লাখো চাকুরের তথ্য ভুল, হিমশিম খাচ্ছে এনআইডি উইং

জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা মিস ঘোষের নামের ইংরেজি বানান ‘ghoush’; জন্মতারিখ রয়েছে ১৩ মে। এসএসসি সনদ অনুযায়ী তার নামের বানান ‘Ghosh’ ও জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি করতে হবে।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2016, 07:04 AM
Updated : 16 Jan 2016, 07:04 AM

চাকরি জীবনের শেষ সময়ে এসে পৌঁছেছেন জাহাঙ্গীর হাওলাদার। তার নামের ‘হাওলাদার’ অংশটি বাদ যাবে, ইংরেজি বানানে ‘jahangir’ এর স্থলে ‘zahangir’ হবে।

পাশাপাশি বাবার নাম ‘মন্নান’ এর পরিবর্তে হবে মো. মান্নান এবং ইংরেজিতে ‘md’ যোগ হবে।

ভোটার হওয়ার সাত বছর পর নিজেদের জাতীয় পরিচয়পত্রের এসব ভুল সংশোধন করছেন তারা।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের আগারগাঁওয়ের এনআইডি উইং কার্যালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য ধরনা দিয়েছেন এমন দুই লাখেরও বেশি সরকারি চাকুরে।

এনআইডি উইংয়ের পরিচালক (অপারেশন্স) সৈয়দ মোহাম্মদ মুসা শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত দুই মাসে অন্তত এক লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আরও এক লাখের বেশি অনিষ্পন্ন আবেদন রয়েছে।”

গত ১৫ ডিসেম্বর সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশের পর জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের হিড়িক পড়ে। নতুন স্কেলে বেতন নির্ধারণ করতে চাকরিজীবীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে জানানো হয়েছে, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্ম তারিখ, নামের বানান ও অন্যান্য তথ্য চাকরির রেকর্ড বুক থেকে ভিন্ন, তাদের বেতন নির্ধারণের আগে নিজ উদ্যোগে অবশ্যই এনআইডি সংশোধন করে নিতে হবে।

বিজয় দিবসের পরদিন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা নির্ধারণের সফটওয়্যার ‘আইবাস প্লাস প্লাস’ উদ্বোধন করেন।

যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এই সফটওয়্যারে ঢুকে এনআইডি নম্বর, কর্মরত পদ, চাকরিতে যোগদানের তারিখ, কতগুলো টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন তার তথ্য এবং সর্বশেষ স্কেলের তথ্য দিলেই নতুন স্কেলে তার বেতন কত দাঁড়াচ্ছে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে। মিলবে অবসর ভাতার তথ্যও।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনে এই লাইন আর দীর্ঘ করেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাত ভাগের এক ভাগ ইতোমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন চেয়েছেন। শুধু নাম, জন্মতারিখই নয়, হরেক রকমের তথ্য সংশোধনের হিড়িকে এনআইডি উইং রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানান, হঠাৎ সরকারি চাকুরেদের এমন তৎপরতায় এনআইডি সেবার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধিত এনআইডি নেওয়ার তাগিদ দেওয়ায় কিছুটা বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হচ্ছে।

জরুরি প্রয়োজনের পাশাপাশি নির্ভুল স্মার্টকার্ডের জন্য অনেকে তথ্য এখন তথ্য সংশোধন করছে এখন।

বর্তমানে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত ১০ কোটিরও বেশি নাগরিকের মধ্যে প্রতিদিন হাজার দুয়েক নাগরিক পরিচয়পত্র সংশোধন, হারানো এনআইডি উত্তোলনসহ নানা সেবা নিতে আগারগাঁওয়ের কার্যালয়ে আসছেন। পাশাপাশি উপজেলা পর্যা‌য়ের নির্বাচন অফিসেও যাচ্ছেন কয়েকশ লোক।

এনআইডি উইংয়ের পরিচালক মোহাম্মদ মুসা বলেন, “প্রতিদিন অসংখ্য আবেদন আসছে। শুধু সরকারি চাকুরেদের তথ্য সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।

“একমাস ধরে শুক্র-শনিবারও কাজ চলছে। ইসির অতিরিক্ত ২০ জন কর্মকর্তাসহ শ’খানেক লোক নিয়ে এনআইডি উইং কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।”

কেন্দ্রীয়ভাবে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও সংশ্লিষ্টদের আবেদন পাঠিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ইসির এ উপসচিব।

এতদিন ধরে ভুল তথ্য দিয়ে চাকরি করাটা বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।

“আমরা রীতিমতো বিস্মিত। বড় কর্তা থেকে ছোট কর্মচারী- অনেকেই নিজের জন্ম তারিখ, নিজের নাম, বাবা-মার নাম সংশোধন করছেন। এনআইডি হাতে পাওয়ার পর সাত বছর ধরে একবারের জন্যও কারও মনে হল না তা সংশোধন করি! বেতন স্কেল ঠিক করতে অর্থ মন্ত্রণালয় সার্কুলার না দিলে তো কখনই কেউ তা সংশোধন করত কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।”

সার্বিক বিষয়ে সৈয়দ মূসা বলেন, “সরকারি চাকুরেদের বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করছি আমরা। সবাইকে সেবা দেওয়া হবে। কিন্তু অবস্থা বিবেচনা করে ধৈর্য ধরতে হবে এবং আমাদের পরিস্থিতিও তাদেরকে বুঝতে হবে।”