পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা

দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে বিবেচনা করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2016, 11:49 AM
Updated : 6 March 2016, 06:53 PM

রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ এর সফল বাস্তবায়ন উপলক্ষে সম্মাননা প্রদান এবং বহুমুখী পাটপণ্য মেলার’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাট কৃষিজাত পণ্য। অন্য সব পণ্য, যার সাথে কৃষির একটু সম্পর্ক সেগুলোও কৃষিপণ্য হিসেবে বিশেষ সুবিধা পায়, আর পাট পায় না, এটাতো বোঝানো যায় না। 

“আমি একটা ঘোষণা দিতে চাই, আমাদের পাটপণ্য এবং পাটকে আমরা কৃষিজাত পণ্য হিসেবেই বিবেচনা করব।”    

অনুষ্ঠানে পাটকে কৃষিজাত পণ্যের ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে শুরুতেই দাবি জানান বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।

তিনি বলেন, পাট কৃষিপণ্য হিসেবে বিবেচিত না হওয়ায় অন্যান্য কৃষিপণ্যে যে ধরনের সরকারি ভর্তুকির সুযোগ রয়েছে পাটে তা নেই।

তাই পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার অনুরোধ জানান সাবের।

এরপর পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আযম, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামানিকও বক্তব্যে পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানান।

শেখ হাসিনা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য, পোশাকসহ পাট থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি এবং ব্যবহারের কথা তুলে ধরেন এবং পরিবেশসম্মত এ পণ্যের ব্যবহার ও উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দেন।

“কাজেই আমি চাইব, আমাদের এ সম্পদটাকে যে কোনো ভাবেই হোক রক্ষা করতে হবে।”

এ পণ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলেও মনে করিয়ে দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “নিজেদের যে সম্পদ আছে তা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। কারও কাছে হাত পেতে বা ভিক্ষা করে নয়; নিজেদের মর্যাদা নিয়ে বিশ্বসভায় চলব আমরা।”

সরকারি হিসাবে একসময় দেশে ৮৭টি পাটকল থাকলেও আশির দশক থেকে এগুলো বেসরকারিকরণের নামে ‘নামমাত্র’ মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া শুরু হয়। ৬০টির বেশি মিল এভাবে বেসরকারিকরণ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা এদেশের যে বিষয়গুলো সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং যেগুলো স্বাধীনতার সংগ্রামের সেগুলো ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল।

সেনা শাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদের পর খালেদা জিয়ার শাসনামলে কীভাবে পাটখাতকে ধ্বংস করা হয়েছে তাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছিল যে, বাংলাদেশে পাটকলগুলো বন্ধ করে দেবে এবং গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের বিদায় দেবে।

“একই সময় ভারতের সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের চুক্তি; সেটা ছিল-ভারত নতুন পাটকল তৈরি করবে।”

তখন সংসদে এ বিষয়টা তুলে ধরে এর বিরোধিতা করার কথা উল্লেখ করেন তখনকার সংসদের বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনা।

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজীসহ অন্যান্য পাটকল বন্ধ করে দিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে কি হবে না সেটা নির্ভর করে কীভাবে সেটা পরিচর্যা‌ হয়। সেই জায়গায় না গিয়ে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া, ধ্বংস করে দেওয়া এটা কখনোই দেশের স্বার্থে মঙ্গলজনক না।”

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার শাসনামলে পাঁচটি পাটকল ও দুটি বস্ত্রকল পুনরায় চালু করা হয়েছে।

“পাট শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। কিন্তু একে ধ্বংস করার একটা ষড়যন্ত্র আমরা দেখছি।”

পাটের উন্নয়নে তার সরকারের উদ্যোগে পাটের জিনোম আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পরিবেশ নিয়ে বিশ্বে আলোচনা হচ্ছে। পাটের চেয়ে পরিবেশবান্ধব পণ্য আর কোনটাই হতে পারে না।”

বিশ্বব্যাপী সিনথেটিক থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পাট সব থেকে বড় প্রাকৃতিক তন্তু। কাজেই এটাকে আমাদের আরও উন্নত করতে হবে।”

“পাটের সঙ্গে কৃষকের, শ্রমিকের ভাগ্য জড়িত। আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষেরই সংগঠন।”

বিএনপির সময় পুলিশের গুলিতে শ্রমিক হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তারা শুধু পাটকলই বন্ধ করেনি, শ্রমিকও হত্যা করেছে।”

শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর জন্য মজুরি কমিশনেরও ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ১৩টি ক্যাটাগরিতে ৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা তুলে দেন এবং পাটপণ্যের মেলা ঘুরে দেখেন।