মালয়েশীয় বিমানটি ঘিরে রহস্যের জাল

মালয়েশিয়ার বিমানটির কী হয়েছে- দুই দিনেও তা জানা যায়নি। তবে নানা ধরনের তথ্যের সম্ভার এই বিমানটি নিয়ে রহস্যের জাল ছড়াচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2014, 10:07 AM
Updated : 10 March 2014, 12:59 PM

শনিবার প্রথম প্রহরে আকাশে থাকা অবস্থায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রায় ১২ ঘণ্টা পর এটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছিল ভিয়েতনামের কর্মকর্তারা, তবে তার সত্যতা মেলেনি।

মালয়েশিয়ার বিমানবাহিনী প্রধান রোববার জানিয়েছেন, ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং রওনা হওয়া বিমানটি মাঝপথে তার গন্তব্য পরিবর্তন করে ফিরতে চেয়েছিল বলে ইঙ্গিত পেয়েছেন তারা।

এ নিয়ে মালয়েশিয়ার গঠিত তদন্ত কমিটির এক সদস্য রয়টার্সকে বলেছেন, ৩৫ হাজার ফুট উঁচুতে বিমানটি কোনো কারণে ভেঙে পড়েছিল ধারণা নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন তারা।

ওই উড়োজাহাজটিতে ভুয়া পাসপোর্টধারী দুই ব্যক্তির যাত্রী হয়ে ওঠার তথ্য ইন্টারপোল জানানোর পর এখন নাশকতার আশঙ্কাও ডালপালা মেলছে।

তবে আসলে কী ঘটেছে ১৪টি দেশের যাত্রী নিয়ে মাঝ আকাশে হঠাৎ উধাও হওয়া বিমানটির, সে বিষয়ে নানা ইঙ্গিত মিললেও স্পষ্ট কোনো ধারণা কেউ দিতে পারছে না।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বলেছেন, বিমানটির খোঁজ পেতে সবকিছু করা হচ্ছে। তবে এখনি স্পষ্ট কিছু বলার সময় আসেনি।

কয়েকটি দেশের জাহাজ ও বিমান মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এই বিমানটির সন্ধানে আতিপাঁতি খুঁজলেও না পেয়েছে এর কোনো সন্ধান, না পেয়েছে ধ্বংসাবশেষের কোনো চিহ্ন।

তবে বিমানটি মাঝ আকাশে ভেঙে পড়ার দিকে তদন্ত এগোনোর পর বিমান ও জাহাজগুলো তাদের অনুসন্ধানের ক্ষেত্র আরো বিস্তৃত করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে।

মালয়েশিয়ার তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেন, “যেহেতু আমরা ৪৮ ঘণ্টায়ও কোনো ধ্বংসাবশেষ পাইনি, তাই ধরে নিচ্ছি যে ৩৫ হাজার ফুট উঁচুতে এটি কোনো কারণে ভেঙে গিয়েছিল।”

সন্দেহভাজন দুই যাত্রীর খবর ইন্টারপোল জানানোর পর বোমা মেরে বিমানটি উড়িয়ে দেয়ার সন্দেহও অনেকের মধ্যে এসেছে।

বোমা বিস্ফোরণের কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন কি না- জানতে চাইলে ওই তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “সেই ধরনের কোনো প্রমাণ আমরা এখনো পাইনি। হয়ত যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই এটি ভেঙে পড়েছে।”

মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের দেয়া যাত্রী তালিকায় অস্ট্রিয়ার নাগরিক ক্রিস্টিয়ান কোজেল এবং ইতালির লুইজি মারাদলদি নামের দুজনের তথ্য থাকলেও তারা আদৌ ওই বিমানে ছিলেন না বলে জানিয়েছে দেশ দুটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ওই দুইজন বহাল তবিয়তে যার যার দেশে অবস্থান করছেন এবং দুজনই বছরখানেক আগে থাইল্যান্ডে তাদের পাসপোর্ট খুইয়েছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।  

আর ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে দুই ব্যক্তির বিমানে চড়ার সুযোগ পাওয়াকে উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করছেন ইন্টারপোলের  মহাসচিব রোনাল্ড নোবেল।

বিবিসি জানিয়েছে, যে দুজন ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে উঠেছিলেন, তারা দুজন একসঙ্গেই টিকিট কেনেন এবং বেইজিং থেকে ইউরোপে যাওয়ার লক্ষ্য ছিল তাদের।

মালয়েশিয়ার পরিবহন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিশামুদ্দিনকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলেছে, ওই দুই জন ছাড়াও আরো দুই যাত্রীর তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

“আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে চারটি নামই দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছেও সাহায্য চাওয়া হয়েছে।”

বিমানবন্দরের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা ইউরোপীয় পাসপোর্টধারী দুই যাত্রীর ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখছেন তদন্তকারীরা।

বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজটি থো চু দ্বীপ ও ভিয়েতনাম ঘেঁসে দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর দিয়ে বেইজিং যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার উপকূলের মাঝামাঝিতে সাগরের ওপর থেকে এটি অদৃশ্য হয়ে যায়।

মালয়েশিয়ার বিমানবাহিনীর প্রধান রোদজালি দাউদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাদের মনে হচ্ছে বিমানটি মাঝপথে ফিরতে চেয়েছিল।

“আমরা মূলত রেকর্ড করা রাডার সংকেতের ভিত্তিতে এই ধারণা করছি। রাডার সংকেত দেখে মনে হচ্ছে, উড়োজাহাজটি তাদের নির্ধারিত পথ থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করে থাকতে পারে।”

বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে- এমন আশঙ্কায় ২২টি বিমান ও ৪০টি জাহাজ দক্ষিণ চীন সাগরে তল্লাশি চালাচ্ছে রোববার সকাল থেকে। কিন্তু বিমানের ধ্বংসাবশেষের কোনো চিহ্ন উদ্ধারকারীরা পাননি।

ভিয়েতনামের কাছে সাগরে শনিবার দীর্ঘ তেলের স্তর দেখা যাওয়ার খবরে তা নিখোঁজ বিমান থেকে পড়েছে বলে দাবি উঠেছিল, কিন্তু তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মালয়েশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রধান আজহারুদ্দিন আবদুল রহমান বলেন,“এখন পর্যন্ত আমরা এমন কিছু পাইনি, যাকে কোনো বিমানের ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন বলা যায়।”

“হতে পারে বিমানটি ছিনতাই-ই হয়েছে, আমরা কোনো কিছুই নাকচ করছি না,”  বলেন তিনি।

নিখোঁজ উড়োজাহাজটির ২৩৯ আরোহীর মধ্যে ১২ জন ক্রু, বাকিরা ১৪টি দেশের নাগরিক। এদের মধ্যে অন্তত ১৫২ জন চীনের, ৩৮ জন মালয়েশিয়ার, ৭ জন ইন্দোনেশিয়ার, ৬ জন অস্ট্রেলিয়ার, ৫ জন ভারতের, ৪ জন ফ্রান্সের এবং ৩ জন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

দীর্ঘ সময় পরও বিমানটির সন্ধান না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিখোঁজ আরোহীদের স্বজনরা। এ বিষয়ে মালায়েশিয়া এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকেও দুষছেন তারা।