বাংলাদেশ

বর্ধমানকাণ্ডে সন্দেহভাজন ৩ রোহিঙ্গা জঙ্গি ঢাকায় আটক

Byনিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে লালবাগ এতিমখানা মোড় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এই তিনজন হলেন- নূর হোসেন ওরফে রফিকুল ইসলাম (২৬), ইয়াসির আরাফাত (২২) ও ওমর করিম (২৫)।

তাদের কাছে পাঁচটি ডেটোনেটর, দুটি জেল বোমা এবং বিস্ফোরক তৈরির উপাদান পাওয়া গেছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাঈদুর রহমান জানান।

তিনি বলেন, “এরা রোহিঙ্গা জঙ্গি। মিয়ানমারের জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন (এআরইউ) ও নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এনজিও গ্লোবাল রেহিঙ্গা সেন্টারের (জিআরসি) সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।”

পরে পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ভারতের বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনার পর আন্তঃদেশীয় জঙ্গি নেটওয়ার্কের খোঁজে বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দাদের মধ্যে যে তথ্য বিনিময় হয়েছে তার ভিত্তিতেই ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এরা জেএমবির সঙ্গে জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মাঝে মাঝে এরা এক সাথে কাজ করে থাকে।”

এই তিনজনের মধ্যে আরাফাত চট্টগ্রামের পটিয়া আল জামিয়া কওমী মাদ্রাসার ছাত্র। আর নূর হোসেন হাটহাজারীর ইছাপুর মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র। ওমর করিম পড়াশোনা করেছে হাটহাজারীর ফতেপুর মাদ্রাসায়।

গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে এনআইএ  কর্মকর্তারা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার কথা জানায়।

ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদ নারায়ণগঞ্জের মাসুম বলে বাংলাদেশের গোয়েন্দারাও নিশ্চিত হয়েছেন।   

বর্ধমানের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত মাসে হায়দ্রাবাদে খালিদ ওরফে খালিদ মোহাম্মদ নামে মিয়ানমারের এক নাগরিককে আটক করা হয়।

ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা বলছে, খালিদ মিয়ানমারের উগ্রপন্থি সংগঠন তেহেরিক-ই-আজাদি আরাকান এর হয়ে পাকিস্তানের তেহেরিকেই তালিবানের কাছ থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেন।

এই খালেদ ওরফে আব্দুর নূরই ঢাকায় গ্রেপ্তার তিন রোহিঙ্গা জঙ্গির ‘আদর্শিক গুরু’ বলে সাঈদুর রহমান জানান।

কৃষ্ণপদ রায় জানান, বর্ধমানের ঘটনায় সন্দেহভাজনদের যে তথ্য ভারতীয় গোয়েন্দারা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে দুজনের সঙ্গে নূর হোসেন ও ইয়াসিরের মিল পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে নূর হোসেন চার বছর, ফারুক ১২ বছর এবং আরাফাত ১ বছর ধরে বাংলাদেশে রয়েছে বলে জানান তিনি।

নুর হোসেন ও ইয়াসির সরাসরি বর্ধমানের ঘটনায় জড়িত ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওই ঘটনায় তাদের যোগাযোগের যোগসূত্র পেয়েছি।”

এর আগে কলকাতায় গ্রেপ্তার জেএমবি জঙ্গি সজিদের স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে (২৫) গত ২২ নভেম্বর ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন চট্টগ্রামের একটি হোটেল থেকে এক পাকিস্তানি নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যারা রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশের ধারণা।

জাতিগত ও রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে প্রায় দুই দশক আগে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকা শুরু করে। কক্সবাজারের দুটি ক্যাম্পে ৩৪ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গার বাইরে আরো প্রায় দুই থেকে তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়।

বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা বিদেশে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশি-বিদেশি কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের নামে জঙ্গি কার্যক্রমে ইন্ধন দিচ্ছে বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

SCROLL FOR NEXT