ঢাকার বাইরে হাই কোর্ট বেঞ্চ: ‘এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির’

ঢাকার বাইরে হাই কোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে বিষয়টি প্রধান বিচারপতির উপরই ছেড়ে দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2015, 01:49 PM
Updated : 1 June 2015, 01:49 PM

সোমবার সংসদে ঢাকা-১১ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ আইনমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন সরকারের এই ধরনের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না।

জবাবে আনিসুল হক বলেন, সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির অনুমতি সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি রাজধানী ছাড়াও বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে হাই কোর্ট বিভাগের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করতে পারেন।

“যেহেতু বর্তমানে বিচার বিভাগ স্বাধীন, তাই ওই বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের কোনো করণীয় নেই।”

এইচ এম এরশাদের আমলে সংবিধান সংশোধন করে ঢাকার বাইরে হাই কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছিল। তখন এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন আইনজীবীরা, পরে সুপ্রিম কোর্ট ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে।

বর্তমানে অস্থায়ী বেঞ্চ গঠনের বিধান সংবিধানে রয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের আমলে সরকার চট্টগ্রামে এ ধরনের বেঞ্চ গঠনের প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টে পাঠালেও তা নাকচ করে দেওয়া হয়।

চট্টগ্রামে লক্ষাধিক মামলা

চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্য ১ লাখ ৭হাজার ৩৯০টি।

এর মধ্যে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ৯৬ হাজার ৪৬৩টি এবং ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ১০ হাজার ৯২৭টি।

সারাদেশে ৩০ লাখের মতো বিচারাধীন মামলা নিয়ে চাপের মধ্যে রয়েছে আদালতগুলো।

আইনমন্ত্রী বলেন, মামলাজট কমাতে চট্টগ্রামসহ দেশের সব আদালতে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিচারকের শূন্যপদ পূরণ করা হচ্ছে।

বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির বিধানটি বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োগ করা, যথাসময়ে সমন ইস্যু ও জারির বিদ্যমান পদ্ধতির পাশাপাশি ফ্যাক্স, ই-মেইল এবং কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সমন ইস্যুর বিধান রেখে দেওয়ানি কার্যবিধি প্রণয়ন করার কথাও বলেন মন্ত্রী।

আনিসুল হক বলেন, “এছাড়া যে সব আদালতে মামলা কম, সেই সব আদালতে বেশি করে মামলা দেওয়া হবে।”

মুহিবুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধরা রিভিউ আবেদন করায় উচ্চ আদালতে মামলার সংখ্যা বেড়ে যায়।

খুলনা-৪ আসনের সাংসদ এসএম মোস্তফা রশিদীর প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, দলিল নিবন্ধনের শত বছরের পুরনো পদ্ধতির অবসান ঘটিয়ে আধুনিকায়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।

প্রথম পর্যায়ে ঢাকায় এবং যশোর ও কুমিল্লায় এটি করা হবে। এই তিন জেলার রেকর্ড রুমে ডিজিটাইজেশন পদ্ধতি চালু হবে।

“সফটওয়্যার প্রস্তুত রয়েছে। নিবন্ধন অফিসগুলোর দলিল নিবন্ধনের কাজ আধুনিকায়নসহ কম্পিউটারাইজড করার কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন হবে,” বলেন আনিসুল হক।

মানব পাচারের মামলা নারী-শিশু ট্রাইব্যুনালে

সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পীর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, মানব পাচারের মামলাগুলোর বিচার দ্রুত করতে সেগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে।

মানব পাচার প্রতিরোধ আইন উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, এই আইনের অধীনে ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগে এই অপরাধের বিচার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করা যাবে।

“তাই এখন যে সব মামলা আছে, সেগুলো নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে দেওয়া হয়েছে, যাতে বিচার কাজ শুরু করে তাড়াতাড়ি শেষ করা যায়।”

“যদি মামলাগুলো তড়িৎ নিষ্পন্ন করার জন্য বিধি প্রণয়ন করা প্রয়োজন হয়, মামলাগুলো তড়িৎ নিষ্পন্নের জন্য বিধি প্রণয়ন করা হবে,” বলেন আইনমন্ত্রী।

সংসদ সদস্য আবুল কালামের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, যারা পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে, সন্ত্রাস দমন আইনে তাদের বিচার হবে।

“তবে সন্ত্রাস দমন আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন ও বিচারক নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। সে জন্য দায়রা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজের মাধ্যমে মামলা পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, নিবন্ধন সনদ ছাড়া কেউ বিয়ে পড়ালে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।