বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পুনর্তদন্ত দাবি বিএনপির

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পুনর্তদন্ত দাবি করেছে বিএনপি, যে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2015, 02:33 PM
Updated : 18 August 2015, 04:28 PM

জাতির জনকের হত্যার ৪০তম বার্ষিকীতে বেসরকারি একটি টেলিভিশনে সাবেক সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ ও বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বক্তব্যের সূত্র ধরে মঙ্গলবার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন।

তিনি বলেন, “ওই টেলিভিশনে সেদিন আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার যে কথোপকথন প্রচারিত হয়েছে, তা থেকে অনুমান করা যায়, সেদিনের সেনাবাহিনী প্রধান কে এম সফিউল্লাহ ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই অভিযোগ করেছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতা শেখ ফজলুল করীম সেলিম।

“এই অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুতর। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পুনর্তদন্ত করা হোক। পুনর্তদন্ত হলে সেনাবাহিনী প্রধানের কী ভূমিকা ছিল, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি শেখ সেলিম সাহেব তুলেছেন, তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। যিনি অভিযোগটি তুলেছেন, তিনি শাসক দলের প্রেসিডিয়ামের সদস্য, নিহত রাষ্ট্রপতির ভাগিনা। এটাকে হালকা করে দেখার বিষয় নয়।”

১৯৭৫ সালে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার পর সংবিধানে ধারা যুক্ত করে তার বিচারের পথ বন্ধ করা হয়েছিল। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচারের বাধা অপসারণ করা হয়।

এরপর মামলা হলে ১৯৯৮ সালে বিচারিক আদালত ১৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেয়। আপিলের রায়ে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। এদের সবাই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন।

দণ্ডিত পাঁচজন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমদ (আর্টিলারি), বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিনের (ল্যান্সার) ফাঁসির রায় ২০১০ সালে কার্যকর হয়। বাকিরা এখনও পলাতক।

পুনর্তদন্ত চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে সাবেক ছাত্রদল নেতা রিপন আরও বলেন, “আমরা মনে করি, ১৫ অগাস্টের ঘটনায় জড়িত অনেকে বিচারের আওতার বাইরে রয়েছেন। নতুন করে তথ্য বেরিয়েছে, তৎকালীন সেনা প্রধানের বিরুদ্ধে। তাই সরকারকে বলব, নিজের ঘর থেকে আগে পুনর্তদন্ত শুরু করুন।

বুলেটবিদ্ধ জাতির জনক

“পত্র-পত্রিকায় এসেছে ১৫ অগাস্টের ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক নেতারা যুক্ত ছিলেন। কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ওই হত্যাকাণ্ডে ইন্ধন দিয়েছিল, তাদের চিহ্নিত করা উচিৎ। শেখ আবদুল আজিজসহ বিভিন্ন বইয়ে বলা হয়েছে, ১৫ অগাস্টের অভ্যুত্থানের বিষয়টি আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রীদের কাছে জানানো হয়েছিল। সে সমস্ত নেতারা তখন কেন নিশ্চুপ ছিলেন? কেন রক্ষী বাহিনী ও তার প্রধান তোফায়েল আহমেদ সাহেব নিশ্চুপ ছিলেন, তার কোনো ভূমিকা ছিল না, এসব বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা উচিৎ।”

“আশা করি, সরকার আমাদের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবেন,” বলেন রিপন।

পঁচাত্তরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসা তৎকালীন উপ-প্রধান সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানকেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাষ্ট্রপতি হয়ে খন্দকার মোশতাক আহমেদ সেনাপ্রধান করেন জিয়াকে। পরে জিয়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন, গঠন করেন বিএনপি।

পুনর্তদন্ত চাইলেও দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়ার ১৫ অগাস্ট হত্যাকাণ্ডে কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে দাবি করেন বিএনপি নেতা রিপন।

তিনি বলেন, “আমাদের পার্টির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে জড়িয়ে তার চরিত্র হনন করার জন্য অসত্য, মিথ্যা, কাল্পনিক তথ্য দিয়ে থাকেন। জিয়াউর রহমান খুন-হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তিনি চাকরি জীবনে একজন ডিসিপ্লিনড অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তৎকালীন উপ-সেনা প্রধান জিয়াউর রহমানের হাতে কোনো কমান্ড ছিল না। ওই পদের কোনো গুরুত্ব ছিল না বলেই পরবর্তী সরকার পদটি বিলুপ্ত করেছিল।

জিয়াউর রহমান

জিয়াকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিপন বলেন, “অথচ তারা তৎকালীন চিফ অফ জেনারেল স্টাফ খালেদ মোশাররফ, ৪৪ ব্রিগেডের প্রধান শাফায়াত জামিলসহ অন্যান্যদের আক্রমণ কিংবা দোষারোপ করেন না।

“অথচ খালেদ মোশাররফ ওই সময়ে (পঁচাত্তরের ৪ নভেম্বর) সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙে সেনা প্রধানকে অন্তরীণ করে নিজে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। যাদের খুনি বলা হয়, ফারুক বলেন, রশিদ বলেন, তাদেরকে সবাইকে বিদেশে চলে যেতে সাহায্য করেন।”

মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক আদালতে বিচারের নামে বহু মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এদের একজন কর্নেল তাহের; তার মৃত্যু নিয়ে প্রচলিত আদালতে মামলা হলে রায়ে হাই কোর্ট বলেছে, সামরিক আদালতে বিচারের নামে ঠাণ্ডা মাথায় তাহেরকে হত্যা করেছিলেন জিয়া। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীদের মন্ত্রিসভায় স্থানও দিয়েছিলেন জিয়া। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নানা পদ-পদবি দিয়ে পুরস্কৃত করার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। 

রিপন বলেন, “আমরা বলতে চাই, ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী বলে জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে এজাতীয় মনগড়া অভিযোগ তোলা হয়। আমি মনে করি, শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি প্রকৃত সম্মান দেখাতে হলে প্রকৃত খুনিদের চিহ্নিত করতে হবে। যারা ওই নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।” বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলে দাবি আওয়ামী লীগের।