ইরাকে একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বড় ধরনের হুমকি হয়ে ওঠা ‘দ্য ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ত’ (আইএসআইএল) বা ‘আইএস’ জঙ্গিদের নিষ্ঠুরতার শিকার হওয়ার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছে এক ইয়াজিদি নারী।
Published : 08 Sep 2014, 08:19 PM
আইএস এর হাতে বন্দি ৪০ ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে বন্দি জীবন কাটছে ১৭ বছরের এই কিশোরীরও। আইএস জঙ্গিরা যাদেরকে ব্যবহার করছে যৌনদাসীর মত। তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না ছোট শিশু সঙ্গে থাকা নারীরা এমনকি ১২ বছর বয়সী মেয়েরাও। প্রতিদিনই তাদের ওপর চলছে বর্বর নির্যাতন।
সংখ্যালঘু ইয়াজিদি জাতিগোষ্ঠীর ওই কিশোরীকে ৩ অগাষ্ট ইরাকের পূর্বাঞ্চলীয় সিনজার শহর থেকে ধরে নিয়ে যায় আইএস জঙ্গিরা। সেখান থেকে তাকে মসুলের দক্ষিণের একটি গ্রামে নিয়ে যাওয়ার পর ভয়ঙ্কর যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
ইতালির পত্রিকা ‘লা রিপাবলিকা’য় এ চরম দুর্দশার কথা জানালেও নিজের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ওই কিশোরী বলেছে, দয়া করে আমার নাম প্রকাশ করবেন না। কারণ তারা আমার সঙ্গে যা করছে তা নিয়ে আমি অত্যন্ত লজ্জিত। মৃত্যুই এখন আমার একমাত্র চাওয়া। তারপরও আশা করছি হয়তো আমি মুক্তি পাব এবং আমার বাবা-মা কে আরেকবার জড়িয়ে ধরতে পারব।”
কিশোরীটির মোবাইলে ফোন করে তার সাক্ষাৎকার নেয় লা রিপাবলিকা। কুর্দিস্তানের একটি শরণার্থী শিবিরে ওই কিশোরীর বাবা-মা’র কাছ থেকে মোবাইল নম্বরটি সংগ্রহ করা হয়।
বন্দিদের কাছে মোবাইল থাকার ব্যাপারে ওই কিশোরী জানায়, জঙ্গিদের হাতে ধরা পড়ার পরপরই তাদের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়া হলেও পরে জঙ্গিরা ‘কৌশল পাল্টে’ মোবাইল ফোনগুলো ফেরত দেয়। উদ্দেশ্য, বন্দিরা যাতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ওপর বর্বরোচিত অত্যাচারের কথা জানাতে পারে।
যুক্তরাজ্যের যে সব জঙ্গিরা সিরিয়া ও ইরাকে যুদ্ধ করছে তারা টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে অত্যন্ত গর্বভরে ইয়াজিদি এসব নারী অপহরণ করে তাদেরকে ‘সেবা দাসী’ করার খবর দিয়েছে।
তাদের নিষ্ঠুরতার বর্ণনায় কিশোরীটি জানায়, জানালা বন্ধ একটি ভবনে তাদেরকে রাখা হয়েছে। সার্বক্ষণিক পাহারায় আছে অস্ত্রধারীরা।
“ আমাদেরকে আরো বেশি কষ্ট দেয়ার জন্য তারা আমাদের সঙ্গে কি করছে তার বিস্তারিত বর্ণনা আমাদের বাবা-মা’দেরকে দিতে বলে। আমাদের দুর্ভোগ দেখে তারা হাসে। কারণ তারা নিজেদের অপরাজেয় মনে করে। মনে করে তারা সুপারম্যান। কিন্তু তারা আসলে হৃদয়হীন।”
ভবনটির সবচেয়ে ওপরের তলার তিনটি কক্ষে বন্দি নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়। দিনে তিনবারে বেশি ধর্ষণের শিকার হতে হয় তাদেরকে। আচরণ করা হয় দাসের মত।বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে চলে মারধোর।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে কিশোরীর উক্তি, “সময় সময় মনে হয় তারা আমাকে প্রচণ্ড মারধোর করে মেরে ফেলুক। আমরা চিৎকার করে বলি আমাদেরকে মেরে ফেল, গুলি কর। কিন্তু জানি, আমরা তাদের কাছে দামী। তারা অনবরত আমাদেরকে বলে, আমরা অবিশ্বাসী, আমরা অমুসলিম। আর এ কারণে আমরা তাদের সম্পত্তি, ঠিক বাজার থেকে কিনে আনা ছাগলের মতো।”
“আমার একমাত্র আশা কুর্দি সেনারা এসে আমাদের উদ্ধার করবে। আমি জানি আমেরিকা আইএসআইএল’র বিরুদ্ধে গোলা বর্ষণ করেছে। আমি চাই তারা তাড়াতাড়ি করুক। সবাইকে হটিয়ে দিক। কারণ, আমি আর কতে দিন এ অত্যাচার সহ্য করতে পারব জানিনা। আমার দেহের মৃত্যু ঘটেছে। এখন তারা আমার মনকে মেরে ফেলছে।”
আরব ক্রিশ্চিয়ান নারীদেরও ধরে এনে যৌন নির্যাতন চালানোর কথা শুনেছেন ওই কিশোরী।তবে তাদের ওখানে বন্দিরা সবাই ইয়াজিদি এবং সবাইকে সিনজার থেকে ধরে আনা হয়েছে।
আইএসআইএল জঙ্গিদের হাতে অবরুদ্ধ হওয়ার পর সিনজার পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত শহরটি থেকে গত মাসে বহু ইয়াজিদি পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।