দৌড়েই পদ্মা সেতুতে উঠে পড়লেন তারা

উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে না হতেই আবেগতাড়িত হয়ে পদ্মা সেতুতে নামে উৎসুক জনতার বাধ ভাঙ্গা ঢল; বেশ কিছু সময় সেখানে তাদের ঘোরাঘুরির পর সেতু ফাঁকা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক বেগ পেতে হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2022, 01:04 PM
Updated : 25 June 2022, 01:10 PM

মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ঝড়ের বেগে সেতুতে উঠে পড়া অগুনিত এসব মানুষ চেষ্টা করেন ওপারে জাজিরা প্রান্তে যেতে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বুঝে ওঠার আগেই সেতুতে অনেক দূর চলেও যান তারা। পরে অনেক চেষ্টার পর তাদের বুঝিয়ে নামিয়ে আনা হয় বলে জানান দুই পদ্মা পাড়ের নবগঠিত দুই থানার ওসি।

শনিবার সকালে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর অতিথিদের নিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মাওয়া প্রান্তে আচমকা উঠে পড়েন হাজারো মানুষ।

এর কিছুক্ষণ পরই মাওয়া প্রান্তে সেতুর বিভিন্ন সংযোগ সড়ক হয়ে হাজার হাজার উৎসুক জনতাকে মূল সেতুর দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রীর জনসভা শেষে জাজিরা প্রান্তেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

হাজারো মানুষকে সীমানা প্রাচীর ভেঙে ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেতুর দিকে উঠতে শুরু করে। প্রথম দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চুপচাপ থাকলেও ঘণ্টা দুয়েক পর তারা তৎপর হয়।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মাওয়া প্রান্তে যেই পথ ধরে সেতু থেকে গাড়িগুলো নেমে আসার কথা সেই পথ ধরেই এগিয়ে যায় উৎসুক জনতা। পায়ে হাঁটা ছাড়াও অনেকেই মোটরসাইকেল নিয়েও মূল সেতুতে পৌঁছে যায়।

সেতুর ১০ নম্বর পিলার পর্যন্ত চলে যেতে দেখা যায় উৎসুক এসব জনতাকে। এক পর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে তারা ফিরে আসতে থাকেন। কিন্তু এর মধ্যে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলাও হয়।

এর আগে এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উদ্বোধনের দিন কিছু সময়ের জন্য পায়ে হেঁটে সেতুতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন। অবশ্য এদিন নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এধরনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।

জাজিরাপ্রান্তে সেতুর দিক থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরতে থাকা আলমগীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দীর্ঘ এক দশক ধরে নির্মাণযজ্ঞ দেখে এসেছি। এই সেতু আমাদের অনেক বড় আবেগের জায়গা।

“আমার স্বপ্ন ছিল উদ্বোধনের দিনই আমি সেতুতে উঠে যাব। আজ যতটুকু সুযোগ পেয়েছি তাতে বেশি দূর আগাতে পারিনি। সুযোগ পেলে আমি পায়ে হেঁটে সেতুর ওই পাশে চলে যেতাম।“

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভা থেকে চলে যাওয়ার পর উৎফুল্ল জনতা বাধা না মেনেই সেতুর উপরে উঠে যান। এরপর তারা সেখানে নেচে গেয়ে উল্লাস করতে থাকেন।

অনেকেই মুহূর্তটি স্মরণীয় করে রাখতে ছবি তোলেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ দেওয়া শুরু করেন। দীর্ঘ সময় পর অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব এসে তাদের সেতু থেকে নামিয়ে আনে।

পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, এতদিনের অপেক্ষা আর স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে তারা আবেগে উঠে পড়েছিল। তারা তো সেখানে মারামারি করতে যায়নি, দেখতে গিয়েছিল। পরে তাদেরকে বুঝিয়ে বলার পরে সবাই নেমে গেছে।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সেতু নিয়ে সাধারণ মানুষের একটা আবেগের বিষয় কাজ করেছে। আবেগের তাড়নায় সাধারণ মানুষ সেতুতে উঠে পড়েছিল। কিছুক্ষণ পরে তাদের বুঝিয়ে বলার পর নেমে গেছে। এখানে অন্য কোনো কোন সমস্যা হয়নি।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন শরীয়তপুর প্রতিনিধি]