ট্রেনের নিচে বাবা-মেয়ে: ‘বিচার না পাওয়ায় আত্মহত্যা’

গাজীপুরে ট্রেনের নিচে মেয়েসহ বাবার মৃত্যু ‘দুর্ঘটনা নয়’, বিচার না পাওয়ায় পরিকল্পিত আত্মহত্যা বলে অভিযোগ ওঠার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2017, 01:42 PM
Updated : 25 June 2017, 04:05 PM

জেলার শ্রীপুর উপজেলার বাসিন্দা হযরত আলী (৪৫) ও মেয়ে আয়েশা (৮) শনিবার ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান বলে জানিয়েছিলেন শ্রীপুর রেলস্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান মিয়া।

নিহত হযরত আলী শ্রীপুর উপজেলার কর্ণপুর ভিটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

হযরত আলীর স্ত্রী হালিমা বেগমের অভিযোগ, জমি দখল ও মেয়েকে ধর্ষণচেষ্টার বিচার না পাওয়ায় মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে হযরত আলী আত্মহত্যা করেছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সালিশের নামে তাদের বিচার থেকে বঞ্চিত করেছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

এ ঘটনায় গোসিঙ্গা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল হোসেনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ঢাকার কমলাপুর থানায় মামলা করেন হালিমা।

ট্রেনের নিচে মৃত্যুর কারণে মামলা হয়েছে রেলওয়ে থানায়। ঘটনাস্থল শ্রীপুর ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ের থানার আওতায়।

কমলাপুর থানার ওসি মো. ইয়াসিন ফারুক মজুমদার জানান, পুলিশ আবুল হোসেনকে আটকের পর সোমবার বিকেলে ঢাকার আদালতে হাজির করলে জ্যেষ্ঠ মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. তাওহীদ আল আজাদ দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, “একধরনের স্বার্থান্বেষী মহল যারা দীর্ঘদিন ধরে হযরত আলীর জমি দখলের চেষ্টা করেছিল, যারা তার মেয়েকে লাঞ্ছিত করেছে, তারা এ আত্মহত্যার জন্য দায়ী।

“যাদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেনি। ধর্ষণচেষ্টার মামলায় যারা সালিশ করতে চেয়েছেন, সেই জনপ্রতিনিধিরা এ দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।”

চেয়ারম্যান তার অনুসন্ধান সম্পর্কে বলেন, “পুলিশ প্রশাসন এ ঘটনার পর কোনো অ্যাকশনে যায়নি। তারাও দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারে না। এ জন্য আমি মনে করি, এখানে যে অবহেলা হয়েছে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ফৌজদারি অপরাধ।”

তবে শ্রীপুর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলছেন, “হযরত আলী একখণ্ড খাসজমিতে ঘর তুলে বসবাস করতেন। তিনি সেখানে গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করতেন। বিভিন্ন সময় তার গরু মানুষের ক্ষেতের ফসল খেয়ে ফেলত।

“এ নিয়ে এলাকার মানুষের সঙ্গে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। হযরত আলী গত জানুয়ারি মাসে থানায় মারধর ও হুমকির কথা উল্লেখ করে কয়েকজনের নামে জিডি করেন। কিন্তু তদন্তে সত্যতা মেলেনি।”

জিডি করার পর হয়রত আলী আর কখনও থানায় যাননি দাবি করে ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, “হযরত আলী এর আগে বিভিন্ন সময় গাছে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে এলাকাবাসীর কাছে শুনেছি। শনিবার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন নাকি দুর্ঘটনা তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।”