করোনাভাইরাস: ইরানে মৃত্যুর তথ্য ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার অভিযোগ

ইরানে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা দেশটির সরকারের প্রকাশ করা মৃত্যুর প্রায় তিন গুণ বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে বিবিসি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2020, 05:19 AM
Updated : 3 August 2020, 06:02 AM

ইমেইলে অজ্ঞাত এক সূত্রের পাঠানো নথিপত্রের বরাতে বিবিসি বলছে, সরকারি হিসাবেই ইরানে ২০ জুলাই পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে প্রায় ৪২ হাজার মানুষের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে।

অথচ ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওই সময় পর্যন্ত মাত্র ১৪ হাজার ৪০৫ জনের মৃত্যুর খবর স্বীকার করেছে।

ওই নথিতে ২০ জুলাই পর্যন্ত দেশটিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বলা হচ্ছে চার লাখ ৫১ হাজার ২৪ জন; যা একই সময় পর্যন্ত তেহরানের প্রকাশ করা দুই লাখ ৭৮ হাজার ৮২৭ রোগী শনাক্তের তথ্যের প্রায় দ্বিগুণ।

ওই তালিকা ও নথি অনুযায়ী, ইরানে কোভিড-১৯ এ প্রথম মৃত্যু রেকর্ড করা হয় ২২ জানুয়ারি। অথচ শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি তাদের ভূখণ্ডের ভেতর প্রথম রোগী শনাক্তের কথা প্রকাশ করেছিল তার প্রায় একমাস পর।

দেশটিতে প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সরকারি হিসাব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছিলেন অনেক পর্যবেক্ষক। তারা বলে আসছিলেন, ইরানের জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে যেসব তথ্য পাওয়া যায়, তার মধ্যে মিল না থাকার কারণেই তাদের সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

বিস্তৃত আকারে পরীক্ষা না করতে পারায় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত-মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হবে।

কিন্তু ইরান যে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ তাদের মৃত্যুর সংখ্যা ‘ধামাচাপা দিয়েছে’ তা হাতে আসা নথিগুলো থেকে স্পষ্ট হয়েছে বলে বিবিসির দাবি। 

নথিগুলোতে ইরানের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর নাম, বয়স, জেন্ডার, উপসর্গ, হাসপাতালে থাকার সময় ও রোগীর পরিস্থিতির তথ্য দেওয়া আছে। 

মহামারী নিয়ে ইরান যে ‘রাজনৈতিক খেলা’ খেলছে তা বন্ধে ‘সত্যের উপর আলোকপাত’ করতেই বিবিসিকে এ নথি পাঠানো হয়েছে বলে ইমেইলে বলা হয়েছে।

বিবিসি লিখেছে, যিনি ওই নথি পাঠিয়েছেন, তিনি ইরানের কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের কেউ কি না, কিংবা তিনি কীভাবে এসব নথি জোগাড় করেছেন, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে পারেনি। 

নথিগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইরানের রাজধানী তেহরানেই ২০ জুলাই পর্যন্ত কোভিড-১৯ বা এর উপসর্গ নিয়ে ৮ হাজার ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে ভাইরাসের প্রাথমিক কেন্দ্র কৌমে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৪১৯ জনের।

সরকারি হিসাবে রোগী ও মৃত্যুর যে অনুপাত দেখা যাচ্ছে, নথিগুলোতে থাকা অনুপাতও এর কাছাকাছি; কেবল সরকারের হিসাবের তুলনায় এর তথ্য-উপাত্তের পরিমাণ বেশি, বলছে বিবিসি।

নথিগুলোতে দেখা গেছে, প্রথম দিকে ইরানের সরকার কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর যে হিসাব দিয়েছিল, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। মার্চের মাঝামাঝি মৃত্যুর সংখ্যা ছিল সরকারি হিসাবের পাঁচ গুণ।   

মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ইরান দেশজুড়ে লকডাউন দিলে শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা কমতে শুরু করে। আর মে’র শেষ দিকে বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর ফের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। 

বিবিসির হাতে আসা নথি অনুযায়ী, ১৯ ফেব্রুয়ারি ইরান তাদের দেশে প্রথম রোগী শনাক্ত করার ঘোষণা দিলেও, ওই সময়ের মধ্যেই কোভিড-১৯ দেশটির অন্তত ৫২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।

নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর চাপের কারণে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে করোনাভাইরাসের তথ্য ‘চেপে গিয়েছিল’ বলে ধারণা ইরানের অনেক চিকিৎসকের।

“প্রথম দিকে তাদের কাছে ভাইরাস শনাক্তের উপকরণ ছিল না; আর যখন তা পাওয়া গেল, তখনও তা দিয়ে বিস্তৃত পরীক্ষা করা হয়নি। ইরানে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির বিষয়টি অস্বীকারের অবস্থান নিয়েছিল নিরাপত্তা সংস্থাগুলো,” বলেছেন এক চিকিৎসক।

আক্রান্ত-মৃত্যু নিয়ে তেহরানের তথ্যে পর্যবেক্ষকদের সন্দেহ থাকলেও ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে তারা শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর যে দৈনিক তথ্য দিচ্ছে তা পুরোপুরি ‘স্বচ্ছ’।