চোখেমুখে আনন্দের ছাপ নিয়ে এমনটাই বলছিলেন নদীর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু দেখতে আসা সদ্য বিবাহিত সাথী মজুমদার।
প্রমত্তা পদ্মার ওপাড় শ্বশুরবাড়ি বিক্রমপুর থেকে ২০ দিন আগেই এসেছেন বাবার বাড়িতে৷ নদীর আরেক পাড়ে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাংলাবাজারে তার বাবার বাড়ি, সেতু থেকে যা একেবারেই কাছে।
শনিবার পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচনের পর সাথী বিকাল বেলা স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন সেতুর জাজিরাপ্রান্তে। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সাগর বলেন, "ভাবছিলাম ব্রিজের উপর একটু উঠে কয়েকটা ছবি তুলব। সেতু উন্মুক্ত করে দিলে তখন তো আর ব্রিজে দাঁড়ানো যাবে না।"
শ্বশুরবাড়ি আর নিজের বাড়ির মধ্যে এখন শুধু একটা সেতুর দূরত্ব- উত্তাল পদ্মা আর পাড়ি দিতে হবে না বলে তাকেও বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা যায়।
শনিবার উদ্বোধনের পর সেতু দেখতে সাথী-সাগরের মত অগুনিত মানুষ আসছেন। সময় যত গড়িয়েছে ভিড় ততই বেড়েছে সেতু এলাকায়। সন্ধ্যার পরেও এতটুকু কমেনি তা। ফিরে যাওয়াদের জায়গা নিয়েছেন নতুনরা।
সেতু এলাকায় এদিক সেদিক ঘুরে দূর থেকে সেতুর সঙ্গে ছবি তুলে, গল্পগুজব আর আনন্দ-উল্লাসে সময় পার করেন তারা।
শনিবার সেতু উদ্বোধনের দিনে এ পথ দিয়ে সেতু পার হয়ে পদ্মার ওপাড়ে গেছে শুধু আইন শৃংখলায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর গাড়ি।
অপরদিকে সেতু থেকে নেমে ভাঙ্গার দিকে যাওয়ার সড়কে ছিল বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষের ভিড়। ছবি তুলতে আর উল্লাস করতে দেখা গেছে তাদের।
বেলা ১২টার পর জাজিরা প্রান্তে ফলক উন্মোচন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহর চলে যাওয়ার পরই মানুষের উপস্থিতি হতে শুরু করে সেখানে।
এরপর দেড়টার দিকে কাঁঠালবাড়িতে জনসভা শেষের কিছু সময় পরই নামে বৃষ্টি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে এসময় কিছু মানুষকে সেতুর সামনেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
মাদারীপুরের শিবচর ও শরীয়তপুরের জাজিরার দিক থেকে মানুষদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয় সেনাবাহিনীসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের।
এদিকে, দুপুর ১টার দিকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে নিষেধাজ্ঞা ঠেলে বিপুল সংখক মানুষ সেতুর উপরে উঠে যায়। সেতুর পাশে দেওয়া বেড়া টপকে সেতুতে উঠতে দেখা যায় তাদের।
দীর্ঘ সময় পর তাদের বুঝিয়ে সেতু থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান দুই পাড়ের নবগঠিত থানার ওসি।
জাজিরা প্রান্তে মানুষের এ ভিড়ে ছিলেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট শাহজাহান আলী বাদশাহও। শুক্রবার দিনাজপুর থেকে সপরিবারে রওনা দিয়ে শনিবার জাজিরা প্রান্তে এসেছেন শুধু স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখার জন্য।
"প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের মানুষের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে।"
জাজিরা শেখ রাসেল ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোহাম্মদ মিন্টু। বিকালে তাকেও দেখা যায় হাসি হাসি মুখ নিয়ে জাজিরা প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে।
মিন্টু বলেন, "যদিও এখান থেকে আমার বাড়িতে যেতে পদ্মা সেতু পার হতে হবে না। তবুও দক্ষিণের লোকজনের সাথে এ আনন্দ উৎসবে আমিও শামিল হয়েছি। পদ্মা সেতু আসলে শুধু দক্ষিণের না, সারা বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটা দেখার বিষয়।"
আরও পড়ুন