সড়কে নৌকা চালিয়ে সম্মেলনে এসেছেন আওয়ামী লীগের সমর্থক সিদ্দিক মিয়া।

|

ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

)<div class="paragraphs"><p>সড়কে নৌকা চালিয়ে সম্মেলনে এসেছেন আওয়ামী লীগের সমর্থক সিদ্দিক মিয়া।</p></div>
রাজনীতি

‘পদ-পদবি কিছু না, ভালোবাসি আওয়ামী লীগকে’

Byরাসেল সরকার

এই শীতে তিন দিন তিন রাত নৌকার আদলে তৈরি রিকশার প্যাডেল চেপে নেত্রকোণা থেকে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় পৌঁছেছেন ৭৫ বছর বয়সী সিদ্দিক মিয়া।

জীবন সায়াহ্নে পৌঁছা এই ব্যক্তি বললেন, “আমার কাছে পদ-পদবি কিছু না। আমি আওয়ামী লীগকে ভালোবাসি। ভালোবাসার জায়গা থেকে আমি নেত্রকোণা থেকে তিন দিন তিন রাত প্যাডেল চেপে এখানে এসেছি।”

সিদ্দিক মিয়ার মতো এমন হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উচ্ছ্বসিত করতালির মধ্যে শনিবার সকালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিরূপ সময় মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা বরাবরই সিদ্দিক মিয়ার মতো সমর্থকদেরই জয়গান গেয়ে আসছেন।

পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে কাউন্সিলর ও প্রতিনিধি মিলিয়ে ১৫ হাজার নেতা যোগ দিতে পারলেও উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সারাদেশ থেকেই এসেছেন নেতা-কর্মীরা। কেউ কেউ একদিন আগেই পৌঁছে যান। শনিবার সকালে তারা ছুটতে থাকেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে।

সকাল থেকে সাদা পাঞ্জাবি-কালো কোটসহ রঙ বেরঙের নানা পোশাক আর ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থলে জড়ো হতে থাকেন তারা।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মিছিল নিয়ে ঢুকেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা

শাহবাগের মোড় থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য, হাকিম চত্বর, দোয়েল চত্বর,মৎস্য ভবন, রমনা গেইটসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চার দিকেই উৎসবের আমেজে নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই মিছিলে মুখ বাড়তে থাকে।

৭৩ বছর পেরিয়ে আসা দলটির এই নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে এবার নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে নেতৃত্ব গঠন করা হবে।

দলটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকার নানা ধরনের স্মৃতি উঠে আসে তাদের কথায়; জানান দল নিয়ে ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষার কথাও।

সম্মেলনে যোগ দিতে আসা সিদ্দিক মিয়া আমৃত্যু ‘নৌকার মাঝি’ হয়েই থাকতে চান।

“আমি অনেক ইতিহাসের সাক্ষী, ৭০ এর নির্বাচন দেখেছি, বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখেছি। নৌকা আমাদের ইতিহাসেরই অংশ, আমাদের উন্নয়নের প্রতীক। তাই ২০১৪ সাল থেকে আমি এই নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আসি। যতদিন বাঁচি, আমি এই নৌকার মাঝি হয়ে থাকব।”

সম্মেলন সফল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন এই আওয়ামী লীগ সমর্থক

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থেকে আসা ৭২ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক ভূইয়া মনে করেন, রাজনীতিতে নবীন-প্রবীণের মিলনমেলা না থাকলে রাজনীতি হয় না।

“নবীন-প্রবীণের মিলন মেলাই রাজনীতির সৌন্দর্য। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী চেয়ে বঙ্গবন্ধুর বয়স কম ছিল। তাদের শিষ্য ছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তাদের সমন্বয়ে রাজনীতি হয়েছে। যে কারণে আজকে এদেশের স্বাধীনতার প্রতীক বঙ্গবন্ধু।”

সম্মেলনে মিনারুলের নৌকা

‘জয় বাংলা’ নামে ডিজিটাল নৌকা নিয়ে খুলনা থেকে সম্মেলনে এসেছেন মিনারুল ইসলাম। তার ভাষ্য, “এই প্রচারণার মাধ্যমে আমি সরকারের উন্নয়নমূলক কাজগুলো তুলে ধরি। আমাদের জাতির পিতার প্রিয় মার্কা ছিল নৌকা। বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল হয়েছে, তাই আমি ডিজিটাল নৌকা নিয়ে এখোনে এসেছি।”

মাথায় নৌকা নিয়ে সম্মেলনে আসেন শরীয়তপুরের মোহাম্মদ আলী। তার প্রত্যাশা, আগামী নির্বাচনে দেশের জনগণ আবারও নৌকা প্রতীকেই ভোট দেবে।

তিনি বলেন, “উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনা বিকল্প নাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে।”

মা খায়রুন নাহার লাকী পটুয়াখালীর আওয়ামী লীগের নেতা আর ছেলে আদনান হাবিব খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

মাকে নিয়ে সম্মেলনে আসা আদনানের প্রত্যাশা, আওয়ামী লীগের হাত ধরে এদেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত হবে। আর লাকী চান, শেখ হাসিনা যতদিন বাঁচবেন, দেশের নেতৃত্বে যেন তিনিই থাকেন।

আওয়ামী লীগের নবীন কর্মী শফিকুল আলম বাবুল খান চান, আগামী কমিটি গড়ে উঠুক নতুন-পুরাতনের মেলবন্ধনে।

সম্মেলনে যোগদিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা

তিনি বলেন, “১৯৮০ ও ৯০ এর দশকে ছাত্র রাজনীতি ও যুব রাজনীতির মাধ্যমে যারা বেরিয়ে এসেছেন, তাদেরকে এখন আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃত্বে সম্পৃক্ত করে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে যাতে কমিটি হয়, সেই প্রত্যাশা আামি করি।

হাসান নিটোল নামে আওয়ামী লীগ কর্মীর কথা হল, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ ‘উন্নয়নের রোল মডেল’।

“তিনি যতদিন বেঁচে আছেন, ততদিন দলের নেতৃত্ব দেবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে শেখ হাসিনার এই উন্নয়ন… উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।”

SCROLL FOR NEXT