বাংলাদেশ

ইউনেসকোর বক্তব্যে সরকারের মিথ্যাচার স্পষ্ট হল: তেল-গ্যাস কমিটি

Byনিজস্ব প্রতিবেদক

‘একগুয়েমি’ ছেড়ে এখন সুন্দরবনের কাছ থেকে ওই প্রকল্পটি সরিয়ে নিতেও সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে নাগরিক সংগঠনটি।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর সোমবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানান তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও আনু মুহাম্মদ।

এই মাসের শুরুতে পোল্যান্ডের ক্রাকাও শহরে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির সভায় সুন্দরবন বিষয়ে শুনানিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত রোববার জাতিসংঘ সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।

ওই সভার পর সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল, ইউনেসকো সুন্দরবনের কাছে রামপালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে ‘আপত্তির জায়গা থেকে সরে এসেছে’।

তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রবিরোধী পরিবেশ ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সরকারের ওই বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে।

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তটি প্রকাশের পর দেখা যায়, তার সঙ্গে সরকারের বক্তব্য পুরোপুরি মিলছে না।

তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, “ইউনেসকোর সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের মাধ্যমে সুন্দরবনবিনাশী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সরকারের মিথ্যাচার, একগুঁয়েমি এবং প্রতারণার ন্যক্কারজনক চিত্র স্পষ্ট হল।

“জনগণের অর্থ খরচ করে দলেবলে ইউনেসকোকে প্রভাবিত করবার একাধিক ঘোষণার পর সরকার থেকে বলা হয়, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সম্পর্কে ইউনেসকো তার আপত্তি প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু ইউনেসকোর প্রকাশিত সিদ্ধান্তে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, কৌশলগত পরিবেশগত সমীক্ষা (এসইএ) না হওয়া পর্যন্ত সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোনো ধরনের শিল্প বাণিজ্যিক স্থাপনা করা যাবে না।”

সরকার আয়োজিত এক মেলায় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মডেল (ফাইল ছবি)

সরকার আয়োজিত এক মেলায় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মডেল (ফাইল ছবি)

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধি দলের প্রধান তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী সোমবারই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। সবাই দেশকে ভালোবাসে। ভুল ব্যাখ্যা বা সঠিক ব্যাখ্যা বলতে কিছু নেই। কোনো সমস্যা থাকলে সমাধানের উপায় নিয়ে আসতে হবে।”

তিনি দাবি করেন, ক্রাকাও বৈঠকে ইউনেসকো আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করতে বলেনি ইউনেসকো। সুন্দরবনকে এখন ঝুঁকিপূর্ণও বলছে না সংস্থাটি।

তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটিসহ পরিবেশ আন্দোলনকারীরা বলছেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।

ইউনেসকোর সুপারিশ অনুযায়ী একটি পরিবেশগত সমীক্ষা চালালেও রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ বন্ধ রাখা হবে না বলে জানান তৌফিক ইলাহী।

অন্যদিকে ইউনেসকোর সিদ্ধান্ত পূর্ণ বাস্তবায়ন করে ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের প্রকল্পটি সুন্দরবন এলাকা থেকে সরানোর দাবি জানিয়েছে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি।

সরকারের ‘একগুঁয়েমি’ ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ, বিশেষজ্ঞ মত ও ক্রমবর্ধমান জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবিলম্বে রামপাল চুক্তি বাতিলসহ সুন্দরবনবিনাশী বনগ্রাসী সব তৎপরতা বন্ধ করুন।”

SCROLL FOR NEXT