সিআইএ’র পাশাপাশি উড়োজাহাজটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং বিমানটির বিষয়ে তথ্য গোপন করছে বলে নিজের সন্দেহের কথা রোববার ব্লগে লিখেছেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
রহস্যের জাল ছড়িয়ে দুই মাস আগে নিখোঁজ বিমানটিকে এক সামরিক মহড়ার সময় গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছিল বলে এক সাংবাদিক দাবি তোলার পর নিজের সন্দেহের কথা জানালেন মাহাথির।
নিজের ব্লগে ‘বোয়িং প্রযুক্তি- যা উপরে ওঠে, তা অবশ্যই নিচে নামে’ শিরোনামে আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার হিসেবে পরিচিত মাহাথিরের লেখা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে।
মালয়শিয়া এয়ারলাইন্সের ‘এমএইচ৩৭০’ ফ্লাইটটি ২৩৯ আরোহী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং রওনা হওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে মাঝ আকাশ থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়।
বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে সাগরে পড়েছে বলে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত টানলেও তার কোনো প্রমাণ মেলেনি এখনো।
মাহাথির লিখেছেন, একটি উড়োজাহাজ গায়েব হয়ে যেতে পারে না। এমন দিনে তো নয়ই, যখন শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা, রেডিও, স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং সিস্টেম আছে। এবং ফিল্মবিহীন ক্যামেরাও আছে যেগুলো বিশাল স্টোরেজ নিয়ে অনির্দিষ্ট সময় ধরে কাজ করে।
“যা উপরে ওঠে তা অবশ্যই নিচে নামে। উড়োজাহাজ উপরে উঠে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে পারে। তারপরও এক সময় তাকে নিচে নামতে হবে- নিরাপদে নামুক বা বিধ্বস্ত হোক।”
তার মতে, সন্ত্রাসীরা যদি ফ্লাইট ডেকের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করত, তাহলে পাইলট বা বোর্ড সেন্সরের মাধ্যমে ‘নিরবচ্ছিন্ন’ অটোপাইলট চালু হওয়ার কথা। এমনকি সিআইয়ের মতো সরকারি সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা দূরনিয়ন্ত্রিত রেডিও বা স্যাটেলাইট দিয়েও অটোপাইলট চালু করা যায়।”
নিখোঁজ বিমান নিয়ে অনেকগুলো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অন্যতম ‘ছিনতাইয়ের’ তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারা মনে করছে, বিমানটি ভারত মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে এবং আরোহীরা কেউ বেঁচে নেই; যদিও বিধ্বস্ত বিমানের খণ্ডাংশও মেলেনি সাগরে দীর্ঘ অনুসন্ধানে।
মাহাথির লিখেছেন, স্পষ্টতই বোয়িং এবং নির্দিষ্ট কিছু সংস্থার ক্ষমতা ছিল এই ধরনের বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের ‘নিরবচ্ছিন্ন নিয়ন্ত্রণ’ নেয়ার।
বোয়িং কোম্পানির দিকে ইঙ্গিত করে মাহাথির বলেন, “ফ্লাইট কমিউনিকেশন সিস্টেমকে অবশ্যই অচল করে দেয়া হয়েছিল।
“বোয়িং অবশ্যই সব যোগাযোগ ও জিপিএস যন্ত্রাদি বসিয়েছিল। ওগুলো যদি ব্যর্থ হয় বা অচল করে দেয়া হয় তাহলে তা অবশ্যই বোয়িংয়ের জানার কথা।”
“কেউ কিছু গোপন করছে। মালয়েশিয়াকে এই অভিযোগ বহন করতে হবে- এটা অন্যায়। কিছু কারণে গণমাধ্যম বোয়িং ও সিআইএকে জড়িত করে কোনো সংবাদ ছাপাবে না।”
যুক্তরাজ্যভিত্তিক অ্যাংলো-আমেরিকান সাংবাদিক নাইজেল ক্যাথর্নের একটি বই প্রকাশ হয়েছে সোমবার; যাতে তিনি বলেছেন,যুক্তরাষ্ট্র-থাইল্যান্ড যৌথমহড়ার সময় মালয়েশিয়ার ওই বিমানটিতে গুলি লাগে।
বিমান ভূপাতিত করার এই তত্ত্বটি ক্যাথর্ন সাগরবক্ষে একটি তেলক্ষেত্রে কর্মরত নিউজিল্যান্ডের শ্রমিক মাইক ম্যাকের বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে রচনা করেছেন।
ওই তেল শ্রমিক দেখেন, গত ৮ মার্চ একটি বিমান নির্ধারিত সিগনাল লাইন থেকে সরে যাওয়ার পর সৈন্যরা এটিকে গুলিতে ভূপাতিত করে।
ওই সময় দক্ষিণ চীন সাগরে একক ও যৌথসহ কয়েকটি দেশের মহড়া চলছিল। থাইল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্রের মহড়া ছাড়াও চলছিল চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশের মহড়া।
ম্যাকে থাইল্যান্ড উপসাগরে যে বিমানকে ভূপাতিত হতে দেখেছেন বলে যে দাবি করেছেন, সেটা ‘ফ্লাইট এমএইচ৩৭০’ বলে ক্যাথর্ন মনে করেন।
নিখোঁজ বিমানের সন্ধানে মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলে ভারত মহাসগরের বিস্তৃত এলাকায়, বঙ্গোপসাগরেও অনুসন্ধান চালানো হয়। কিন্তু কোথাও কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি, যাতে একটি সিদ্ধান্ত টানা যায়।
এখন আর অনুসন্ধান চালানো নিরর্থক মনে করেন মাহাথির।
“বিমানের ধ্বংসাবশেষ বা তেলের ধারা খোঁজা বা ব্ল্যাকবক্স থেকে সঙ্কেত শোনার অপেক্ষা করা সময় ও অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।”