবপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন বলে জানান জয়দেবপুরের পূবাইল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই  মো.রফিকুল ইসলাম।

আসামিরা হলেন ‘পূবাইল রহমানিয়া এতিমখানা মাদ্রাসা’র শিক্ষক আমজাদ হোসেন (৪২) ও তার সহযোগী বাছির উদ্দিন (৪১)।

এছাড়া আজ্ঞাত পরিচয় আরও  ২/৩ জনকে আসামি করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নির্যাতনের শিকার হয়েছে পূবাইল রহমানিয়া এতিমখানা মাদ্রাসার ছাত্র তাওহীদুল ইসলাম ওরফে শোয়েব মোল্লা।

পূবাইল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো.রফিকুল ইসলাম মামলার বরাত দিয়ে জানান,পূবাইলের নয়ানিপাড়া এলাকার পূবাইল রহমানিয়া এতিমখানা মাদ্রাসার ছাত্র তাওহীদুল ইসলাম ওরফে শোয়েব মোল্লাকে তার মা মঞ্জুরা বেগম গত শুক্রবার (২৫ অগাস্ট) বিকালে এতিমখানার হোস্টেলে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু শোয়েব মাদ্রায় থাকতে রাজি হচ্ছিল না এবং মার সঙ্গে বাড়ি চলে যেতে পেছনে পেছনে ছুটতে থাকে।

“বিষয়টি মাদ্রাসা শিক্ষক আমজাদ হোসেন দেখে শোয়েবকে টেনে হিঁচড়ে পা দিয়ে পিষে নির্যাতন শুরু করেন। এ কাজে তাকে তার বন্ধু বাছির উদ্দিন সহযোগিতা করেন।”

এসআই বলেন, এ সময় এলাকার এক যুবক ঘটনাটির ভিডিও চিত্র ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে যায়।পরে শিশুটির মা থানায় মামলা করেন।

ঘটনার দুইদিন পর থেকে মাদ্রাসাটি বন্ধ রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

শুক্রবার সকালে সরেজমিনেও মাদ্রাসার মূল ফটক ও হোস্টেলেও তালা ঝুলতে দেখা গেছে।  

শোয়েবের মা মঞ্জুরা বেগম বলেন, চার ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে শোয়েব হলো সবার ছোট। শোয়েব আগে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও তাকে কোরআনে হাফেজ বানানো ইচ্ছা তার।

তাই দুই মাস আগে তাকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দুই হাজার মাসিক খরচ দিয়ে ওই এতিমখানার হোস্টেলে ভর্তি করিয়ে দেন বলে জানান মঞ্জুরা।

“২৪ অগাস্ট রাতে শোয়েবকে এতিমখানা থেকে একদিনের ছুটিতে বাড়ি নিয়ে আসি। ছুটিশেষে পরদিন বিকালে তাকে এতিমখানায় রেখে আসার পর সেখান থেকে বাড়ি চলে আসতে চাইলে শিক্ষক আমজাদ হোসেন আমার শিশু ছেলেকে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে চেপে পিষতে থাকেন এবং চড়-থাপ্পর মারতে থাকেন।

“এ পর্যায়ে শিক্ষকের হাত থেকে ছুটে পালাতে গেলে বাছির উদ্দিন তাকে ধরে নিয়ে টেনে হিঁচড়ে আবার ওই শিক্ষকের হাতে তুলে দেন।”

 

তিনি বলেন, এ সময় তার কান্নাকাটি শুনে এলাকাবাসী এগিয়ে গেলে তারা শোয়েবকে ছেড়ে দেন।

শিক্ষক তার ছাত্রদের শাসন করলেও এমন নির্যাতনকে তিনি সমর্থন করেন না বলে জানান।

শিশু শোয়েব সাংবাদিকদের বলে, আমজাদ হুজুর তাকে পা দিয়ে চেপে ধরে চড়-থাপ্পর মেরেচেন, নির্যাতন করেছেন।

শিক্ষক আমজাদ হোসেন ও তার সহযোগী বাছির উদ্দিন ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন এবং তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় রাসেল মিয়া বলেন, হুজুর (আমজাদ হোসেন) ঝাড়-ফুঁকের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি জিন পরির আছর ছাড়াতে এবং বিভিন্ন রোগের পানি পড়া দেওয়ার নামে মানুষের কাছ থেকে ৫০১ টাকা থেকে ১০০১ টাকা হাদিয়া নেন।

আমজাদ হোসেনের গ্রামের বাড়ি জয়দেবপুরের মারুকা এলাকায়।