৩০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম পার্লামেন্টে কোনো দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে। ৫৪৫ সদস্যের লোকসভায় পুরোনো বা নতুন কোনো শরিক ছাড়াই অনায়েসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যাবে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ।
অথচ ২০০৪ সাল থেকে প্রায় এক দশকব্যাপী ভারতের শাসনক্ষমতায় থাকা সবচে পুরোনো দল কংগ্রেসের অবস্থা এদিক থেকে একেবারেই বেহাল।
এ যাবতকালের মধ্যে নির্বাচনী ফলে সবচে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়া কংগ্রেস মাত্র তিনটি আসনে জিতেছে। আর এগিয়ে রয়েছে আর মাত্র ৩৯ টি আসনে। এবারই লোকসভায় কংগেসের আসনসংখ্যা নেমে এসেছে দুই অঙ্কে। ২০০৯ সালে দলটি পেয়েছিল ২০৬ আসন।
কংগ্রেস লোকসভার মোট আসনের ১০ শতাংশেরও কম পেলে দলটির প্রেসিডেন্ট হয়ত আর বিরোধীদলীয় নেতা হিসাবে স্বীকৃতিই পাবেন না।
৭ টি রাজ্যের একটি আসনেও কংগ্রেস জয় পায়নি। আর কোনো রাজ্যে ১০ টির বেশি আসন জয়ের সম্ভাবনাও দলটির নেই।
শোচনীয় এ হার স্বীকার করে নিয়ে মোদিকে এরই মধ্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। “কংগ্রেস অত্যন্ত খারাপ ফলের চেয়েও খারাপ করেছে” বলে মন্তব্য করেছেন দলটির নেতা জয়রাম রমেশ।
কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও বলেছেন, “জনগণ আমাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে”। সোনিয়া ও তার ছেলে রাহুল দু’জনই হারের দায় কাঁধে নিয়ে বিজেপি’কে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ভোট গণনায় দেখা গেছে, শুক্রবার বিকাল ৪ টার মধ্যেই বিজেপি ২৬ টি আসন জিতেছে এবং আরো ২৫৫ টি আসনে এগিয়ে গেছে।
এভাবে দলটি লোকসভায় মোট ২৮১ টি আসন পেয়ে যাবে। যেখানে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে একটি দলের প্রয়োজন হয় ২৭২ আসন।
বিজেপি’র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি ২১ মে প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির কাছে এ পদে শপথ নেবেন।
“নির্বাচনের ফল দেখিয়ে দিয়েছে ভারতের জনগণ মোদিকে পছন্দ করে,” বলছেন, মোদির দলীয় সহকর্মী রবি শঙ্কর প্রসাদ। ওদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক দীপঙ্কর গুপ্তের মতে, “ এরকম উল্লেখযোগ্য একটি জনরায়ের পেছনে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে কংগ্রেস-বিরোধী মনোভাব”।
“মোদি দেশব্যাপী সাড়া জাগিয়েছেন”, “ভারতের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা হচ্ছে”-- দলের জয়ে এমনই সব আত্মহারা মন্তব্য বিজেপি’র জ্যোষ্ঠ নেতাদের।
উত্তর প্রদেশে ৭ টি বাদে অন্য আসনগুলোতে জয় পাচ্ছে বিজেপি। যে রাজ্য থেকে লোকসভার সর্বোচ্চ ৮০ সদস্য নির্বাচিত হয়।বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট বিহারেও ৪০ টি আসনের মধ্যে ৩১ টি পাওয়ার পথে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মোদি সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও আঞ্চলিক ৪ টির মধ্যে তিনটি দল তাদের নির্বাচনী আসনগুলোতে ভাল ফল করেছে।
তবে আঞ্চলিক পর্যায়ে চমক সৃষ্টি করেছে তামিল নাড়ুর জয়ললিতার দল এআইএডিএমকে। রাজ্যের ৩৯ টি আসনের ৩৬ টিতে জয় পাচ্ছে এ দলটি। লোকসভায় এই দলটি হতে যাচ্ছে তৃতীয় বৃহত্তম দল।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ভাল ফল করলেও বিজেপি রয়েছে শক্ত অবস্থানে। ৪৮ টি আসনের ১৯ টিতে জয়ী হচ্ছে দলটি। শিব সেনা-বিজেপি জোটও রাজ্যটিতে ৪০ টি আসন জিতছে।
গুজরাটের বডদোরা এবং উত্তর প্রদেশের বারানসিতে মোদিসহ বিজেপি প্রার্থীরা অনায়েসেই জয় পেয়েছেন। বিজেপি’র অন্য যে সব বিশিষ্ট নেতারা জয় পেয়েছেন তারা হচ্ছেন, এল কে আদভানি, রাজনাথ সিং, মুরলী মনহোর জোশী, নীতিন গাদকারি এবং সুষমা স্বরাজ। হেরে যাওয়া একমাত্র বিজেপি প্রার্থী হচ্ছেন অরুন জেটলি।
দেশজুড়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বিজেপি সমর্থকদের বিজয় উল্লাস। নয়াদিল্লিতে বিজেপি’র সদরদপ্তরগুলোতে আনন্দোল্লাসে মেতেছে হাজার হাজার সমর্থক।
শুধু দেশেই নয় মোদির ঐতিহাসিক জয়ে তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন বিদেশিরাও। পাকিস্তান, শ্রীলংকা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এরই মধ্যে মোদিকে স্বাগত জানিয়েছে।
অন্যদিকে, মোদি সুনামিতে ভেসে গিয়ে কাতরাচ্ছে কংগ্রেসের অনেক প্রবীণ নেতাসহ বামপন্থিরাও।
আম আদমি পার্টি (এএপি) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, যিনি বারানসিতে মোদিকে হারানোর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন, তিনিও মোদির কাছে হেরেছেন ২ লাখেরও বেশি ভোটে।