খালেদার অনাস্থার আবেদন দুই আদালতেই নাকচ  

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার দুই বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে খালেদা জিয়ার আবেদন নাকচ হয়েছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2017, 08:54 AM
Updated : 13 April 2017, 10:07 AM

বকশিবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত বিচারক আবু আহমদ জমাদার ও জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ  কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে এই দুই মামলায় বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানির কথা ছিল।

দুই আদালতেই খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার তার পক্ষে অনাস্থার আবেদন তুলে ধরেন।

এর মধ্যে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারক আবু আহমদ জমাদার অনাস্থার আবেদন নাকচ করে ১৮ মে মামলার পরবর্তী দিন ঠিক করেন।

আর জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ২৭ এপ্রিল দিন ঠিক করে দেন বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা।

এর আগে সকাল সোয়া ১১টার দিকে খালেদা জিয়া বকশিবাজারে পৌঁছালে শুরুতে আবু আহমদ জমাদারের আদালতে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার শুনানি হয়।

শুনানির শুরুতেই ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন বিচারকের উদ্দেশ্যে বলেন, যেহেতু এতিমখানা মামলাটি আপনার আদালত থেকে অন্য আদালতে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং এই মামলাটিও আপনি ওই একই আদালতে বদলি করে দিন।

“আপনার বিচারের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই।”

জবাবে বিচারক বলেন, “আমি মামলা ট্রান্সফার করতে পারবো না। আপনারা উচ্চ আদালত থেকে আদেশ নিয়ে আসেন। হাই কোর্ট যদি বলে এই মামলা ছেড়ে দেন, তাহলে আমি ছেড়ে দেব।”

বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় খালেদা জিয়া চুপচাপ শোনেন।

এক পর্যায়ে তার পক্ষে আরেক আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বিচারককে বলেন, “আপনি ৩৪২ ধারার পরীক্ষা যথাযথভাবে করেননি।”

তখন বিচারক বলেন, “আমি সাক্ষীদের সাক্ষ্য পড়ে শুনিয়েছি। যথাযথভাবেই এই আসামির ৩৪২ ধারার কার্যক্রম শেষ করেছি।”

পরে আবু আহমেদ জমাদার জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদার আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৮ই মে দিন ঠিক করেন।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার নিতে একই এজলাসে বেলা ১২টায় ওঠেন জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কামরুল হোসেন মোল্লা।

খালেদার আইনজীবীরা তাকে বলেন, এই মামলার তদন্তের সময় আপনি দুদকের শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন; বিচারক হিসেবে আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারবেন না। সুতরাং এ মামলার আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি আপনি নিতে পারেন না।

জবাবে বিচারক বলেন, “এসব কথা আমাকে বলছেন কেন। হাই কোর্টের আদেশে আমি এই মামলার বিচারকের দায়িত্ব পেয়েছি। আপনাদের কথাতেই হাই কোর্ট এই মামলার বিচারের দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে।”

বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবীদের আপত্তির মধ্যে ২৭ মে আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানির দিন রেখে এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক।

বেলা পৌনে ১টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া।

সোয়া পাঁচ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের দায়ের করা দুটি মামলাই আগে আবু আহমেদ জমাদারের আদালতে বিচারাধীন ছিল। এতিমখানা মামলায় খালেদা বিচারকের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করায় গত ৮ মার্চ হাই কোর্ট বিচারক বদলে দেন।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলা

জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে আসা তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁও থানায় এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

খালেদা জিয়া ছাড়া অভিযুক্ত অপর আসামিরা হলেন- বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তৎকালীন একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চার জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরের বছরের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু হয়।

এ মামলায় মোট ৩২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আসামিদের মধ্যে জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

আর প্রধান আসামি খালেদা জিয়া গত ১ ডিসেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। ট্রাস্টের তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে সুবিচার চান তিনি।

কিন্তু এরপর তার আইনজীবীরা দফায় দফায় সময় নেওয়ায় তার আত্মপক্ষ সমর্থনের বাকি বক্তব্য এখনও আদালতের শোনা হয়নি।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলা দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে দুদক ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

তার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।

আসামিদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান আছেন দেশের বাইরে।

এছাড়া সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

এ মামলায় আসামির আত্মপক্ষ শুনানি পর্যায়ে খালেদার পুনঃতদন্তের আবেদন আদালত নাকচ করলে গত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানান।

খালেদা জিয়ার অনাস্থার আবেদনে ৮ মার্চ হাই কোর্ট ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজকে (মহানগর দায়রা জজ) মামলাটির বিচারের দায়িত্ব দিয়ে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।