সুন্দরবনের আগুন নিভেছে

পাঁচ ঘণ্টা পর সুন্দরবনের নাংলি ফরেস্ট ক্যাম্প এলাকার আগুন নিভে গেছে।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2016, 09:19 AM
Updated : 18 April 2016, 09:25 AM

খুলনা অঞ্চলের বনসংরক্ষক মো. জহির উদ্দিন বলেন, বনবিভাগের কর্মী ও স্থানীয়দের সহায়তায় বাগেরহাট ও মোরেলগঞ্জের ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করে।

“বেলা আড়াইটার দিকে আগুন নিভে গেছে।”

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলি ফরেস্ট ক্যাম্পের কাছে লাগা এ আগুন দুর্বৃত্তরা ধরিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করছে বনবিভাগ।

এ ঘটনা তদন্তে তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলে জানান।

সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক বেলায়েত হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ এবং চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা গাজী মতিয়ার রহমান।     

এছাড়া বন পাহারা দেওয়ার জন্য পাঁচটি ‘ফায়ার ওয়াচার টিম’ গঠনের কথাও জানান জহির উদ্দিন।

তিনি বলেন, প্রতিটি তিন সদস্যের টিম বনে পাহারা দেবে যাতে বাইরের লোক বনে ঢুকেতে না পারে।

পাঁচদিন আগের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল তারাই আগুন দিয়েছে দাবি করে এই কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনাও মামলা হবে। 

আগের মামলার আসামিরা গ্রেপ্তার এড়াতে এ নাশকতার কাজ করেছে বলে তিনি দাবি করেন।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় বনকর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আগুর লাগার পর বনবিভাগের কর্মী ও স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়।

বাগেরহাট ও মোরেলগঞ্জের ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট বেলা দেড়টার দিকে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয় বলে তিনি জানান।

এ নিয়ে গত তিন সপ্তাহে একই এলাকায় তিনবার আগুন ধরল।

২৩ দিন আগে (২৭ মার্চ) নাংলি ফরেস্ট ক্যাম্পের কাছে আগুন ধরেছিল। ঘটনা তদন্তে পরদিন তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

গত ৪ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলামের কাছে। প্রতিবেদনে বনজীবী ও স্থানীয়দের অসতর্কতাকে অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হয়।

এর ১৮ দিন পর গত বুধবার (১৩ এপ্রিল) আবার আগুন ধরে নাংলি ফরেস্ট ক্যাম্পের কাছে আব্দুল্লাহর ছিলায়। ওই আগুনে আব্দুল্লার ছিলা, পঁচাকুড়ালিয়া ও নাপিতখালি এলাকায় ৮ দশমিক ৫৫ একর বনভূমি পুড়ে গেছে বলে বনবিভাগ দাবি করছে।

ওই ঘটনায় অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বনবিভাগ।  

তবে ওই ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশের নিচু এলাকায় বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্ম শুরুর মৌসুমে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।

এ সময় তীব্র বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে; নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়।

২০১৪ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের গুলিশাখালী ক্যাম্পসংলগ্ন পয়ষট্টি ছিলা এলাকায় বনে আগুন লেগে অন্তত পাঁচ একর বনভূমি পুড়ে যায়। ২০১১ সালে ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ক্যাম্প এলাকায় পোড়ে দুই একর বনভূমি।

এ মৌসুমে মৌয়ালরা মধু আহরণ করতে বনে আসে। চাক ভাঙার সময় তারা আগুন ব্যবহার করে। সেখান থেকেও বনে আগুন ছড়িয়ে থাকতে পারে।

অবশ্য বনের মধ্যে পচা পাতা থেকে তৈরি হওয়া মিথেনের স্তর জমে গেলে বনজীবীদের বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকেও আগুন লাগার সুযোগ থাকে।