বোতলের পানির দিকে ঝুঁকছে টোকিওবাসী

জাপানে তেজস্ক্রিয়া আতঙ্কে বোতলজাত পানির দিকে ঝুঁকছে রাজধানী টোকিওর অধিবাসীরা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2011, 04:13 AM
Updated : 24 March 2011, 04:13 AM
টোকিও, মার্চ ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/রয়টার্স)- জাপানে তেজস্ক্রিয়া আতঙ্কে বোতলজাত পানির দিকে ঝুঁকছে রাজধানী টোকিওর অধিবাসীরা।
টোকিওর পানিতে তেজস্ক্রিয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ কলের পানি নবজাতকদের নিরাপদ নয় বলার পর বোতলের পানি কেনার হিড়িক পড়েছে।
বৃহস্পতিবার টোকিও'র বহু দোকানই পানির বোতলশূন্য হয়ে পড়তে দেখা গেছে।
বোতলজাত পানির ওপরই এখন নির্ভর করছে শহরবাসী ।
জাপান সরকার নাগরিকদের আতঙ্কিত না হওয়া এবং বোতলজাত পানি মজুদ না করার আহ্বান জানালেও দোকানের সব পানি দ্রুতই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
বুধবার টোকিও কর্তৃপক্ষ জানায়, একটি শোধনাগারের পানিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি তেজস্ক্রিয় আয়োডিন ধরা পড়েছে। শিশুদের বিশেষ করে ১ বছরের কম বয়সীদের জন্য তা মোটেই নিরাপদ নয়।
এ কারণে কর্তৃপক্ষ বুধবার টোকিওয় শিশুদের কলের পানি পান না করানোর পরামর্শ দেয়।
এর আগে টোকিওর ২৫০কি:মি: উত্তরে অবস্থিত ফুকুশিমা এলাকা থেকে আসা দুধ ও শাকসব্জিতে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে বেশী মাত্রার তেজস্ক্রিয়া ধরা পড়ে।
১১মার্চ ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে ফুকুশিমার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিপর্যস্ত হয় পরমাণু চুল্লীর শীতলীকরণ ব্যবস্থা।
ফলে অনিয়ন্ত্রিত জ্বালানির চাপে বিস্ফোরিত হয় কেন্দ্রটির কয়েকটি পরমাণু চুল্লি। এতে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের এলাকায়।
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে প্রকৌশলীরা ক্ষতিগ্রস্ত পরমাণু কেন্দ্রের চুল্লিগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ইতিমধ্যেই দুষণ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী তেজস্ক্রিয় দুষণ আতঙ্ক তৈরী হয়েছে।
সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়া জাপানের তেজস্ক্রিয় দুষণাক্রান্ত এলাকার কোন খাদ্য দ্রব্য আমদানী স্থগিত করেছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও হংকং এধরনের স্থগিতাদেশ দেয়।
তেজস্ক্রিয় পারমাণবিক কণা প্রশান্তমহাসাগর, আমেরিকা মহাদেশ পাড়ি দিয়ে সূদুর আটলান্টিকের দ্বীপ আইসল্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
১৩দিন আগে সংঘটিত ৯ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর ফলে সৃষ্ট সুনামিতে লণ্ডভণ্ড হয় জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ঝুঁকি ও ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়ে।
ভূমিকম্প ও সুনামিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি ডলার বলে প্রাথমিকভাবে হিসাব করেছে জাপান। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের হিসাবে এটাই সর্বোচ্চ বলে মনে করা হচ্ছে।
১৯৯৫ সালে জাপানেরই কোবে শহরে সংঘটিত ভূমিকম্পে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিলো ১০ হাজার কোটি ডলার।
২০০৪ সালে প্রলয়ঙ্করী সুনামিতে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্য ছিলো ১ হাজার কোটি ডলার।
২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট সুনামিতে অন্তত ১৪টি দেশের ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
জাপানে এবারের ভূমিকম্প ও সুনামিতে এ পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার মানুষ নিহত বা নিখোঁজ হয়েছে। ঘর হারিয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই বিপর্যয়কে জাপানের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় বলে ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এবি/এলকিউ/১৬১২ ঘ.