ট্রাম্পের আমেরিকা জয়

বিশ্বকে হতবাক করে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা তাদের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে নিউ ইয়র্কের ধনকুবের রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।    

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2016, 08:46 AM
Updated : 9 Nov 2016, 10:06 PM

এর আগে কোনো রাজনৈতিক দায়িত্বের অভিজ্ঞতা না থাকা ট্রাম্প মঙ্গলবারের নির্বাচনে হোয়াইট হাউজে যাওয়া নিশ্চিত করেছেন সাবেক ফার্স্টলেডি ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে ইলেকটোরাল কলেজের ৫৩৮টি ভোটের মধ‌্যে ২৭০টি পেলেই চলে। রয়টার্সের তথ‌্য অনুযায়ী, সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলে ট্রাম্প জিতে নিয়েছেন ২৯০টি ইলেকটোরাল ভোট। আর ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি পেয়েছেন ২২৮ ভোট।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ৮৩ বছর পর নতুন একজন প্রেসিডেন্ট এলেন, যার রাজনৈতিক পদে দায়িত্ব পালনের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এর আগে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই ছিলেন সাবেক গভর্নর, সিনেটর কিংবা পাঁচ তারকা জেনারেল।

অভিবাসী, মুসলমান ও নারীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব‌্যের কারণে সমালোচনা, একের পর এক নারীর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, রিপাবলিকান পার্টির অনেক রথি-মহারথি সমর্থন প্রত‌্যাহার এবং অনেক বিশ্ব নেতা ও বুদ্ধিজীবীর প্রকাশ‌্যে অনাস্থা প্রকাশের কারণে ট্রাম্পের পক্ষে বাজি ধরার লোকেরও অভাব ছিল। ভোটের আগে সর্বশেষ জনমত জরিপে হিলারিকেই এগিয়ে রেখেছিল, বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন এর জনমত জরিপ।    

কিন্তু রিয়েল এস্টেট, এনটারটেইনমেন্ট ও স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রির সফল ব্যবসায়ী ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ অধিপত‌্য ফিরিয়ে আনার যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তার কাছে মিথ‌্যা হয়ে গেছে অন‌্য অনেক কিছু। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে ৭০ বছর বয়সী ট্রাম্প বলেছেন, তিনি হবেন ‘সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট’। আমেরিকাকে তিনি ‘শীর্ষে’ রাখবেন সব সময়।

দুই যুগের বেশি সময় ধরে আমেরিকার রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে বিচরণ করা হিলারি ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হবেন বলে আশা করেছিলেন সমর্থকরা। তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

হিলারি বলেছেন, ট্রাম্প ‘সকল আমেরিকানের জন‌্য একজন সফল প্রেসিডেন্ট’ হয়ে উঠবেন- এই তার আশা।

বিজয়ী প্রার্থী ট্রাম্প নিউ ইয়র্কে তার নির্বাচনী প্রচারের হেডকোয়ার্টারে সমর্থকদের সামনে ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে শুরুতেই বলেন, হিলারি তাকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেজন‌্য হিলারিকে ধন্যবাদও দেন ট্রাম্প।

ভোটের কারণে দ্বিধাবিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রকে আবার ঐক‌্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, “যারা অতীতে আমাকে সমর্থন দেননিতারা সংখ্যায় কম হলেও আমি তাদের কাছে সাহায্য  দিক নির্দেশনার জন্য যাব। যার মধ্য দিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারবদেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারব।

নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। দায়িত্ব হস্তান্তর নিয়ে আলোচনার জন‌্য বৃহস্পতিবার ট্রাম্পকে তিনি হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।

আমেরিকার ভোটের এই ফলাফলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে ‘খুশি’, সে কথা জানিয়েছেন তার একজন মুখপাত্র। ট্রাম্পের জন‌্য অভিনন্দন এসেছে বাকি বিশ্বনেতাদের কাছ থেকেও। তবে ইউরোপ এই ভোটের ফলের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সতর্কতার সঙ্গে।

ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার খবরে বিশ্ব অর্থনীতিতেও তাৎক্ষণিকভাবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আমেরিকার ডলার আর মেক্সিকোর পেসোর দাম কমে গেছে, শেয়ারবাজারে হয়েছে দরপতন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এ ফলাফলকে প্রায় সব আন্তর্জাতিক গণমাধ‌্যমেই ‘অপ্রত‌্যাশিত’ বলা হয়েছে। তবে মঙ্গলবারের ভোটে ট্রাম্পের পাশাপাশি তার দলও বড় সাফল‌্য পেয়েছে।

আগামী ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন, নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষেই নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির সংখ‌্যাগরিষ্ঠতার সুবিধা তিনি ভোগ করবেন।

নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ আগেই রিপাবলিকানদের হাতে ছিল, এবারের নির্বাচনে সিনেটেও তারা সংখ‌্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।

.............................

.............................

কী দেখাবেন ট্রাম্প?

যুক্তরাষ্ট্রকে ‘শীর্ষে নিতে’ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দায়িত্বে কী কী করবেন, তার একটি ধারণা গত মাসে এক ব্ক্তৃতায় তিনি জানিয়েছিলেন। 

>> ট্রাম্প বৈধ অভিবাসন কমানোর কথা বলছেন। নথি বা কাগজপত্র নেই এমন অভিবাসীদের দ্রুত দেশে পাঠানোর পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান করার পক্ষে তিনি। 

>> ট্রাম্প বলেছিলেন- আমেরিকার মাটিতে থাকা ১ কোটি ১০ লাখের বেশি নথিবিহীন অভিবাসীকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হবে।

>> প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যত নির্বাহী আদেশ দিয়ে গেছেন, তার সব বাতিল করার অঙ্গীকার রয়েছে ট্রাম্পের।

>> হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের লবিস্ট হওয়া ঠেকাবেন তিনি। সর্বোচ্চ কতবার কংগ্রেস সদস‌্য হওয়া যাবে, সেই সংখ‌্যা বেঁধে দেবেন।

>> জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সই হওয়া প্যারিস চুক্তি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তিতে মার্কিন স্বার্থ বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় গেলে এসব চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর প্রতিশ্রুতি রয়েছে তার ইশতেহারে।  

>> জাতিসংঘের জলবায়ু তহবিলে যুক্তরাষ্ট্রের যে অর্থ দেওয়ার কথা, সেই টাকা ট্রাম্প ব‌্যয় করতে চান যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামো সংস্কারে। এর মধ‌্য দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে তার।

>> ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারে গিয়ে তিনি চীনকে ‘কারেন্সি ম‌্যানুপুলেটর’ হিসেবে চিহ্নিত করবেন।     

ভোটে জয়ের পর ট্রাম্প পরিবার। ছবি: রয়টার্স

ভোটের প্রচারে মুসলমানদের আমেরিকায় ঢোকা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণাও ট্রাম্প দিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে ওই বক্তব্য থেকে সরে এলেও তার অভিবাসন নীতি বদলায়নি।

যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো সীমান্তে দুই হাজার মাইলের বেশি দীর্ঘ দুর্ভেদ্য দেয়াল তোলার অঙ্গীকার রয়েছে ট্রাম্পের। সমালোচকেরা একে অবাস্তব ও ব্যয়সাপেক্ষ বললেও এ বিষয়ে দলের সমর্থন তিনি পাচ্ছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে জোর দিতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারে তিনি বলেছেন- ইউরোপ ও এশিয়ায় মিত্র দরকার আমেরিকার।

প্রথম থেকেই ইরাক যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক পদক্ষেপের সমালোচনা করে আসা ট্রাম্প বলেছেন- নেটো জোটের ব্যয়ের একটা বড় অংশ দেয় আমেরিকা। এটা ঠিক নয়। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই জোটের সদস্যদের আরও অর্থ ব্যয় করা উচিত।

বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের করা বিভিন্ন অর্থনৈতিক চুক্তি নিয়েও নাখোশ ট্রাম্প। তার মতে, এসব চুক্তির ক্ষেত্রে আমেরিকার স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি।

বহুল আলোচিত ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তিরও বিরোধিতা করছেন ট্রাম্প। দায়িত্ব নেওয়ার পর নর্থ আমেরিকা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (নাফটা) নিয়ে নতুন করে দর কষাকষি করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে তার।

কাজে আসেনি জরিপ

নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সংস্থার করা গাদা গাদা জরিপকে ভুল প্রমাণ করে চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউজে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নির্বাচনের আগে বেশিরভাগ গণমাধ্যমের ধারণা ছিল, দোদুল্যমান রাজ্য বলে পরিচিত ‘ব্যাটল গ্রাউন্ডে’ ভোটের ফল হিলারির পক্ষে থাকবে।

রয়টার্স তাদের সর্বশেষ জরিপে হিলারির জয়ের সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ বলে জানিয়েছিল। বিবিসিও বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের জরিপকে গড় করে হিলারির দিকেই পাল্লা ভারী রেখেছিল।

বিতর্কিত মন্তব্য, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সখ্যতাসহ নানা কারণে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর ভোট হিলারির গাধা প্রতীকেই পড়বে বলে ধারণা করেছিল তারা।

কিন্তু সেসবকে উড়িয়ে দিয়ে ট্রাম্পের হাতির পক্ষেই রায় দিয়েছেন অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক। 

রয়টার্সের দেওয়া ফল অনুযায়ী, ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন আইডাহো (৪টি ইলেকটোরাল ভোট), ইউটা (৬টি), মন্টানা (৩টি), ওয়াইওমিং (৩টি), নর্থ ডাকোটা (৩টি), সাউথ ডাকোটা (৩টি), কানসাস (৬টি), ওকলাহোমা (৭টি), টেক্সাস (৩৮টি), লুইজিয়ানা (৮টি), আরকানস’ (৬টি), মিজৌরি (১০টি), আইওয়া (৬টি), মিসিসিপি (৬টি), আলাবামা (৯টি), টেনেসি (১১টি), কেন্টাকি (৮টি), ইন্ডিয়ানা (১১টি), ওহাইও (১৮টি), ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া (৫টি), নর্থ ক্যারোলাইনা (১৫টি), সাউথ ক্যারোলাইনা (৯টি), জর্জিয়া (১৬টি), ফ্লোরিডা (২৯টি); পেনসিলভানিয়া (২০টি), আলাস্কা (৩টি), উইসকনসিন (১০টি) ও নেবরাস্কা (৫টি) এবং আরিজোনায় (১১টি)।

হিলারি জিতেছেন ক্যালিফোর্নিয়া (৫৫টি),  ওরিগন (৭টি), ওয়াশিংটন (১২টি), নেভাডা (৬টি), কলোরাডো (৯টি), নিউ মেক্সিকো (৫টি), হাওয়াই (৪টি), ইলিনয় (২০টি), ভার্জিনিয়া (১৩টি),  মেরিল্যান্ড (১০টি), ওয়াশিংটন ডিসি (৩টা), ডেলাওয়ার (৩টি), নিউ জার্সি (১৪টি), কানেটিকাট (৭টি), নিউ ইয়র্ক (২৯টি); রোড আইল্যান্ড (৪টি), ম্যাসাচুসেটস (১১টি) ও ভারমন্টে (৩টি)।

মেইনের ৪টি ভোটের মধ‌্যে ৩টি হিলারি ও ১টি ট্রাম্পের। মিনেসোটায় ১০টি, মিশিগানে ১৬টি ও নিউ হ্যাম্পশায়ারে ৪টি ভোটের ফয়সালা এখনও হয়নি।

সিএনএন জানিয়েছে, সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী পপুলার ভোটে (মোট ভোট) সামান‌্য এগিয়ে আছেন হিলারি। তিনি পেয়েছেন মোট ভোটের ৪৭.৬ শতাংশ। আর ট্রাম্প ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েও ইলেকটোরাল ভোটের নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। তারা ভোট দিয়ে ‘ইলেকটর’দের নির্বাচিত করেন। তারপর ইলেকটোরাল বা নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটসংখ‌্যাই ঠিক করে দেয়- কে হবেন প্রেসিডেন্ট। ভোটের আগেই প্রার্থীরা প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ইলেকটোরাল মনোনয়ন দেন।

বেশিরভাগ রাজ্যে নিয়ম হল- ‘উইনার-টেইক-অল’। মানে কোনো রাজ‌্যে যদি দশটি ইলেকটোরাল ভোট থাকে, তার মধ‌্যে যে দল অন্তত ছয়টি, অর্থাৎ সংখ‌্য‌াগরিষ্ঠ ইলেকটোরাল ভোট পাবে, ওই রজ্যের সবগুলো, অর্থাৎ দশটি ইলেকটোরাল ভোটই সেই দলের হয়ে যাবে।

মাত্র দুটি রাজ্যে- নেব্রাস্কা ও মেইনে বিজয়ী প্রার্থী সব ইলেকটোরাল ভোট একা পায় না, সেটা পপুলার ভোট বিজয়ী ও কংগ্রেসনাল জেলায় বিজয়ী প্রার্থীর মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।

সাড়ে ১৪ কোটি নিবন্ধিত ভোটারের মধ‌্যে ৫৪ শতাংশের মত নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে ভোট দিয়েছেন বলে বুথফেরত জরিপের তথ‌্য।

প্রতিনিধ পরিষদ: কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ আসনের মধ‌্যে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি ২৩৮টি জিতে নিয়েছে। হিলারির ডেমোক্রেটিক পার্টি ১৯২টি আসনে জয় পেয়েছে।

সিনেট: কগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে এবার ভোট হয়েছে ৩৪টিতে। যে ফলাফল এসেছে তাতে সব মিলিয়ে এখন ৫১ আসনে রয়েছেন রিপাবলিকানরা। আর ডেমোক্রেটদের হাতে রয়েছে ৪৭টি আসন।

হিলারির পরাজয়ের ‘কারণ’

মঙ্গলবার দিনভর ভোটের পর রাতে প্রধান দুই প্রার্থীর সমর্থকরা জড়ো হন তাদের নির্বাচনী হেড কোয়ার্টারে। বুকে আশা আর উৎসবের পরিকল্পনা ছিল দুই পক্ষেরই। সংবাদমাধ‌্যমে প্রথম দেড়শ ইলেকটোরাল ভোটের ফল আসা পর্যন্ত ঠিক ছিল লড়াইয়ের মেজাজ। কিন্তু এরপর বাড়তে থাকে ব‌্যবধান, হিলারি সমর্থকদের মুষড়ে পড়তে দেখা যায়।

গত ১৫ মাস ধরে হিলারির পক্ষে প্রচারে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আসা অনেক ডেমোক্রেট কর্মীকে চোখ মুছতে দেখা যায় এ সময়। ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরে যান অনেকে।

ভোটের টালিতে ট্রাম্প যখন কাঙ্ক্ষিত ২৭০টির ঘর অতিক্রম করলেন, তার ঠিক আগে আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রচার শিবিরের আসেন হিলারির ক‌্যাম্পেইন ম‌্যানেজার জন পোডেস্টা। সমর্থকদের তিনি ধন‌্যবাদ দেন, বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে নিতে বলেন। পোডেস্টা জানান, হিলারি সমর্থকদের সামনে আসবেন স্থানীয় সময় বুধবার সকালে।

এর কিছুক্ষণের মধ‌্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সমর্থকদের সামনে বিজয় মঞ্চে উপস্থিত হয়ে হিলারির কাছ থেকে অভিনন্দন পাওয়ার কথা জানান।

ভোটারের প্রচারের দিনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারির নানা সমালোচনা করলেও জয়ের পর তারপ্রশংসা করেন ট্রাম্প।

তিনি বলেন, “হিলারি অনেক অনেক দিন ধরে পরিশ্রম করেছেন। দেশের জন্য তার অবদান আমাদের ঋণী করেছে।”

পরে স্থানীয় সময় বুধবার সকালে সমর্থকদের সামনে এসে হিলারি ক্লিনটন বলেন, হতাশ হলেও এই ফল মেনে নিতেই হবে। 

সকল আমেরিকানের জন‌্য ট্রাম্প একজন সফল প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ট্রাম্পের জয় এবং হিলারির পরাজয়ের পেছনে সম্ভাব‌্য পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে বিবিসির এক বিশ্লেষণে।

এগুলো হলো- ট্রাম্পের পক্ষে ‘শ্বেত জোয়ার’, বিতর্ক ও কেলেঙ্কারির পরেও তার অবিচল থাকা, রাজনীতিতে ‘বহিরাগত’ হয়েও কাউকে পাত্তা না দেওয়া, হিলারির ই-মেইল নিয়ে এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির তৎপরতা এবং নিজের ধারণার উপর ট্রাম্পের আস্থা।

ছবি: রয়টার্স

বিতর্কের সঙ্গে পথচলা

নিউ ইয়র্কের রিয়েল এস্টেট ব‌্যবসায়ী ফ্রেডরিক ট্রাম্পের চতুর্থ সন্তান ডোনাল্ডের জন্ম ১৯৪৬ সালে। সামরিক অ্যাকাডেমিতে স্কুল শেষ করে অর্থনীতি পড়েছেন ফোর্ডহ‌্যাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির হোয়ারটন স্কুল অব ফাইন্যান্সে। 

বাবার ব‌্যবসার দায়িত্ব নেওয়ার পর বহুগুণে তার সম্প্রসারণ ঘটান ট্রাম্প। বড় বড় আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলে নাম কেনেন। 

ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, এ ধনকুবেরের সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে ৩৭০ কোটি ডলারের উপরে। ট্রাম্প অবশ‌্য দাবি করেন, ওই অংক কোনোভাবেই হাজার কোটি ডলারের কম হতে পারে না।

২০১৫ সালে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখানোর পরপরই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন ধনকুবের ট্রাম্প। ওই সময়েই মেক্সিকানদের ‘ধর্ষক ও সন্ত্রাসী’ বলে আলোচনায় চলে আসেন এই রিপাবলিকান।

বিচারক, সাবেক মিস ইউনিভার্স, ফক্স নিউজের একজন উপস্থাপক, মুসলিম পরিবারের এক যুদ্ধাহতকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেও খবরের শিরোনাম হয়েছেন ট্রাম্প।

হিলারি শিবিরের বারবার প্রচারণা সত্ত্বেও এই রিপাবলিকান প্রার্থী ১৮ বছর ধরে দেয়া তার ট্যাক্স রিটার্নের কপি দেখাননি। এড়িয়ে গেছেন তার দাতব্য সংস্থা নিয়ে করা বিভিন্ন সমালোচনা। আর এসব কারণে হারিয়েছেন প্রভাবশালী অনেক রিপাবলিকান ও প্রতিষ্ঠানের সমর্থন।

নারীদের প্রতি ট্রাম্পের ধারণা ‘বাজে’- ধারাবাহিকভাবে এমন দাবি করে আসছিল হিলারি শিবির। নির্বাচনের মাস দেড়েক আগে ফাঁস হওয়া একটি টেপ সেই দাবিকে সুসংহত করে।

নির্বাচনের আগে হিলারির সঙ্গে মুখোমুখি বিতর্কের মধ‌্যেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন বেশ কয়েকজন নারী। সেসব অভিযোগ অস্বীকার করে ট্রাম্প বলেন, তাকে ফাঁসাতে হিলারি শিবির ও প্রভাবশালী কয়েকটি গণমাধ্যম ‘নাটক সাজিয়েছে’।

এতোসব বিতর্কের কারণে ট্রাম্পের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেন অনেক প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর। ট্রাম্প তাদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ‌্যায়িত করে বলেছিলেন, নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি দেখিয়ে দেবেন, ‘কী করে জিততে হয়’।